ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৫ই মে ২০২৫, ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


পাহাড়ে নিয়ে ১৪ জন মিলে রাতভর ধর্ষণ করলো তরুণীকে


১৪ জুলাই ২০১৯ ০৬:৪৭

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় এক তরুণীকে পাহাড়ে নিয়ে ১৪ জন মিলে রাতভর ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পাঁচদিন পর বিষয়টি সবার নজরে আসে। শুক্রবার এ ঘটনায় একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা যায়, গত রোববার প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে মহেশখালী পৌর এলাকার গোরকঘাটায় যান ওই তরুণী। কিন্তু প্রেমিক তার সঙ্গে দেখা করতে না আসায় বেকায়দায় পড়েন তিনি। তখন সহায়তার আশ্বাস দিয়ে চালিয়াতলী বালুরডেইল পাহাড়ি ঝিরি এলাকায় নিয়ে রাতভর মেয়েটিকে ধর্ষণ করে অন্তত ১৪ জন!

জড়িতদের বাঁচাতে ঘটনার পরদিন থেকে মেয়েটিকে হেফাজতের কথা বলে মাতারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য শামীমা আক্তারের বাড়িতে আটকে রাখা হয়। ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে টাকার বিনিময়ে আপসের চেষ্টা করেন কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার লিয়াকত আলী ও মাতারবাড়ী সিএনজি অটোরিকশা স্টেশনের লাইনম্যান রশিদ। রশিদ নিজেও ধর্ষণের এ ঘটনায় জড়িত।

ঘটনার পাঁচদিন পর শুক্রবার ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর এ ঘটনা সবার নজরে আসে। এরপর শুরু হয় প্রশাসনের তৎপরতা। এরই মধ্যে শামীমার বাড়ি থেকে গণধর্ষণের শিকার তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইউপি সদস্য শামীমাকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর বাবার বাড়ি চকরিয়ার ডুলাহাজারায়। প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর তরুণীর মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে হয় মাতারবাড়ীতে। মায়ের দ্বিতীয় সংসারে আশ্রিত হিসেবেই থাকত মেয়েটি। কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামে থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন তিনি। সম্প্রতি স্থানীয় গোরকঘাটার এক তরুণের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে মেয়েটির। কথিত ওই প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে ৭ জুলাই সকালে মহেশখালীর চালিয়াতলী স্টেশনে আসেন তিনি। সেখান থেকে নলবিলা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে ওসমান গণির সিএনজি অটোরিকশা রিজার্ভ করে গোরকঘাটায় যান। বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষার পরও প্রেমিক তার সঙ্গে দেখা করতে আসেনি। এদিকে ওই তরুণী প্রেমিকের ভরসায় টাকা না নিয়েই ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। প্রেমিকের দেখা না পেয়ে তরুণী চালিয়াতলীতে ফিরে আসেন। কিন্তু ভাড়া দিতে না পারায় সিএনজি অটোরিকশাচালকের সঙ্গে তরুণীর বাকবিতণ্ডা হয়। নিজের মোবাইল ফোন চালককে দিয়ে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করেন তরুণী। এ পর্যায়ে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় আবুল হাছির ছেলে আমির সালাম, মোস্তাক আহমদের ছেলে এনিয়া এবং নলবিলা দরগাহপাড়ার মোক্তার আহমদের ছেলে আদালত খাঁ ওই তরুণীকে বালুরডেইল পাহাড়ি ঝিরির দিকে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে তারা ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। পরে ওই তিনজনের সঙ্গে যোগ দেয় সিএনজি অটোরিকশাচালক ওসমানসহ আরও অন্তত ১১ জন।

রাতভর তরুণীকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় জড়িতরা। যাওয়ার আগে মেয়েটির বোরকা, ঘড়ি ও হাতব্যাগও কেড়ে নেয় তারা।

পরদিন ৮ জুলাই স্থানীয় এক মৎস্য ব্যবসায়ী ওই তরুণীর অবস্থা দেখে তাকে সাহায্য করেন। কিছু টাকা দিয়ে মাতারবাড়ী পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন তিনি।

স্থানীয়রা জানান, মেয়েটি মাতারবাড়ী ফিরে আসার পর ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা শুরু করেন লাইনম্যান রশিদ। তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করেন মেম্বার লিয়াকত ও শামীমা। প্রভাবশালীদের চাপে মেয়েটির পরিবার আইনের আশ্রয় নেওয়ার সাহস পাচ্ছে না। ঘটনার পরদিন থেকে নিরাপত্তার কথা বলে শামীমার বাড়িতে মেয়েটিকে আটকে রাখা হয়। শুক্রবার স্থানীয় কারও মাধ্যমে নির্মম এ ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এরপরই বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের তৎপরতা শুরু হয়।

এদিকে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ইউপি মেম্বার লিয়াকত আলী নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ধর্ষণের ঘটনা সত্য। স্থানীয় কয়েকজন সিএনজি অটোরিকশাচালক এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেন লিয়াকত।

লাইনম্যান রশিদকে মূল হোতা হিসেবে অভিযুক্ত করে লিয়াকত বলেন, শামীমা ঘটনাটি আমাকে জানালে আমি তাকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছি।

ধর্ষণের ঘটনা সত্য বলে স্বীকার করেছেন লাইনম্যান রশিদও। তবে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে তিনি বলেন, ওই তরুণীর সম্মতিতে দুই ইউপি সদস্য ঘটনা সমঝোতার চেষ্টা করেছেন; কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।

মাতারবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। মাতারবাড়ী থেকে ভিকটিম ও ইউপি সদস্যকে থানায় নেওয়া হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জামিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার বিভিন্ন মাধ্যমে বর্বরোচিত এ ঘটনার কথা শুনেছি। এ ঘটনা সমঝোতার মাধ্যমে মীমাংসা হতে পারে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মাতারবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আনিসুল হক বলেন, ফেসবুকে ঘটনাটি দেখার পর শামীমার বাড়ি থেকে বিকেলে মেয়েটিকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শামীমাকেও হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

রাত ৮টার দিকে মহেশখালী থানার ওসি প্রভাস চন্দ্র ধর জানান, ওই তরুণী এবং শামীমাকে থানায় আনা হয়েছে। তার সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিস্তারিত জানার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে এরই মধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং পাহাড়ি রাস্তার কারণে মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় আনতে দেরি হয়েছে বলে জানান ওসি।