ঢাকা শনিবার, ২০শে এপ্রিল ২০২৪, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১


মৌ চাষে ভাগ্যবদল মোহনপুরের হারুনের


২০ জানুয়ারী ২০২০ ০৩:৩৯

সংগৃহিত

সংসারে অভাব অনটনের কারনে ইচ্ছে থাকা সত্বেও প্রাইমারি পর্যায়েই লেখাপড়া ইতি টানতে হয় হারুন-রশিদের। বাধ্য হয়ে সে থেকে অন্যের ট্রাকের হেলপারি কাজ করতে শুরু করে। এভাবে কেটে যায় কয়েক বছর। পরে কুষ্টিয়া জেলায় ট্রাকের ভাড়া নিয়ে গিয়ে এক মধু চাষির সাথে পরিচয় হয় হারুনের এবং তার পরামর্শে বাড়ীতে ফিরে মৌচাষ করা সিদ্ধান্ত ন্যায় হারুন। যদিও তার কারিগরি প্রশিক্ষণ ছিল না, তবে সামান্য পড়াশোনা দিয়ে বইপত্র ঘেঁটে মৌ চাষ ও খাঁটি মধু সংগ্রহের কলা-কৌশল জেনে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর জমানো দুই হাজার টাকা দিয়ে কাঠের তৈরি ৪টি মৌ-বাক্স তৈরী করে এবং পুরোদমে আত্মনিয়োগ করেন মৌচাষে। নিরলস পরিশ্রমের ফলে আজ তিনি স্বাবলম্বী। বর্তমানে বছরে মধু সংগ্রহ ও বিক্রি করে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করেন সে।

মৌচাষ ও মধু সংগ্রহ করে সংসারের অভাব দূরকারী এই যুবক হলো হারুন-রশিদ। রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট পৌরসভার শিহাল গ্রামের শহিদুলের ছেলে।

হারুন-রশিদ বলেন, ট্রাকের হেলপারি করে যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার ভাল ভাবে চলত না। বর্তমানে মৌমাছি পালনে আমার পরিবারে সচ্ছলতা ফিরেছে। যে এলাকায় মধু সংগ্রহের জন্য বাক্সগুলো রাখি সেখানে মৌমাছির বিচরণে পরাগায়নের ফলে ফসলের উৎপাদনও বেড়ে যায়। তার উৎপাদিত মধু প্রক্রিয়াজাত করে এলকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। তিনি আরো জানান, সরকারিভাবে মধু বিক্রির ব্যবস্থা করা হলে খামারিরা আরও বেশি লাভবান হবেন এবং স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হলে এবং সরকারিভাবে মৌমাছি রাখার বাক্স দেওয়া হলে আমরা আরও বেশি উপকৃত হবো।

সরেজমিনে কেশরহাট পৌরসভার হরিদাগাছি গ্রামের পূর্ব মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে মৌ-বাক্স। মৌমাছি সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে এসব বাক্সে জমা করছে। প্রতিটি বাক্সের উপরিভাগ কালো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো। কালো পলিথিনের মোড়ক খুলে মৌ-বাক্স থেকে কাঠের ফ্রেমে ধরে থাকা মৌচাক বের করা হচ্ছে। এরপর মধু আহরণ যন্ত্র দিয়ে চাক থেকে মধু বের করে নেওয়া হচ্ছে।

খামারের কর্মচারী জানান, ৭-৮ দিন পর পর মধু সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি মৌ-বাক্সে আছে একটি করে ‘এপিস মেলি ফেরা’ জাতের রানি মৌমাছি। রানির আকর্ষণে ২৫০ থেকে ৩০০টি পুরুষ মৌমাছি মুখে মধু নিয়ে বাক্সে প্রবেশ করে মধু জমা রেখে চলে যায়। রানিদের প্রত্যেকের শরীরের ঘ্রাণ আলাদা রকমের। এক বাক্সের মৌমাছিরা কখনো অন্য বাক্সে যায় না। ভুল করে গেলেও ওই বাক্সের মৌমাছিরা তাকে মেরে ফেলে। আর রানিদের ঘ্রাণ যাতে বাইরে না ছড়ায় সে কারণেই প্রতিটি বাক্স মোটা কালো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো হয়। রানি প্রতিদিন একটি করে পুরুষ মৌমাছির সঙ্গে দৈহিক মিলন ঘটায়।

মোহনপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রহিমা খাতুন জানান, হারুন-রশিদ মৌ চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তার সাফল্য দেখে আরও অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে আগ্রহী খামারীদের পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হয়।

নতুনসময়/আইএ