২০দলীয় জোটের মধ্যে চলছে লাভ-ক্ষতির হিসাব

এ মাসের ৬ তারিখে সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জোট ত্যাগের ঘোষণা দেয় বিএনপির দুই দশকের সঙ্গী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। এর পরের দিন অর্থাৎ ৭ মে জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিএনপিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ত্যাগের আল্টিমেটাম দেন।
অবশ্য বিজেপির পার্থও জোটত্যাগের কারণ হিসেবে বিএনপির ঐক্যফ্রন্টপ্রীতির পাশপাশি বিএনপির নির্বাচিতদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের সিদ্ধান্ত এককভাবে নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন।
ভোটের বাজারে বিজেপি বা লেবার পার্টির ঠাঁই না থাকলেও যুক্তিবাদী ও সুবক্তা হিসেবে বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ দেশব্যাপী বেশ সুপরিচিত।
বিজেপির বিএনপি জোট ত্যাগ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা গুঞ্জন ডানা মেলেছে। অনেকে বলছেন, যেহেতু বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ একদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাইয়ের মেয়ে জামাই। অন্যদিকে শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আপন ভাগ্নে, তার মেঝো ভাই ড. আশিকুর রহমান তিনি আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত হয়েছেন। তাই পার্থ আওয়ামী বিরোধী রাজনীতিতে থাকার কারণে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ঘোচাতে পার্থ জোটত্যাগ। এখন ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যাবেন- এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু পার্থ বিএনপিজোট ত্যাগ করলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনো জোট গড়েননি। এ পরিস্থিতিতে বলা হচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপির ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন পার্থের নেতৃত্বাধীন বিজেপি। এছাড়া বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে, দ্বিতীয় প্রধান তারেক রহমান দেশের বাইরে। এ পরিস্থিতিতে নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের শঙ্কা থেকেই পার্থের জোটত্যাগ। এখন আওয়ামী লীগে যোগ না দিলেও আওয়ামী বিরোধী শক্তির সাথে সম্পর্ক না থাকলে অহেতুক হয়রানিমূলক মামলা থেকে নিস্তার পাবেন পার্থ। তার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারেও সরকারি মহল থেকে কোনো বাধা আসবে না। আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গেও সম্পর্কের উন্নতি ঘটতে পারে।
আবার রাজনীতিতে নতুন কোনো মেরুকরণ হলে পার্থ নিতে পারেন কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও। এমনও হতে পারে, খালেদা জিয়া কারামুক্ত হলে তিনি আবারও জোটে ফিরে আসবে বলে মনে করেন।
লেবার পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঐক্যফ্রন্ট ত্যাগের জন্য বিএনপিকে যে সময় বেধেঁ দিয়েছেন তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।
আন্দালিভ রহমান পার্থের জোটত্যাগের ঘোষণা পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘদিন পর গত ১৩মে ২০দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের পর জোটের সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বিষয়টির ওপর দৃষ্টিপাত করে বলেন, এটা হয়তো তিনি (ইরান) মিডিয়া কাভারেজের জন্য বলেছে।
গত ১৭মে লেবার পার্টির ছাত্র সংগঠন ছাত্র মিশনের ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন নজরুল ইসলাম খান। যে জোটত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলো (পরবর্তীতে অস্বীকার করা) সেই জোটের সমন্বয়কারীকে প্রধান অতিথি করা! এ বিষয়ে ইরানের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জাগো নিউজকে জানান, লেবার পার্টির আল্টিমেটাম ২৩ তারিখ পর্যন্ত রয়েছে। ২৪ তারিখে দেখতে পাবেন।
সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাস এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন নির্বাসনের কারণে বিএনপি ও জোটের মধ্যে নেতৃত্বের অভাব দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে যে অস্থির পরিবেশ তৈরি হয়েছে সেটি কাজে লাগাতে লেবার পার্টির ইরান অংশের পক্ষ থেকে বিএনপিকে আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। যেহেতু রাজনৈতিক দল হিসেবে লেবার পার্টির নিবন্ধন নেই। সম্প্রতি কয়েকটি দল আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছেন। ইরানও তার দলের নিবন্ধনের জন্য উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। নিবন্ধন পেতে সরকারের সহায়তা আদায়ে ইরান বিএনপিবিরোধী মনোভাব প্রকাশ করেছেন। যাতে লেবার পার্টির নিবন্ধন পেতে সরকারের দিক থেকে কোনো বাধার সম্মুখীন হতে না হয়। পাশপাশি বিএনপিবিরোধিতার কারণে ক্ষমতাসীন বলয় থেকে নানাবিধ সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা যেমন থাকে, তেমনি হয়রানিমুক্তও থাকা যায়।
সার্বিক এ পরিস্থিতি নিয়ে জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি’র (জাগপা) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারগারে, তারেক রহমান দেশের বাইরে- এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দক্ষতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। তার স্থলে অন্য কাউকে বসানো দরকার।
বিজেপি আর লেবার পার্টি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘সময়টা অস্থিতিশীল। বিভিন্ন রকমের চিন্তা, দুঃশ্চিন্তা, উদ্বেগ আসবে। এসব বিবেচনা করে ওনারা ওনাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এখানে আমাদের কোনো মন্তব্য নাই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বিদেশ যাওয়ার আগে তিনি বিজেপির জোটত্যাগ এবং লেবার পার্টির আল্টিমেটামকে ‘তাদের হতাশা’ বলে মন্তব্য করেন।
ফখরুল বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে সরকার যে নিষ্ঠুর প্রহসন করেছেন জনগণের সঙ্গে, তাতে জনগণের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যেও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে।
নতুনসময়/আল-এম