ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ছেন ৩ শীর্ষ নেতা

ভাঙ্গনের সুর বাজতে শুরু করেছে ডঃ কামাল হোসেন ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যাপক ভরাডুবির পর কার্যত ঝিমিয়ে যায় ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলেও রাজপথের কোন কর্মসূচী দিতে না পারা এবং ডঃ কামাল হোসেন ও ফ্রন্টের অন্যতম শরিক বিএনপির শীর্ষ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতায় শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গেই যাচ্ছে ডঃ কামাল, মান্না, রব, কাদের সিদ্দিকী ও ফখরুলের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে‘অসঙ্গতি’দূর করার জন্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ফ্রন্ট ছাড়ার হুমকি দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
এছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম দুই শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ও আ স ম রবের জেএসডিও যে কোন সময় ঐক্যফ্রন্ট ছাড়বেন বলে নিশ্চিত করেন দল দুটির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা।
নাগরিক ঐক্য ও জেসডির নেতৃবৃন্দরা জানান, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ডঃ কামালের নেতৃত্বে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আন্দোলনে ব্যর্থ এই ফ্রন্টে থেকে আমরা দেশের মানুষের কাছে হাসির পাত্র হতে চাই না।
নেতারা জানান, ইতিমধ্যে এই দল দুটির কেন্দ্রীয় ফোরামে ঐক্যফ্রন্ট ছাড়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং খুব সহসাই ফ্রন্ট ছাড়ার সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে।
অন্যদিকে কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। এসব অসঙ্গতি ও কিছু প্রশ্নের উত্তর আগামী এক মাসের মধ্যে সুরাহা না হলে ৮ জুন ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে যাবে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের কিছু সিদ্ধান্তে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে নির্বাচনের নামে জঘন্য নাটক হয়েছে, যা শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর কোনো দেশেই এমন নাটকের নজির নেই। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার পরও গণফোরামের সুলতান মনসুর শপথ নিলে তাকে বহিষ্কার করা হয়। মোকাব্বির খান শপথ নিলে ড. কামাল হোসেন তাকে ‘গেট আউট’ বলেন। পরে দেখা যায় গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে মোকাব্বির খান উপস্থিত। এসব নিয়ে মানুষের মধ্য বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মানুষ এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা জবাব দিতে পারি না।
ঐক্যফ্রন্টের কার্যক্রমের আত্মসমালোচনা করে বঙ্গবীর বলেন, ঐক্যফ্রন্টের একাদশ নির্বাচনের পর অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন-পরবর্তী কিছু কিছু কাজ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তারা সঠিকভাবে চলতে পারেনি। নির্বাচনী সহিংসতায় আহত-নিহতদের পাশে দাঁড়াতে পারেনি। সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল শাহবাগে গণজমায়াত করতে ব্যর্থ হয়েছি আমরা। এসব বিষয় আমাদের জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। মানুষ এসবের উত্তর জানতে চায়।
প্রসঙ্গত ভোট ডাকাতির অভিযোগ একাদশ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করা বিএনপির নেতৃত্বাধীন দুই জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোট একাদশ সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে পারেনি জোটের শরিক বিএনপি ও গণফোরাম। দুটি দলের নির্বাচিত ৮ প্রতিনিধির মধ্যে সাতজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়েছেন। জোটের শরিকদের অভিযোগ তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই প্রধান শরিক বিএনপি সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে পুনর্নির্বাচন দাবি করার নৈতিকভিত্তি নষ্ট হয়ে গেছে জোটের। এই অভিযোগে সোমবার ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায় আন্দালিভ রহমান পার্থের বিজেপি। আরও কয়েকটি দলেরও জোট ছাড়ার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতালীগ ও বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেও বাজতে শুরু করেছে ভাঙ্গনের সুর।
নতুনসময়/এনএইচ