ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বিএনপি-ঐক্যফ্রন্ট ?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবিতে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে। নানা বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নিয়ে দলটি এ নির্বাচনে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত গণফোরামের দুইজনসহ মোট সাতটি আসনে জয়ী হয়েছে তারা।
তবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে ভোট ডাকাতির অভিযোগ এনে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাদিতে মানববন্ধন করেছে বিএনপি। অপরদিকে তিনটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১. ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে শিগগিরই জাতীয় সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ২. নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে দ্রুত মামলা করা হবে। ৩. নির্বাচনি সহিংসতায় যেসব এলাকার নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেসব এলাকা সফর করবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
এ ধরনের কর্মসূচী দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় করা অসম্ভব বলে মনে করছেন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ইতিমধ্যেই অনেকেই বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদেরও অনেকেই নীরব ভূমিকায় রয়েছেন।
এ অবস্থায় বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আগামীতে বিএনপি আসলে কতটুকু ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্টদের মাঝে। পরিস্থিতি যাইহোক, নতুন কৌশল নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে। এ নির্বাচনে প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পরাজয় হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপি নেতারা।
দলীয় সূত্র বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার দাবি না মানায় ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এরপর থেকেই মধ্যবর্তী নির্বাচনসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামকে কেন্দ্র করে মূলত আওয়ামী লীগ সরকারে রোষানলে পড়ে বিএনপি। দাবি-দাওয়া পূরণ না হওয়ায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল দলটি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
একপর্যায়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির মামলায় কারারুদ্ধ হন তিনি। পরবর্তী সময়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অন্য নেতাদের তৎপরতায় গত বছরের ১৩ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ হয়। সরকারের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের কয়েক দফা সংলাপের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন আশ্বাসে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন তারা। তবে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নেতাকর্মীদের মামলা, গ্রেপ্তার-নির্যাতনসহ চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় বিএনপি জোট। তবে ধানের শীষের পক্ষে নীরব ভোট বিপ্লবের আশায় শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তারা। তবে ভোটের দিনের চিত্র দেখে চরম হতাশ হন বিএনপি নেতারা। একপর্যায়ে ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানায় বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
এদিকে নির্বাচন পরবর্তী অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে সোমবার পর্যায়ক্রমে দলের স্থায়ী কমিটি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে বৈঠক একাধিক বৈঠক করেছে বিএনপি। এসব বৈঠক থেকে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন ও আইনি লড়াই চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এসব কর্মসূচির সফলতা নিয়ে সন্দিহান তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনের ফল বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেন, পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে একেবারে বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আমাদের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে নজিরবিহীনভাবে একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি করে ত্রাস-ভীতি সৃষ্টি করে এ নির্বাচনটি করা হয়েছে। এ নির্বাচনকে ভোট ডাকাতি বলা যেতে পারে, এ ভোট ডাকাতির ফলে আমরা এ নির্বাচনের ফলকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা মনে করি, এ কলঙ্কজনক নির্বাচন বাতিল করে পুনরায় অনুষ্ঠিত করতে হবে এবং এটা অনতিবিলম্বে করতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।
দাবি আদায়ে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনও চলবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, অবশ্যই আমাদের কর্মসূচি থাকবে। এ নির্বাচন পূর্ব পরিকল্পনায় হয়েছে। আর ইঞ্জিনিয়ারিংটা করা হয়েছে, ভোটের আগের রাতে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। এ কারণে জনগণ যে ১০ বছর ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারছিল না, সেটা থেকে তাদের বঞ্চিত করা হলো।
৩০ নভেম্বরের ভোট ও এর ফলের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেন দলটির ঢাকা মহানগরের একজন সক্রিয় কর্মী। তিনি বলেন, এ রকম নির্বাচন আমরা আশা করিনি। এ অবস্থায় বিএনপিকে আবার ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি করলে তা কতটুকু আদায় হবে অথবা পাঁচ বছর পরও এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা বিএনপিকে জয়ী হওয়ার কোনো সুযোগ দেবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এ অবস্থা মোকাবিলায় বিএনপিকে নতুন কৌশল নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচন পরবর্তী দলের অবস্থা সম্পর্কে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, এ নির্বাচনে নীতি-নৈতিকতা ও গণতন্ত্রের বিপর্যয় হয়েছে। এ নির্বাচনে আসলে বিএনপি হারেনি, হেরেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার লোভে আওয়ামী লীগ তাদের পুরানো চরিত্র যে পাল্টাতে পারেনি তা এ নির্বাচনে আবারও প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশে জিয়াউর রহমান বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এ দল যতদিন থাকবে ততদিন গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই অব্যাহত থাকবে।