ঢাকা বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১


বাস পোড়ানো সরকারি এজেন্টদের নাশকতা: মির্জা ফখরুল


১৩ নভেম্বর ২০২০ ২২:৪১

রাজধানীতে বাস পোড়ানোর ঘটনা সরকারি এজেন্টদের ‘নাশকতা’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফখরুল বলেন, ‘আমাদের যে অভিজ্ঞতা আপনারাও জানেন দেখা যায় যে, এই সরকারের কিছু কিছু অংশ যারা আপনার বিভিন্নভাবে কাজ করে, কেউ কেউ এগু্লোকে স্যাবোটাইজ করার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটায়। এটিও আমরা অতীতে দেখেছি- টু মেলাইন বিএনপি, এর আগেও এভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।’

তিনি যোগ করেন, ‘আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই- বিএনপি এই রাজনীতি (বাসে আগুন) করে না। আমরা মনে করি যে, আমাদের অভিজ্ঞতার থেকে বলছি আরকি- সরকারের কিছু এজেন্ট থাকে ‘এজেন্টস স্যাবোটিয়ার্স’- এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে একটা আন্দোলন যেটি শুরু হচ্ছে বা হতে যাচ্ছে বা সেটি একটি ভালো জিনিসের জন্য এগিয়ে যাচ্ছে ওটাকে স্যাবোটাজ করার জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটায়।'

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র ভাষায় নিন্দা করছি। এই দুস্কৃতকারী তারা যারাই হোক –এটিও মনে করিয়ে দিতে চাই- এটিও কনগনিজেন্সে নেয়া দরকার।

ঢাকা ও সিরাজগঞ্জের দুটি আসনে উপনির্বাচনের দিন বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টন, জাতীয় প্রেসক্লাব, গুলিস্তান, শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহনের বাস-মাইক্রোবাসে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় রমনা, শাহবাগ, পল্টন মডেল থানাসহ কয়েকটি থানায় ৯টি মামলা হয়েছে শুক্রবার।

বিএনপিকে অভিযুক্ত করে মামলার ঘটনা সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা, এটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। আমি তীব্র ভাষায় এর নিন্দা করছি। আমরা যারা রাজনীতি করি, তারা সবসময় শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাজ করি। এগুলো কখন হয়, যখন দেশে কোনো গণতান্ত্রিক স্পেস থাকে না।

‘আপনি একটা মিছিল করতে পারবেন না, কোথাও গিয়ে সভা করতে পারবেন না- এসব অনেক দিন ধরে হয়ে আসছে। ফলে অনেক সময় এ ধরনের যারা দুষ্কৃদকারী তারা এ সুযোগগুলো নিয়ে এসব ঘটায়।’

‘যৌথ নেতৃত্বে বিএনপি চলছে’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া দুই বছর ধরে জেলে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব দেশের বাইরে। এ রকম একটা কঠিন সময়ে কিন্তু আমাদের ঐক্য অটুট আছে। এ ধরনের দলে যেটা হয় কেউ কেউ পদত্যাগ করে যায়। আমাদের দলে কিন্তু সেটি হয়নি।

‘এখনও দলের মধ্যে কোনো ভাগ হয়নি। আমাদের দল চলে যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে। আমাদের স্থায়ী কমিটি বৈঠক প্রতি শনিবার হয় যেটা আগে কম হতো। এই মিটিং করে আমরা সিদ্ধান্ত নিই। আমরা মনে করি যে, এই কঠিন সময়ে বিএনপি যে ভূমিকা পালন করছে, আমি মনে করি যথেষ্ট সঠিক ভূমিকা পালন করছে’-যোগ করেন ফখরুল।

খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা মনে করি যে, উনি (খালেদা জিয়া) অ্যাকটিভ আছেন মানসিকভাবে এবং সি অলওয়েজ আওয়ার মাইন্ড। উনি রাজনীতির মধ্যে কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রভাব নিয়ে আছেন। নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়া থেকে কখনও চলে যাননি এবং যাবেনও না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, খালেদা জিয়া যে অস্তিত্ব দেশের মানুষের মধ্যে এটা অত্যন্ত গভীরে। দেশনেত্রীর জন্য এখনও গ্রামের অনেকে রোজা রাখে যে, তিনি সুস্থ হয়ে তিনি যেন বেরিয়ে আসেন। আমরা মনে করি যে, উনি রাজনীতিতে আছেন এবং থাকবেন অবশ্যই উনি অ্যাকটিভ হবেন।

তিনি বলেন, এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রেখেছে। এটা কোনো মতেই এটা গ্রহণযোগ্য না। তাকে জামিন পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে না, সুচিকিতসা পর্যন্ত তিনি নিতে পারছেন না।

সরকার খালেদা জিয়াকে ভয় পায় মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সারাক্ষন ধরে আমি যেটা মনে করি খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে সমস্যা হবে সেজন্য তাকে ভয় পায় বলে আটকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা। গুলশানে নিজের বাসায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল আছে। আমি বিশ্বাস করি তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তার চিকিৎসার সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাহেব যে বলেছেন, বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য অন্তরায়। আসলে প্রধান অন্তরায় তো তারা। ১৯৭৫ সালে বাকশাল তৈরি করে গণতন্ত্রকে কবর তো দিয়েছিলেন তারা। দেয়ার ইজ নো ডেমোক্রেসি। তার আগের থেকে ১৯৭২ সালে তারা যে, সংবিধান তৈরি করেছিলো সেই সংবিধান তারাই পরিবর্তন করেছেন, বিশেষ ক্ষমতা আইন, জরুরি অবস্থা, বাকশাল পরপর তিনটা করে মানু্ষের সব অধিকার তারা কেডে নিয়েছে-এটা রিয়েলিটি।”

‘উনারা ক্ষমতায় আসার পর কী করলেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে বিধান ছিল সেটিকে বাতিল করলেন, একেকটি আইন তৈরি করেছে সেগুলোর একটিও গণতন্ত্রের পক্ষের আইন না, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ অন্যান্য যেসব আইন আছে…। জনগণের যে কথা বলার অধিকার তাকে হরণ করেছে সরকার।’

‘নিতাই রায়ের অডিও ফাঁস: পেছনে সরকারের হাত’

দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর প্রকাশিত অডিও সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ভাই এসব অডিও-ভিডিও যেসব ফাঁস হয়- এটি বরঞ্চ তারা ভালো বলতে পারবেন, যারা এগুলো নিয়ে ডিল করেন। আমি এটা ‍শুনিওনি, জানিও না।

তবে যেটা যেখানে যেভাবে আসুক, এই পুরো ঘটনাটি আমি মনে করি যে, এগুলো আমরা সমর্থন করি না। এগুলোর পেছনে সরকারের হাত সবসময় থাকে। যারা এটাকে মেনিপুলেটেড করে।

সিইসির বক্তব্য হাস্যকর

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। গতকাল ঢাকা-১৮ নির্বাচনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তিনি বললেন যে, এই কমিশন এত ভালো যে, আমেরিকার তাদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। আমেরিকায় ৪-৫ দিন লাগে ফল গুণতে আর তারা ৪-৫ মিনিটে ফল দিয়ে দিতে পারেন। এর চেয়ে হাস্যকর কথা একজন সিইসির কাছ থেকে আসতে পারে এটা কল্পনাও করতে পারি না।

‘এর থেকে বুঝা যায়, আমাদের গণতন্ত্রের অবস্থা কোথায়, নির্বাচনের ব্যবস্থা কোথায়, রাষ্ট্র কীভাবে চলছে-একথাগুলোতে কিন্তু পরিস্কার বুঝা যায়। আমরা যে কথাটা বলতে চাই সেটা হচ্ছে- আসলে বাংলাদেশের জন্মের ব্যাপারে শুধু নয়, গোটা পৃথিবীতে গণতন্ত্র হচ্ছে একমাত্র ব্যবস্থা যাকে বলা হয় যে, সব খারাপের মধ্যে ভালো ব্যবস্থা। এটাই হচ্ছে ভালো ব্যব্স্থা জনগণের বিকাশের জন্য, রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য। দুভার্গ্যজনকভাবে সেটা বাংলাদেশে এখন একেবারেই অনুপস্থিত।’

তিনি বলেন, একটা পার্লামেন্ট আছে, যে পার্লামেন্টে জনগণের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় না। ২-৩ মিনিটে আইন পাস হয়ে যায় এবং যে আইনগুলোর মধ্য দিয়ে জনগণের উপকার দূরের কথা, কল্যাণ দূরের কথা আরও কষ্টের মধ্যে পরে।’

মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে এই নেতা বলেন, আজকে দেখুন যে হারে ট্যাক্স বেড়েছে, ভ্যাট বেড়েছে, ভ্যাটের পারসেনটেজ বেড়েছে- আপনার যে মোবাইল ফোন আগে আমি ৫০০ টাকা ভরতাম আমার অনেক দিন চলে যেত। এখন ১ হাজার টাকা ভরলেও আমার ফোন চলছে না। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম এমন ভাবে বেড়েছে- আপনি বাজারে যাবেন চাল, তেল, সবজির দাম বেড়েছে, অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বি হয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যভাবে হচ্ছে- এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের কোনো সদিচ্ছা আমরা দেখতে পাই না।

সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘মিট দ্য প্রেস’ হয়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিএনপি মহাসচিবকে রিপোর্টার্স ইউনিটির ক্রেস্ট উপহার দেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।