ঢাকা রবিবার, ২৮শে এপ্রিল ২০২৪, ১৬ই বৈশাখ ১৪৩১


আসুন জাগ্রত করি আমাদের বিবেক এবং মনুষ্যত্বকে!


১৮ এপ্রিল ২০২০ ০০:৩৬

যেখানে মেডিসিনের শহর সুইজারল্যান্ড অসহায়! প্রযুক্তির শহর জার্মানি নিরুপায়, মানবতার শহর ইতালি কাঁদছে! ক্ষমতার শহর আমেরিকা দিশেহারা!!! সেখানে আমরা করোনার সাথে শুধু উপহাস করে যাচ্ছি! করোনা ভাইরাসে দিশেহারা বিশ্ববাসী। বিশ্বের ১৮৫ দেশে এ ভাইরাস হানা দিয়েছে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা থেকে মুক্তির জন্য এদেশের সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। সাধারণ ছুটি ও জনসমাগম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ষোষণা করেছে সরকার।

করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ বা যারা দিন আনে দিন খায়। বিশেষ করে গাড়িচালক, চায়ের দোকানদার, ফুটপাতের হকার, কৃষক-শ্রমিক, কুলি, মজুর, পোশাক কারখানার কর্মী, মিল -কারখানার কর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও এমনকি কিছু কিছু মধ্যবিত্ত পরিবারও জীবনধারণে হিমশিম খাচ্ছে।

নিম্নআয়ের মানুষদের কথা বিবেচনা করে সরকার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও ওএমএসে ১০ টাকা কেজি দরে চাল, ত্রাণ, কাবিখাসহ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের অনুদান দেওয়া শুরু করেছে। সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ অনুদান দিলে কি হবে। এসব অনুদান যারা সঠিক মানুষের কাছে যাচ্ছে তো।কারণ সরকারের ত্রাণ চুরি করতে গিয়ে কিছু জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা ধরা পড়ছেন। কয়েকজন বহিস্কারও হয়েছেন।

এখন কথা হচ্ছে আপনি কেমন প্রকৃতির মানুষ? আপনার দেশে মহামারী করোনার ফলে দরিদ্র মানুষগুলো আয় রোজগার করতে পারছেন না। সরকারি ত্রাণ যা পাবেন তা যদি আপনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হয়ে গ্রাস করেন তাহলে আপনার বিবেক কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো একটু নিজেকে প্রশ্ন করুন। আমি মনে করি আপনি মানুষ না, মানুষরূপী হায়েনা। আপনার পাশের দরিদ্র প্রতিবেশী বা এমনকি আপনার দূর সম্পর্কের আত্নীয় ও হতে পারেন। তারা খাবারের অভাবে অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন আর আপনি তাদের অনাহারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অঢেল সম্পত্তির মালিক হওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আপনার হৃদয় কি এসব অসহায় নির্যাতিত, নিষ্পেষিত হতদরিদ্র মানুষদের সীমাহীন দুঃখকষ্টে একটুও কাঁদে না। কারও চালের অভাবে চুলায় আগুন জলছে না কিংবা না খেয়ে থাকে আর আপনি তাদের প্রাপ্য সরকারি চাল আত্মসাৎ করে তাদের বঞ্চিত করে রাতারাতি ধনাঢ্য ব্যক্তি হতে চান। আপনার লোভ সামলান।

ধিক্কার জানাই আপনাদের। মনে রাখবেন এই করোনার ভয়ে পৃথিবীর সমস্ত ব্যক্তি এমনকি রাজা-বাদশা, মহারাজা, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, ধনী-গরীব, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ ভীষন ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কেউ বিদায় নিতে চায় না। যার ফলে এই মহামারী করোনার ভয়ে বিশ্বের প্রায় রাষ্ট্র সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেছে, জনগণকে সচেতন করেছে ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ করেছে ।

যেখানে করোনার ভয়ে বিশ্বনেতারা আতঙ্কিত আর আপনি তো সামান্য। সুযোগ পেয়েছেন আর রাতারাতি ধনী হওয়ার জন্য অনাহারীর ধন সম্পদ গ্রাস করার জন্য আদা জল খেয়ে লেগেছেন।

আচ্ছা, বলুন অবৈধভাবে অর্জিত অর্থ-সম্পদ আপনি কি ভোগ করতে পারবেন। এর কি কোন গ্যারান্টি দিতে পারেন ।

অবশ্যই পারবেন না। কারণ যার জন্ম আছে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবেই। এ নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে সকলকে একদিন না একদিন ভিন্ন জগতে বিদায় নিতে হবেই।

তাহলে ক্ষুধার জ্বালায় হাজারো ক্রন্দনরত শিশু ও অনাহারী মানুষের চোখের জল কি আপনার হৃদয়কে একটুও ব্যথিত করতে পারে নি। মনে রাখবেন চলে গেলে পৃথিবী ছেড়ে শুধু সেই ব্যক্তিই যাবে। পড়ে থাকবে অবৈধ বা বৈধভাবে উপার্জিত সব সম্পদ। সেজন্য আমরা মানবিক বিষয় বিবেচনা করে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারি এই সর্বগ্রাসী ভয়াল করোনায় অনাহারে দিনকাটানো হতাশাগ্রস্ত ক্ষুধার্ত ব্যক্তিদের পাশে।

শুধু আপনি নন বরং এদেশে অসাধু উপায়ে বা বৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ- সম্পদের মালিকসহ প্রত্যেকটি মানুষের মানবিক বিবেক জাগ্রত হোক। আসুন সকলে মিলে মানবিক বিষয় বিবেচনা করে হতদরিদ্র অসহায় অসংখ্য ক্ষুধার্ত ব্যক্তিদের পাশে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে দাঁড়াই। আর আপনি জনপ্রতিনিধি হয়ে সুযোগ পেয়ে অসহায় মানুষদের জন্য দেওয়া সরকারি অনুদান ভোগ না করে তাদের সুশৃঙ্খলভাবে বণ্টন করে দিন।

আপনি জানেন কি কত মানুষ আজকে বাংলাদেশ না খেয়ে আছে? কত মানুষের হাঁড়িতে একমুঠো ভাত নেই? তার শিশুসন্তানকে হয়তোবা আজকে দু'দিন ধরে না খেয়ে আছে?আপনার ঘরের শিশু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে একবার বোঝার চেষ্টা করুন আপনার শিশুটা যদি একদিন এক বেলা অনাহারে থাকতো তাহলে! তাহলে কি করতেন আপনি?

একবারের জন্যও কি কোন শিশুর দিকে ভালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখেছেন ?আমার মনে হয় আপনি দেখেননি! আপনি যদি দেখতেন তাহলে এমন কাজটা করতে পারতেন না ওদের মুখের ভাত কেড়ে নিয়ে আপনি আপনার সন্তানকে দুধে ভাতে রাখছেন! বা রাখার চেষ্টা করছেন!

আপনি জানেন কি আপনি মৃত্যুর পরে আল্লাহ না করুক যদি করো না ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই আপনি মৃত্যু বরণ করে থাকেন! তাহলে আপনি মৃত্যুর পরে যাদের জন্য, দুর্নীতি করে লুটপাট করে অসহায় মানুষের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে বিত্ত-বৈভব তৈরি করছেন তারা কেউ আপনার জানাজাতে অংশগ্রহণ করবে না! আপনি ভাবুন বিষয়গুলো । আপনার বিবেক জাগ্রত হোক, আসুন জাগ্রত করি আমাদের বিবেক এবং মনুষ্যত্বকে ।