ঢাকা শনিবার, ১১ই অক্টোবর ২০২৫, ২৭শে আশ্বিন ১৪৩২


গণভোট আয়োজনে নানা চ্যালেঞ্জ


৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:০৯

সংগৃহীত

গণভোট! যার মাধ্যমে জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সংসদ বা সরকারের পরিবর্তে জনগণ নিজেরাই সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে এমন গণভোট হয়েছে ৩টি। যার প্রথমটি ছিলো জিয়াউর রহমানের আমলে শাসন ব্যবস্থার বৈধতা নিয়ে। পরেরটিও একই বিষয়ে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে। আর তৃতীয়টি হয় ১৯৯১ সালে, সাংবিধানিক বিল।

 

তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে গত ৮ মাস ধরে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের আলোচনায় সংবিধান এবং সংবিধানের বাইরে ৮৪টি বিষয়ে সংস্কারে একমত হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। যার বৈধতা দিতেই গণভোটের কথা বলছে রাজনৈতিক দলগুলো।

 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কীভাবে হবে এই গণভোট? বিএনপি বলছে, অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে গণভোট আয়োজনের কথা আর জামায়াত ও এনসিপি চায় সাংবিধানিক আদেশ জারির মাধ্যমে। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় সিদ্ধান্ত না হলে বিশেষজ্ঞের মতামত নেবে ঐকমত্য কমিশন। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাংবিধানিক আদেশ জারির আইনগত ভিত্তি নেই।

 

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, গণভোটের আয়োজন নির্বাচন কমিশনকে করতে হবে। সেই সংক্রান্ত একটা অধ্যাদেশ হয়তো জারি করতে হবে। সে ব্যাপারে এখনও সুস্পষ্ট ঐকমত্যে পৌঁছা যায়নি।

 

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কাজী জাহেদ ইকবাল বলেন, একটা রাষ্ট্রে তো দুইরকম সাংবিধানিক পদ্ধতি থাকতে পারবে না। এটা আমাদেরকে বুঝতে হবে। সংবিধান তো সর্বোচ্চ আইন। এটা কোনও পর্যায়ে সংসদের মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে যেতে পারে যে গণভোটের এই যে বিষয়গুলো পাশ হয়েছিল এটা সংবিধানের অংশ হবে। সেটা হতে পারে। কিন্তু সুপার কনস্টিটিউশন হওয়ার তো কোনও জিনিসেরই আসলে আইনগতভাবে সুযোগ নেই।

 

গণভোট হলে কী থাকবে ব্যালটে? কমিশন ভাবছে, ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব তিন প্যাকেজে ভাগ করে হতে পারে এই গণভোট। সাংবিধানিক ও এর বাইরের বিষয়গুলো থাকবে আলাদা করে দুইটি প্যাকেজে। ১১টি নোট অব ডিসেন্সের বিষয় নিয়ে থাকবে আলাদা প্যাকেজ।

 

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, যেগুলোতে সংবিধান সংশোধন লাগবে না, এটা হয়তো একটা প্যাকেজ হবে। আরেকটা যেখানে সংবিধান সংশোধন লাগবে, সেটা আরেকটা প্যাকেজ। আরেকটা প্যাকেজ হতে পারে, যেখানে নোট অব ডিসেন্ট আছে। তো এই প্যাকেজগুলোর ওপর নির্বাচন হবে। ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেয়ার সুযোগ থাকবে।

 

যদিও গণভোটে নোট অব ডিসেন্টের ১১টি বিষয় রাখা-না রাখা নিয়ে আছে ভিন্নমত। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গণভোটে নয়, নোট অব ডিসেন্টের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর।

 

ড. কাজী জাহেদ ইকবাল বলেন, এখানে তো মত-দ্বিমত থাকবে। কিন্তু তারা যখন গণভোটে যাবেন, তখন তো কংক্রিট বিষয়গুলো নিয়ে যেতে হবে। নোট অব ডিসেন্টের বিষয়টা পার্লামেন্টে তারা হয়তো পরে আলোচনা করে ঠিক করবেন যে এই জায়গাগুলো কীভাবে করবেন। কারণ, আল্টিমেটলি রেটিফিকেশনের জন্য সবই তা পার্লামেন্টে যেতে হবে। এই টাইমে যত কাজ আছে, সবকিছুরই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার একটা রেটিফিকেশন লাগবে।

 

১৫ অক্টোবর মেয়াদ শেষ হবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের। তার আগেই জুলাই জাতীয় সনদের পূর্ণতা দিতে চায় কমিশন।