ঢাকা সোমবার, ২৪শে নভেম্বর ২০২৫, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩২


পাকিস্তানে এফসি সদর দফতরে আত্মঘাতী হামলা, নিহত ৩


২৪ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৯

সংগৃহীত

পাকিস্তানে এফসি সদর দফতরে আত্মঘাতী হামলা, নিহত ৩

পাকিস্তানের পেশোয়ারের সদর এলাকায় ফেডারেল কনস্ট্যাবুলারির (এফসি) সদর দফতরে সন্ত্রাসী হামলায় তিন সদস্য নিহত হয়েছেন। সোমবার (২৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সকালে এ হামলা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম ডন নিউজ। 

 

হামলাটি সকাল ৮টার কিছুক্ষণ পর শহরের অন্যতম ব্যস্ত সড়কে ঘটে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়—একজন সন্ত্রাসী চাদর গায়ে জড়িয়ে এফসি সদর দফতরের গেটের দিকে এগিয়ে আসে। মুহূর্তের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণ হয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আরও দুই সন্ত্রাসী কমপাউন্ডে ঢোকার চেষ্টা করে।

 

হামলার সময় সদর দফতরের মূল চত্বরে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসের অ্যাসেম্বলি চলছিল।

 

পেশোয়ার ক্যাপিটাল সিটি পুলিশ অফিসার (সিসিপিও) ড. মিয়ান সাঈদ আহমদ সাংবাদিকদের জানান, 'প্রথমে তিনজন সন্ত্রাসী সদর দফতরে হামলার চেষ্টা করে। একজন গেটে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়, আর দুইজন ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলে এফসি সদস্যরা সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের গুলি করে হত্যা করে।'

 

তিনি আরও জানান, আত্মঘাতী হামলায় তিন এফসি সদস্য নিহত হয়েছেন এবং দুইজন আহত হয়েছেন। পরে পুরো এলাকায় ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালানো হয়।

 

হামলার আগে হুমকি–সংক্রান্ত কোনো সতর্কতা ছিল কি না—জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, 'খাইবার পাখতুনখোয়া ও পুরো দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আগেই উচ্চ সতর্কতায় ছিলাম। এ সতর্কতার কারণেই তারা সদর দফতরে প্রবেশ করতে পারেনি, গেইটেই নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।' 

 

ঘটনার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর জামাতুল আহরার শাখা।

 

পেশোয়ারের ব্যস্ত এলাকায় অবস্থিত সদর দফতরের কমপাউন্ডের ভেতরে ব্যারাক, হাসপাতাল ও আবাসিক কোয়ার্টার রয়েছে। 

 

সম্প্রতি, দেশটির সরকার এফসি বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে 'ফেডারেল কনস্ট্যাবুলারি' রাখে।

 

এদিকে, পেশোয়ারের লেডি রিডিং হাসপাতাল (এলআরএইচ) ও খাইবার টিচিং হাসপাতালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এলআরএইচ-এ ১১ জন এবং কেটিএইচ-এ ১ জন আহতকে আনা হয়েছে।

 

বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট) কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রধান করিডোরের বাস চলাচল সাময়িক স্থগিত করা হলেও অন্যান্য রুটে সেবা স্বাভাবিক আছে।

 

এর আগে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে পেশোয়ারের পুলিশ লাইন্স মসজিদে আত্মঘাতী হামলায় ৮৪ জন নিহত হন—সেটিই ছিল গত তিন বছরে শহরের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা স্থাপনায় হামলা।

 

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর 'সময়োপযোগী পদক্ষেপ বড় ধরনের ক্ষতি থেকে দেশকে বাঁচিয়েছে।' 

 

তিনি আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং সন্ত্রাস দমনে সরকারের অটল অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।

 

রাষ্ট্রপতি আসিফ আলী জারদারি নিহতদের পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে বলেন, 'বহিরাগত শক্তির মদদপুষ্টরা পাকিস্তানের ঐক্য ও সংহতিকে দুর্বল করতে পারবে না।'

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি জানান, নিহত সদস্যদের আত্মত্যাগ জাতি কখনও ভুলবে না। তিনি এফসি সদস্যদের 'সাহসী ভূমিকার' প্রশংসা করেন।

 

খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোয়েল আফরিদি বলেন, 'এ ধরনের কাপুরুষোচিত হামলা আমাদের মনোবল দুর্বল করতে পারবে না।' তিনি হামলায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করেন।

 

এদিকে, পিপিপি নেতা শেরি রহমানও গভীর শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সতর্কতার কারণেই আত্মঘাতী হামলাকারীরা ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি।

 

এর আগে, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে টিটিপি যুদ্ধবিরতি ভেঙে নিরাপত্তা বাহিনী, পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই খাইবার পাখতুনখোয়া ও বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বাড়ছে।

 

সেপ্টেম্বরে খাইবার পাখতুনখোয়ার বান্নু জেলায় এফসি সদর দফতরে হামলার চেষ্টা প্রতিহত করতে গিয়ে ছয় সেনা সদস্য নিহত হন এবং পাঁচ সন্ত্রাসী নিহত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনী জানায়, হামলার সঙ্গে ভারতীয় মদদপুষ্ট ‘ফিতনা-খারিজ’ গোষ্ঠীর সম্পর্ক রয়েছে।