আমরা ৯০ হাজার জীবন হারিয়েছি ক্ষতি ১৫০ বিলিয়ন ডলার: শাহবাজ

আবারও ভারতকে একটি পূর্ণাঙ্গ ও গঠনমূলক সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তিনি বলেছেন, পাকিস্তান হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। এতে আমরা ৯০ হাজার প্রাণ হারিয়েছি এবং ১৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
শুক্রবার ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ‘ইয়াওমে-তাশাক্কুর’ (শোকরিয়ার দিবস) উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।
পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ও পাকিস্তান অতীতে তিনটি যুদ্ধ করেছে। কিন্তু ফলাফল হিসেবে মানুষ কিছুই পায়নি। পেয়েছে শুধু দুর্ভোগ। এখন সময় এসেছে আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধানের।
তিনি আরও বলেন, যদি কাশ্মীর ও পানিবণ্টন ইস্যুর মতো বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়, তাহলে আমরা বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারি। পাকিস্তান হচ্ছে সন্ত্রাসবাদের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। এখানে ৯০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ১৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ স্মরণ করিয়ে দেন যে, ৬ই মে রাতে পাকিস্তানের তিনটি বিমানঘাঁটিতে হামলা চালায় ভারত। এরপর রাতেই সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি পাল্টা জবাবের অনুমতি দেন। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরের নেতৃত্বে পাকিস্তান বিমানবাহিনী ভারতের পাঠানকোট, উধমপুরসহ একাধিক বিমানঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরদিন সকালে জেনারেল মুনির আমাকে জানান যে- ভারত যুদ্ধবিরতির অনুরোধ জানাচ্ছে। আমরা তাদের জবাব দিয়েছি এবং সেই জবাবে তারা স্তব্ধ হয়ে গেছে।
প্রমাণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী জানান, পাকিস্তান ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এর মধ্যে তিনটি অত্যাধুনিক রাফাল জেটবিমান।
তিনি বলেন, আমাদের প্রযুক্তি ও সাহসিকতা গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। আমাদের আত্মনির্ভরশীল প্রযুক্তি ও চীনা সহায়তায় আমরা শত্রুর মনোবল ভেঙে দিয়েছি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনী শত্রুকে এমন জবাব দিয়েছে যা ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে স্থান পাবে। আমাদের বাহিনী শুধু সীমানায় নয়, বরং সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়েও দীর্ঘদিন ধরে সম্মুখসারিতে রয়েছে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পারমাণবিক শক্তিধর দেশ। যদি এই অঞ্চলে পারমাণবিক সংঘাত শুরু হয়, তবে উপমহাদেশের ১৬০ কোটিরও বেশি মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। তখন আর কেউ বেঁচে থাকবে না ইতিহাস লেখার জন্য।
‘শোকরিয়ার দিবস’ পালনের অংশ হিসেবে রাজধানী ইসলামাবাদে ফজরের নামাজের পর ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদদের পরিবার ও আহত সৈনিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, র্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আসিম মুনিরকে নিয়ে রাওয়ালপিন্ডির সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যান এবং আহত সেনা ও সাধারণ নাগরিকদের খোঁজ নেন। তিনি শহীদ স্কোয়াড্রন লিডার উসমান ইউসুফের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বলেন, এই দেশ শহীদদের রক্তের ঋণ কখনো ভুলবে না।
শেহবাজ শরীফ তার বক্তব্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর পেশাদারিত্ব, সাহসিকতা এবং দায়িত্ববোধের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় পাকিস্তান মনুমেন্টে। তাতে উপস্থিত ছিলেন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল শাহির মির্জা, সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শারল জহির আহমেদ বাবর, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নাভিদ আশরাফ, মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা, কূটনীতিক, শহীদ পরিবারের সদস্যরা, স্পোর্টস তারাকারা, বিনোদন তারকারা প্রমুখ।