জিতলে সাদা বাড়ি, হারলে অন্ধকার কারাগার!
রাত পেরোলেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাই শেষ সময়ে দোদুল্যমান রাজ্যগুলো চষে বেড়াচ্ছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। নির্বাচন নিয়ে করা জরিপগুলো দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে। তবে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে পাগলাটে স্বভাবের ডোনাল্ড ট্রাম্প কি আবার হোয়াইট হাউসের দখল নেবেন। যদি তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যান, তবে তার জীবনে নেমে আসতে পারে অন্ধকার। যেতে হতে পারে কারাগারে।
এবার হোয়াইট হাউস দখলে নিতে মরিয়া ট্রাম্পের কাছে ক্ষমতার চেয়ে গুরুত্ব ‘অন্য’ জায়গায়। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় উসকানি থেকে পর্ন তারকাকে ঘুষ, আয়কর জালিয়াতি, বিচারব্যবস্থার ওপর অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা থেকে বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানদের দেওয়া উপহার সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া— আমেরিকার ফেডারেল আদালতে মোট ৩৪টি মামলায় অভিযুক্ত ট্রাম্প।
গত ৩১ মে ফেডারেল আদালতের ১২ সদস্যের জুরি জানিয়েছিল, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা সব ক’টি অভিযোগই প্রমাণিত! দোষী সাব্যস্ত করা হলেও এখনও পর্যন্ত আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টকে সাজা শোনানো হয়নি।
রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবীরা বার বার আদালতের কাছে সাজা ঘোষণার দিনক্ষণ পেছানোর আবেদন করেন। যার কারণে বার কয়েক সেই তারিখ বদলানোও হয়। শেষ দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত ট্রাম্পের সাজা ঘোষণা হতে পারে ২৬ নভেম্বর। অর্থাৎ নির্বাচনের ২০ দিন পর। সাজা ঘোষণার আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়তে হচ্ছে ট্রাম্পকে। সেই নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বলছে, পাগলাটে ট্রাম্প জিতলে ইতিহাসে প্রথম ‘অপরাধী’ প্রেসিডেন্ট পাবে আমেরিকা। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে তার বিরুদ্ধে ওঠা ফৌজদারি মামলা স্থগিত হয়ে যেতে পারে। তবে হারলে আবার আইনি লড়াইয়ের সম্মুখীন হতে হবে ট্রাম্পকে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সাবেক প্রেসিডেন্টের আইনজীবীরা তাদের মক্কেলকে সাজার হাত থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন পন্থা নিতে পারেন। আবার শুনানির আর্জিও করা হতে পারে। আমেরিকার আইন অনুযায়ী, ট্রাম্পের জেল বা জরিমানা অথবা এক সঙ্গে দু’টি সাজাই হওয়ার কথা। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে ৫ নভেম্বরের ফলাফলের ওপর। ট্রাম্পের প্রচার অভিযানের মুখপাত্র স্টিফেন চেউং জানিয়েছেন, ব্যালট বাক্সে জয়ী হবেন ট্রাম্পই!
অভিযোগ রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের পরে ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তার মুখ বন্ধ রাখতে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। ওই টাকা দেওয়ার বিষয়টি গোপন রাখতে ট্রাম্প তার ব্যবসায়িক সংস্থার নথিপত্রে জালিয়াতি করেছিলেন। সেই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল তাকে। নভেম্বরের শেষ দিকেই হয়তো সাজা ঘোযণা হতে পারে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের নির্বাচনে ফলাফল নষ্ট করার অভিযোগ রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতেই এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত করা হয়। ফের প্রেসিডেন্ট হলে, প্রথমেই অ্যাটর্নি জেনারেল স্মিথকে বরখাস্ত করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে মামলার ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়বে।
২০২০ সালের নির্বাচনে টান টান লড়াইয়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের জর্জিয়া অন্যতম ভূমিকা নিয়েছিল। তবে সেখানকার নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনের ফলাফলে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ রয়েছে। যদিও সেই মামলা আপাতত স্থগিত।
ফৌজদারি মামলা ছাড়াও একাধিক দেওয়ানি মামলাতেও নাম জড়িয়েছে ট্রাম্পের। নিউ ইয়র্কের আদালতে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে অধিকৃত সম্পত্তির মামলা চলছে। প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন বেআইনিভাবে ৩০ কোটি ডলারের সম্পত্তি করেছিলেন ট্রাম্প, এই অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। দোষী সাব্যস্ত হলে জেল হবে না, তবে দিতে হবে জরিমানা।
এতো সব অভিযোগ নিয়ে ভোটের মাঠে কঠিন পরীক্ষায় আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন বড় প্রশ্ন হলো, কমলা হ্যারিস কি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন, নাকি দ্বিতীয়বারের মতো সাদা বাড়ি দখলে নিতে যাচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্প?