করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ ‘বিশৃঙ্খলাপূর্ণ’: ওবামা

করোনা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপের সমালোচনা করে একে ‘চরম বিশৃঙ্খলাপূর্ণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এর এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, সম্প্রতি ওবামা প্রশাসনে দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিকনফারেন্সে এ মন্তব্য করেন তিনি। তবে ফাঁস হওয়া এ ফোনালাপের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি ওবামার অফিস।
আগামী নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে জো বাইডেনকে সমর্থন জানিয়ে সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে শনিবার (৯ মে) বৈঠক করেন ওবামা। বাইডেনের জন্য কাজ করতে তাদেরকে উৎসাহিত করেন তিনি। সে সময় করোনা মহামারি ঠেকাতে ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমালোচনা করেন ওবামা।
এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে বেশ কয়েকবারই বিভিন্ন সমস্যার দায় ওবামা প্রশাসনের ঘাড়ে চাপিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতদিন এ নিয়ে তেমন কোনও মন্তব্য করেননি ২০০৯ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী বারাক ওবামা। অবশেষে টেলিকনফারেন্সে তিনি বলেন, “আমাদের সরকারের মধ্যে যখন “আমি কী পাচ্ছি” এবং “অন্যরা জাহান্নামে যাক” ধাঁচের মানসিকতা বিরাজ করছে, তখন তা এক চরম বিশৃঙ্খলাপূর্ণ বিপর্যয়ই ডেকে আনছে কেবল।”
ওবামা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের তিন হাজার সদস্যের সঙ্গে টেলিকনফারেন্সে আলাপকালে তাদের আগামী নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেনের পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানান তিনি।
ওবামা বলেন, ‘এ নির্বাচন এতটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ, আমরা কোনও বিশেষ ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যাচ্ছি না। আমরা স্বার্থপরতা, জাতিগত বিভক্তি ও একে অপরকে শত্রু ভাবার দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়তে যাচ্ছি — আমেরিকানদের জীবনে এগুলো শক্ত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই একটি কারণেই বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা এতটা ফ্যাঁকাসে ও দাগযুক্ত হয়ে উঠেছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছে ৮০ হাজার ৩৭ জন। আক্রান্ত হয়েছে ১৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩০৯ জন। মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অঙ্গরাজ্যে লকডাউন জারি করা হলেও এখন তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। কাজে ফিরতে শুরু করেছে মানুষ। তবে এতে ভাইরাস আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
এ বছরের শুরু থেকেই ট্রাম্প দাবি করে আসছিলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি যুক্তরাষ্ট্রের আছে। করোনা তার দেশের জন্য হুমকি তৈরি করতে পারবে না। বেশ কিছুদিন ধরেই করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য ভয়াবহতা নিয়ে সতর্ক করে আসছিলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। একটি প্রতিনিধি দল চীনের উহান ও বেইজিং থেকে ঘুরে আসার পর গত ৩০ জানুয়ারি সংস্থার পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে ‘জরুরি স্বাস্থ্য পরিস্থিতি’ ঘোষণা করা হয়। অথচ সেদিনও মিশিগানে এক সমাবেশে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন তার দেশে করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
তবে এখন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা পরিস্থিতি বাজে আকার ধারণ করার পর নিজের পূর্ববর্তী বক্তব্যগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালিযে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রে করোনাজনিত বর্তমান পরিস্থিতির জন্য উল্টো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেই দোষারোপ করেন ট্রাম্প। বলেন, ‘তারা আরও কয়েক মাস আগেই সতর্ক করতে পারতো।’ সংস্থাটির জন্য বরাদ্দকৃত সহায়তা বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেন তিনি।