ঢাকা বুধবার, ১৫ই মে ২০২৪, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


দিল্লিতে পিস্তল হাতে সেই যুবক গ্রেফতার


৩ মার্চ ২০২০ ২১:১৭

দিল্লির রাস্তায় তখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বিরোধীদের ইটবৃষ্টি চলছে। তাদের থামাতে রাস্তায় নেমে আসেন এক পুলিশকর্মী। তখন ৫-৬ জনের একটি দল তার দিকে তেড়ে যায়। তাদের মধ্যে পিস্তল হাতে এগিয়ে আসেন এক যুবক।

প্রথমে শূন্যে গুলি ছোড়েন তিনি। এরপর ওই পুলিশকর্মীর দিকে পিস্তল তাক করেন। ওই পুলিশকর্মী হাত তুলে নিজেকে নিরস্ত্র বলে দাবি করেন। এ সময় তাকে ধাক্কা মেরে রাস্তার পাশে সরিয়ে দেন যুবক। পরে আট রাউন্ড গুলি ছোড়েন তিনি।

মোহাম্মদ শাহরুখ নামের ওই মুসলিম যুবককে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা আনন্দবাজার এ খবর নিশ্চিত করেছে।

ঘটনার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন শাহরুখ। মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশের বরেলি থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, মোহাম্মদ শাহরুখ সিলমপুরের বাসিন্দা শাহরুখ। ওইদিনের ঘটনার আগে তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ ছিল না। তবে তার বাবার বিরুদ্ধে মাদক পাচারের অভিযোগে উঠেছিল। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দিল্লির উত্তর-পূর্ব অংশ। পরস্পরকে লক্ষ্য করে ইঁট ও গুলিবৃষ্টি চলতে থাকে। সেইসময়ই জাফরাবাদ-মৌজপুর এলাকায় পিস্তল হাতে এক পুলিশকর্মীর দিকে তেড়ে যান মেরুন রঙের টি-শার্ট পরা ওই যুবক। পুলিশের সামনেই আট রাউন্ড গুলি ছোড়েন তিনি। পরে ঘটনাস্থল থেকে সটকে পড়েন।

ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার পরই ভাইরাল হয়ে যায়। তার খোঁজে চারদিকে তল্লাশি শুরু হয়। তবে তার পরিচয় নিয়েও ধন্দে পড়ে পুলিশ। প্রথমে জানা যায় তার নাম মোহাম্মদ শাহরুখ। পরে জানা যায়, তার আসল নাম অনুরাগ মিশ্র।

পরে পুলিশ জানতে পারে অনুরাগ মিশ্র পরিচয়টি সত্য নয়। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই শাহরুখের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। গত সপ্তাহেই সপ্তাহেই সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। কিন্তু পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

দিল্লিতে বিক্ষোভ-সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৪৭ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছে অন্তত চার শতাধিক মানুষ। পুলিশের সামনেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-মসজিদসহ মুসলিমদের অসংখ্য বাড়িঘর ও দোকানপাট বেছে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। সব মিলিয়ে যেন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে দিল্লি।

বৈচিত্র্যপূর্ণ ধর্ম-বিশ্বাস-সংস্কৃতির মানুষের একসঙ্গে বসবাসের গর্বিত ইতিহাস বয়ে চলা ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন নেমে আসে। কেবল মুসলিমরাই নয়, খোদ সনাতন ধর্মের নিম্নবর্ণের দলিতরাও শিকার হন গণপিটুনি নামে সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ডের।

দিল্লির ঘটনায় দেশটির সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের সমালোচনা করেন দেশটির সুশীল সমাজও।

ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেন, ‘দেশের রাজধানী ও কেন্দ্রশাসিত দিল্লিতে যা হয়েছে তা নিয়ে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। যদি সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হয় এবং পুলিশ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, সেটা গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।’

নতুনসময়/আনু