ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১লা মে ২০২৫, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩২

রাতের অন্ধকারে ওরা ভয়ঙ্কর, সাবধান!


৫ জুন ২০১৯ ০১:৩৮

ঈদে অনেকেই রাতের বেলা গাড়িতে চড়ে পরিবার নিয়ে বাড়ি যান। বাড়ি যাওয়ার পথে রাতের অন্ধকারে চলন্ত গাড়িতে হঠাৎ বিকট শব্দ। চালক ও যাত্রীরা কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়ির চারদিক ঘিরে অবস্থান নেয় ভয়ঙ্কর ডাকাতদল। অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে লুটে নেয় সর্বস্ব। কখনো কখনো ডাকাতদের অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয় অনেক যাত্রী।

জানা যায়, ডাকাতদল মহাসড়কে ডাকাতির জন্য বেঁছে নেন তাদের সুবিধাজনক অন্ধকার নির্জন কোন স্থান। নির্ধারিত স্থানে অস্ত্র হাতে থাকেন ৮-১০ জন ডাকাত। অন্তত ১০০ গজ আগে রড ও পাথর হাতে থাকেন ২ জন। তাদের কাজ হলো প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট পরিবহনগুলোকে লক্ষ্য করে দূর থেকে চলন্ত গাড়িতে রড বা পাথর ছুড়ে মারা। আর চলন্ত গাড়িতে রড বা পাথরের আঘাতে ঘটে বিকট শব্দ। আর চালক গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করে থামিয়ে কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়ির চারদিকে অবস্থান নেয় ডাকাতদল। মুহুর্তের মধ্যেই শুরু হয় গাড়িতে ডাকাতি।

চলন্ত গাড়িতে রড ও পাথর ছুড়ে ডাকাতির ঘটনা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার তীরচর থেকে বুড়িচং উপজেলার কাবিলা এলাকা পর্যন্ত নতুন নয়। প্রায়ই ঘটে থাকে এমন ঘটনা। ঈদকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ওই ডাকাতচক্র। সম্প্রতি কয়েকটি স্থানে চলন্ত গাড়িতে রড ছুড়ে ডাকাতির চেষ্টা চলে। এমনকি গত ২৬ মে রাতে মহাসড়কের কোরপাই এলাকায় পুলিশের প্রাইভেটকারে রড ছুড়ে ডাকাতির চেষ্টাকালে এক ডাকাতকে আটক করেছে পুলিশ।

এর আগে গত ২৩ মে মহাসড়কের চান্দিনার কুটুম্বপুর এলাকায় বিদেশ থেকে আসা নোয়াখালীগামী একটি মাইক্রোবাসে রড ছুড়ে ডাকাতচক্র। মুহুর্তেই গাড়ি চালক বিষয়টি বুঝতে পেরে ঘটনাস্থলে গাড়ি না থামিয়ে কুটুম্বপুর বাস স্টেশন সংলগ্ন একটি সিএনজি পাম্পে গাড়ি থামান। ফলে ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পান তারা।

কিন্তু এর আগে গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে তীরচর এলাকায় ওই রড পার্টির কবলে পড়েন সাতজন ভারতীয় নাগরিক। তারা কলকাতা থেকে বাংলাদেশে বেড়াতে এসে মাইক্রোবাস যোগে চান্দিনায় আসার পথে ডাকাতদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারান। এমনকি ডাকাতদের ছুড়িকাঘাতে মারাত্মক আহত হন তিনজন।

ওই ডাকাত চক্রকে রড পার্টি হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। কারণ তাদের হাতে থাকে লোহার বাঁকা এ্যাঙ্গেল। চলন্ত গাড়ির নিচে এমন রডের বাঁকা এ্যাঙ্গেল দিয়ে আঘাত করলে বিকট শব্দ ঘটে।

এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ ইলিয়টগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) মনিরুল ইসলাম জানান, গত ঈদে রড পার্টির আক্রমণ অনেক বেশি ছিল। এ বছর এখনও তেমনটা করতে পারেনি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, মহাসড়কের পাশের সকল ঝোপ-ঝাড় পরিস্কার করেছি আমরা। এছাড়া রাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাদের টিম অবস্থানের পাশাপাশি নিয়মিত টহল টিম কাজ করছে।

এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রহমত উল্লাহ অপু জানান, মহাসড়কের ডাকাতি রোধে আমাদের পুলিশ সক্রিয় ভাবে কাজ করছে। ঈদে মহাসড়কে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা অংশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আমাদের দুটি সার্ভিস স্টপেজ এবং কয়েকটি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করবে।

হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাড়ি চালক ও যাত্রীদের সতর্ক করার উদ্দেশ্যে বলেন, সন্ধ্যার পর মহাসড়কে চলাচলরত অবস্থায় গাড়িতে বিকল শব্দ হলে তাৎক্ষণিক গাড়ি না থামিয়ে নিরাপদ দূরত্বে এবং স্টেশন এলাকা ও পেট্রোল পাম্পে গাড়ি থামিয়ে চেক করলে রড পার্টির কবল থেকে মুক্তি মিলবে।


নতুনসময়/এনএইচ