ঢাকা শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১

স্বাক্ষর জাল করে বিয়ে, কথিত স্বামীর বিরুদ্ধে ছাত্রীর মামলা


১৯ জুলাই ২০১৯ ০৭:০০

প্রথমে প্রেম, তারপর পরিণয়। এই সূত্র ধরে বিজ্ঞ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে। অতঃপর বিবাহ বিচ্ছেদ। প্রেম হয়েছে। বিয়ে হয়েছে। আবার বিচ্ছেদও হয়েছে। কিন্তু তার কিছুই জানেন না কনে। আচমকা এলাকায় গিয়ে কলেজ ছাত্রীকে বউ হিসেবে দাবি করেন কাগজে কলমে স্বীকৃত স্বামী। অন্যথায় ৫ লাখ টাকা দাবি করেন কনের বাবার কাছে। এমনই একটি বিরল ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার পোড়াদিয়া গ্রামে।

বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কথিত প্রতারক স্বামী ও তার সহযোগী সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে নরসিংদী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেছেন কনা আক্তার।

আদালতের বিজ্ঞ বিচারক বেলাবো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে তদন্ত করে আদালত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।

মামলায় অভিযুক্তরা হলো- বেলাবো উপজেলার পোড়াদিয়া গ্রামের আইয়ুব খানের ছেলে ও কথিত স্বামী খাইরুল আলম (সাব্বির খান), একই উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত করম আলীর ছেলে কাশেম, জাহিদুর রহমান ও মোমেন।

আদালত ও মামলা সূত্রে জানা যায়, পোড়াদিয়া কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের সিসি ডিপ্লোমা কোর্সের ৪র্থ পর্বের ছাত্রী কনা আক্তারের বাড়ির বিদ্যুৎ বিল আবাসিকের স্থলে বাণিজ্যিক হারে বিল প্রদান করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। তাই বিদ্যুৎ বিল কিছুটা বেশি আসে। বিষয়টি নিয়ে কলেজ ছাত্রীর বাবা আলাউদ্দিন স্থানীয় খাইরুল আলম (সাব্বির খান) এর সাথে আলোচনা করেন। সাব্বির বিলটি সংশোধন করিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নেন।

সেই সূত্র ধরে, সাব্বির দুই দিন কনাদের বাড়িতে যান। বিল সংশোধনের জন্য সাদা কাগজে একটি আবেদনপত্র, কলেজ ছাত্রী ও তার বাবার দুই কপি করে ছবি নেন। এর কিছুদিন পর সাব্বির কলেজ ছাত্রী কনা আক্তারের স্বাক্ষর জাল করে নরসিংদী নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে এসে বিবাহ সম্পাদন করেন। ওই সময় কলেজ ছাত্রী নোটারি পাবলিকের কাছে আসেননি। এমনকি বিবাহের ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর করেনি।

বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রী বেলাবো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দাখিল করেন। তিনি বিষয়টি সহকারী ভূমি কমিশনারকে দায়িত্ব দেন। পরে স্থানীয়রা সালিশ বসান। কিন্তু কোন ফল পাওয়া যায়নি। তাই নিরুপায় হয়ে গত মঙ্গলবার নরসিংদী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন কলেজ ছাত্রী কনা আক্তার।

কলেজ ছাত্রী কনা আক্তার বলেন, অভিনব কায়দায় সাব্বির আমার সাথে প্রতারণা করেছে। আমার মান সম্মান ক্ষুন্ন করেছে। বিদ্যুৎ বিল সংশোধনের কথা বলে, সে আমার ও বাবার ছবি নিয়েছে। তারপর আমার স্বাক্ষর জাল করে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেছে। এলাকায় সালিশ দরবার হলে সে আবার স্বাক্ষর জাল করে বিবাহ বিচ্ছেদও করেছে। কিন্তু আমি কিছুই জানি না। আমি সেখানে যাইনি। স্বাক্ষরও দেইনি। আমার প্রশ্ন হলো, আমার অনুপস্থিতিতে আইনজীবীরা এই অন্যায় কাজটায় সহায়তা করলো কীভাবে? আমি এর বিচার চাই।

কনার বাবা আলাউদ্দিন বলেন, সাব্বির আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছে। আমি বিদ্যুৎ বিল সংশোধনের জন্য তার দ্বারস্থ হয়েছিলাম। কিন্তু সে জাল স্বাক্ষর ও প্রতারণা করে কাগজে কলমে আমার মেয়ের সাথে বিবাহ সম্পাদন করে আমার মেয়ের মান সম্মান ক্ষুন্ন করবে সেটা আমি ভাবিনি। আমারা উপজেলা কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণমাণ্যদের কাছে সালিশ দিয়েছি। কিন্তু বিচার পাইনি। তাই মহামান্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।

স্বাক্ষর জাল করে বিয়ে করার অভিযোগ অস্বীকার করে খাইরুল আলম সাব্বির বলেন, কনার সাথে আমার চলাফেরা ছিল। ভালোবাসা ছিল। তার পর আমরা নোটারি পাবলিকের কাছে গিয়ে বিয়ে করি। পরে সে অন্য কারও পরামর্শে আমাকে ডিভোর্স দেয়। তারা আমার বিরুদ্ধে উপজেলা কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয়ার পর তিনি আমাকে ডেকেছিলেন। পরে আমি সব কিছুই খুলে বলেছি। তারপর আমার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছে।


নতুনসময়/এমএন