আত্মহত্যাকারী বর্ষার শরীরে জোরপূর্বক ধর্ষণের আলামত

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার আত্মহত্যা করা স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বর্ষাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের আলামত পেয়েছেন চিকিৎসক। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ফরেনসিক বিভাগের পরীক্ষায় এই আলামত মিলেছে। রামেক থেকে এই প্রতিবেদন পুলিশের কাছে পাঠানো হয়েছে।
রামেকের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক মিশু রাণী সাহা স্বাক্ষরিত ওই প্রতিবেদন পুলিশকে দেওয়া হয়েছে ২৫ জুন। পুলিশ ২৭ জুন প্রতিবেদনটি রাজশাহীর আমলী আদালতে (মোহানপুর) দাখিল করেছে। চিকিৎসক প্রতিবেদনে তার মন্তব্যের একাংশে বলেছেন, ভিকটিমের শরীরে জোরপূর্বক ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তার বয়স হতে পারে ১৫ থেকে ১৬ বছর।
বর্ষা স্থানীয় একটি স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়াশোনা করত। গত ২৩ এপ্রিল উপজেলার খানপুর বাগবাজার এলাকায় রাস্তার পাশে তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তার পরিবারের অভিযোগ, বর্ষার বান্ধবী সোনিয়ার সহযোগিতায় প্রতিবেশি মুকুল বর্ষাকে অপহরণ করে। এরপর শারীরিক নির্যাতনের পর অচেতন অবস্থায় ফেলে যায়।
ওই ঘটনার পর বর্ষাকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে রামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) তার শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষার পর গত ২৬ মে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মন্তব্য লেখেন রামেকের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক মিশু রাণী সাহা। তবে সেটি পুলিশকে দেয়া হয়েছে গত ২৫ জুন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে বর্ষার শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদন আমাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা সেটি আদালতে জমাও দিয়েছি। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, বর্ষাকে অপহরণ ও আত্মহত্যার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। কিন্তু কোনোটিতেই ধর্ষণের বিষয়টি নেই। শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে আসায় অভিযোগপত্র দাখিলের সময় মামলায় ধর্ষণের নতুন ধারা যুক্ত হবে।
বর্ষাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের পর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করতে গেলে ওই সময় গড়িমশি করেন মোহনপুর থানার তৎকালীন ওসি আবুল হোসেন। মামলা করতে চাওয়ায় তিনি পিটিয়ে বর্ষার বাবার দাঁত ভেঙে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন। তাই পুলিশ-প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দারস্থ হয়েছিলেন বর্ষার বাবা। অবশেষে ঘটনার চারদিন পর থানায় মামলা করতে পারেন তিনি। কিন্তু ওসি আবুল হোসেন এজাহার থেকে ধর্ষণের অভিযোগ বাদ দিয়ে শুধু অপহরণের বিষয়টি রাখেন। তবে শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে বর্ষাকে ধর্ষণের বিষয়টি উঠে এলো।
এদিকে থানায় ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত মুকুলকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। কিন্তু প্রতিবেশি এই আসামির পরিবারের সদস্যরা নানাভাবে লাঞ্ছনা দিয়ে আসছিলেন বর্ষাকে। অপবাদ সইতে না পেরে গত ১৬ মে একটি চিরকুট লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে বর্ষা। এ নিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে আরেকটি মামলা করেন বর্ষার বাবা।
বর্ষার এই অপহরণ ও আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোহনপুর থানার তৎকালীন ওসি আবুল হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। আর সম্প্রতি বর্ষার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কেন ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন উচ্চ আদালত। এখনও আসামির পরিবারের সদস্যরা নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে বর্ষার পরিবারের।
নতুনসময়/এমএন