ফেনীতে ফখরুল হত্যা: নিহতের পরিবারকে মামলা প্রত্যাহারে চাপ

ফেনী জেলার দাগনভূঞা পৌরসভার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ফখরুল উদ্দীন চৌধুরীকে হত্যার ঘটনায় নিহতের পরিবারকে মামলা প্রত্যাহার ও খুনের ব্যাপারে চুপ থাকতে অনবরত চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন ‘খুনীরা’। নিহতের বোন শাহীনুর আক্তার ও মা রওশনারা বেগম খুনীদের গ্রেফতার, পরিবারের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।
সোমবার (২৪ জুন) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোটার্স এসোসিয়েশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শাহীনুর আক্তার তিনি বলেন, আমার ভাই সৌদি আরবে ৯ বছর থেকে ফেনী দাগনভূঞায় চলে আসেন। তিনি পৌরসভার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। গত ২০১৭ সালের ২০ ডিসেম্বর ফখরুল আমার মেঝো ভাই ইতালি প্রবাসী নাজিমদ্দিন চৌধুরীকে মোবাইলফোনে জানায়, বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নির্বাচিত দাগনভূঞা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কমিশনার সাইফুল ইসলাম মেয়র ওমর ফারুককে খুন করবে। বিষয়টি ফখরুল জানায় ক্ষিপ্ত হয় সাইফুল গং। তাদের উদ্দেশ্য ফারুককে খুন করে সাইফুল ইসলাম হবে মেয়র আর তার ভাই পারভেজ কমিশনার। বিষয়টি ফখরুল মেয়র ফারুক ও ওসি আজাদকে জানায়।
ফখরুল একই বছরের ২৬ ডিসেম্বর সাইফুল ও তাদের সঙ্গীরা ইয়াবা মেশিন দিয়ে ইয়াবা তৈরি করে, তার প্রমাণসহ পুলিশকে দিলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। এ নিয়ে সাইফুলের ভাই পারভেজের সাথে ফখরুলের কথা কাটাকাটিও হয়। ৭ জানুয়ারি ২০১৮ দুপুরে পারভেজ, হিরা, বাহাদুর, আজাদসহ কয়েকজন ফখরুলের মোটরসাইকেল নিয়ে যায়। ১৩ জানুয়ারি মোটরসাইকেল আনতে গেলে ফখরুলকে মারধর করা হয়। একলাখ টাকা চাঁদা চাওয়া হয়। ১৯ জানুয়ারি চল্লিশ হাজার টাকা নিয়ে মোটরসাইকেল আনতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। ওই রাতেই কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় ফখরুলকে। পরের দিন সকালে ফখরুলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শাহীনুর আক্তার বলেন, লাশ উদ্ধারে গিয়ে দেখি আগে থেকেই ‘খুনী’ সাইফুল, রাসেলরা সেখানে পুলিশের সাথে অবস্থান করছে। তাৎক্ষনিকভাবে খুনের সাথে ওসি আজাদকে সাইফুলকে উদ্ধার করার কথা বললেও পুলিশ তা করে নি। নিহতের বোন শাহীনুর বলেন, প্রবাসী ভাই নাজিম উদ্দিন চৌধুরী দেশে ফিরে ২৩ জানুয়ারি দাগনভুইয়া থানায় পারভেজ, জাহিদ হাসান প্রকাশ হিরা, বাহাদুর, সাইফুল ইসলাম, রাসেল, শামীম, মুজাহিদ ও অজ্ঞাত মাইক্রোবাস চালকের নামে মামলা দায়ের করেন। সেই মামলা এখন তদন্ত করছে ফেনী পিবিআই। আমরা খুনীদের হত্যার বিচার চাই। আমাদের পরিবারের নিরাপত্তা চাই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা। এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ফেনী পিবিআই এডিশনাল এসপি মো. মরিুজ্জামান, মামলার যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। মামলার এক আসামী ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। মামলার আলামত জব্দ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা এলাকায় যেতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, জামিনে বেড়িয়ে আসামীরা হুমকি থামকি দিচ্ছে এমন প্রশ্নে মনিরুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগী পরিবার আসামীদের জামিন বাতিল চেয়ে ও নিজেদের নিরাপত্তা যেগেদু জিডি করতে পারেন। এবং আমাদের জানাতে পারেন। আমরা আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করবো। খুব শিগরিরি মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে বলেও জানান তিনি।
ফখরুল হত্যার ঘটনায় নিহতের পরিবারই এখন ফেরারি। মামলা প্রত্যাহার ও খুনের ব্যাপারে চুপ থাকতে অনবরত চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন ‘খুনীরা’। প্রত্যেক আসামীই এলাকায় অবস্থান করলেও নিহতের মা ও বোন এলাকা ছাড়া। বোন শাহীনুর আক্তার ও মা রওশনারা বেগম খুনীদের গ্রেফতার, পরিবারের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।