মেঘনায় ভাঙ্গছে ৪ বার, এক টুকরা জমি দেন মাথা গোজার জন্য!
সরকারী চাল,গম, আটা, শাড়ী, লুঙ্গি কিছুই দরকার নাই আমাগোরে এক টুকরা জমি দেন মাথা গোজার মত। ঢালচরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনার পেটে ৪ বার ঘর বাড়ি সহ আমার সকল সম্পত্তি গেছে। এখন আর কোথাও গিয়ে জমি কেনার মত সামর্থ নাই। ঢালচর ইউনিয়নের সাবেক ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাহেব আলী মিয়াজী (৭০) এ কথা গুলো বলেন।
তিনি আরও বলেন, ৪৫ বছর ধরে ঢালচরে বসবাস করে আসছি। ঐ যে বাড়ি টি দেখা যায় সেটিই আমার। ঢালচরে ব্রিটিশদের তৈরি করা বড় বড় বিল্ডিং ছিল। মৎস্য বন্দর হিসেবে ঢাকা, চাঁদপুর থেকে ব্যবসায়ীরা এসে এখানে মাছের ব্যবসা করেছে। আগুনে পুড়লে ভিটে মাটি থাকে আমাদের তা ও নাই। যেভাবে নদীতে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে মনে হয় আগামী পূর্ণিমার জোঁতে শেষ সম্বল টুকুও নিয়ে যাবে। এরপর কোথায় যাব এ নিয়ে মানুষের দ্ধারে দ্ধারে ঘুরছি এক টুকরা জমি পাওয়ার আশায়।
একই এলাকার সাইফুল ইসলাম (৫০) জানান, নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই, এখান থেকে চলে গেলে কি করবো ? নদীতে বারবার ভাঙ্গলে ও ঢালচরেই থাকতে হবে।
ঢালচর ইউনিয়ন পরিষদের নিচে ১ বছর আগে আশ্রয় নেয়া মো. ফিরোজ (২৬) জানান, ঢালচরেই তার জ¤œ শৈশব,কৈাশর কাটিয়ে যখন সংসারে দায় ঘাড়ে চেপে বসেছে তখন মোকাবিলা করতে হচ্ছে বারবার নদী ভাঙ্গন পরিস্থিতি । পৈর্তৃক শেষ সম্পত্তি নদীতে যাওয়ার পর এখানে চেয়ারম্যান আশ্রয় দিয়েছেন। নদী মাত্র ১ শত গজ দুরে আছে । ইউনিয়ন পরিষদ ও নদী গর্ভে গেলে আর কোন আশ্রয় নেয়ার মত জায়গা থাকবে না। আমির হোসেনের স্ত্রী তাসনুর বেগম জানান, আমরা এক টুকরা জমি চাই আর নদী ভাঙ্গন রোধে সরকার দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে আমরা কই যামু।
ঢালচর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া জানান, স্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টারটি ভাঙ্গনের কবলের কারনে নদীতে বিলীনের আগেই ভাঙ্গার কাজ শুরু হয়েছে । সেখান থেকে ইউনিয়ন পরিষদ মাত্র ১শত গজ দুরে। এরমধ্যে রয়েছে প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার, নিম্মমাধ্যমিক বিদ্যালয় পাশেই দাখিল মাদ্রাসা, টাওয়ার বাজার,বর্ষা মৌসুমের আগে নদীর পেটে চলে যেতে পারে। এ আশংকায় অনেকে জীবন বাচানোর জন্য মাটির মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন। আবদুল হক পাটওয়ারী জানান, হাওলাদার বাজারটি ৩ বছর আগে গড়ে ওঠলেও মেঘনা থেকে মাত্র ৫০ গজ অদুরে রয়েছে। ঢালচরের ৩ দিক দক্ষিণ, পুর্ব, উত্তর দিক দিয়ে যেভাবে ভাঙ্গছে মনে হয় কয়েক দিনের মধ্যে বিলুপ্ত হতে পারে।
ঢালচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম হাওলাদার জানান, ” চরফ্যাশন উন্নয়ন” শীর্ষক ২০১৫-১৬ সাল এর জরিপ অনুয়াযী ঢালচরের আয়তন ছিল ৩১.৩১ বর্গ কিলোমিটার । ভাঙ্গনের ফলে বর্তমানে দাড়িয়েছে অর্ধেকের কম । আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নদী ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি মাসিক উন্নয়ন সভায় তুলে ধরেছি। সংসদ সদস্য সাবেক বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এর নিকট ঢালচর বাসীর পক্ষে অনুরোধ করেছি।
চরফ্যাশন পানি উন্নয়ন বোর্ড ভোলা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী কাইসার আলম এ প্রতিবেদক কে জানান, আমরা ঢালচর পরিদর্শণ করে ভাঙ্গন রোধে আট শত কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠিয়েছি । মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলে অর্থ বরাদ্ধ সাপেক্ষে জিও ব্যাগ ঢাম্পিই করার কাজ শুরু করা হবে।’
নতুনসময়/আল-এম