ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল ২০২৪, ১৩ই বৈশাখ ১৪৩১


নেত্রকোণা জেলা যুবলীগ কমিটি বিতর্কিত, চলছে অনিয়ম


৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৯

ফাইল ছবি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন আওয়ামী যুবলীগ।সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ক্যাসিনোকাণ্ডে ইমেজ সংকটে থাকা আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ভাবমূর্তি ফেরাতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসে সংগঠনটির নতুন চেয়ারম্যান হয়েছেন শেখ ফজলে শামস পরশ। আর সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন মাঈনুল হোসেন খান নিখিল।

তবে এখনও সারা দেশের বিভিন্ন জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক অথবা বিভিন্ন জেলার আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে রয়েছে তৃণমূলের বিস্তর অভিযোগ। আর সেই অভিযোগের তীর মাথায় নিয়েও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন সেই সব যুব নেতারা।

একই রকম অভিযোগে জর্জড়িত নেত্রকোণা জেলা যুবলীগ। তৃণমূলের আশা প্রত্যাশার প্রতিফলন নেই। জাতীয় দিবসের কোন কর্মসূচিতে নেই যুবলীগের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহন। এমনকি পতাকা উত্তোলনের লোকও থাকে না বলে অভিযোগ উঠেছে যুবলীগের জেলা কমিটির শীর্ষ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। মাদক সেবন ও ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত এই নেতারা, অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীদের।

জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নানা অভিযোগের তীর বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক মাসুদ খান জনির দিকে। অভিযোগ রয়েছে তার স্ত্রী ঝুমা তালুকদারের বিরুদ্ধেও, যিনি দূর্গাপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান।

দূর্গাপুর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান সাদ্দাম আকঞ্জির অভিযোগ, মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসিয়ে থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি থেকে নিয়মবর্হিভূতভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। যে পদের জন্য নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাসুদ খান জনিকে সাত লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে জানান সাদ্দাম।

মিথ্যা মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাদ্দাম আকঞ্জি বলেন, বেশ কিছুদিন আগে আমার মামাতো ভাই কাউসারকে (২২) খুন করা হয়। তাৎক্ষনিক হাসপাতালে গিয়েছি পরের দিন জানাজায় অংশগ্রহন করেছি পরদিন মাসুদ খান জনির স্ত্রী দুর্গাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ঝুমা তালুকদারের ভাই স্বপন তালুকদার বাদী হয়ে আমার মামাতো ভাই হত্যার ঘটনায় মিথ্যা মামলা সাজিয়ে আমাকে হুকুমের আসামী করে এবং আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রমাণ ছাড়াই দুর্গাপুর থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি থেকে বহিষ্কার করেন মাসুদ খান জনি।

তিনি আরও বলেন, দূর্গাপুরে একটি ব্রিজের কাজ পেয়েছিল মাসুদ খান জনি। সেই কাজের জন্য আমার কাছ থেকে আট লক্ষ টাকা নেয়। সেই টাকা এখনও ফিরিয়ে দেয়নি, উল্টো আমার যাবতীয় ব্যবসা বাণিজ্য তার দখল করে নিয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত আওয়ামীলীগ সরকার আমলে মাসুদ খান জনির ভাই আরিফ খান জয় উপমন্ত্রী থাকা অবস্থায় দলীয় নেতাদের অপমান, মামলার ভয় দেখিয়ে অহেতুক হয়রানী করেছেন। এলাকার অনেক তরুণদের চাকরি দেয়ার নাম করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বিভিন্ন উপজেলায় কমিটি দেয়ার নাম করে একাধিক প্রার্থীর কাছ থেকে লাখ থেকে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় যুবলীগ নেতা।

সম্প্রতি অব্যহতিপ্রাপ্ত সাবেক যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছের লোক বলে দাবি করা কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান, মাসুদ খান জনি তার ব্যবসায়িক পার্টনার বলে এলাকায় চাঁদাবজি করেন এমন অভিযোগ অনেক দিনের। জানা যায়, আনিসুর রহমানের বাবা লুৎফর রহমান জামায়াতের রোকন ছিলেন।

মাসুদ খান জনির নানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অনেক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া এবং মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যায় সহযোগিতার অভিযোগ আছে বলে জানা যায়।

এই সব অভিযোগের বিষয়ে নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাসুদ খান জনির কাছে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি যুবলীগের কাউন্সিলে সেরা বক্তা হয়েছি, সেরা সংগঠক হয়েছি। অভিযোগগুলো সত্যি হলে এই অর্জন সম্ভব হতো না।

অভিযোগ রয়েছে নেত্রকোনা জেলা যুবলীগের আরও নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এর মধ্যে নাম উঠে এসেছে যুগ্ম আহ্বায়ক(১) জামি খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক (২) দেওয়ান রনির নামও।

জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জামি খান প্রশাসনের সাথে দুর্ব্যবহার সহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত বলে জানা যায়। তার বিষয়ে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অসন্তোষও রয়েছে ।

এদিকে যুগ্ম আহ্বায়ক (২) দেওয়ান রনি বিরুদ্ধে অভিযোগ তার ফুফা মির্জা আজম বস্ত্র ও পাঠ প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় দলীয় লোকদের সাথে দুর্ব্যবহার করা ছিলো তার নিত্তনৈমিত্তিক বিষয়। এতে মির্জা আজমের রাজনৈতিক ভাবমূর্তিও নেত্রকোণায় ক্ষুণ হয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রদলের সদস্যকে বারহাট্টা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি বানায় বর্তমান কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব। চলমান দলীয় শুদ্ধি অভিযানের পরেও এই কমিটি বহাল তবিয়তে থাকার বিষয়টি ত্যাগী দলীয় কর্মী সমর্থকদের কাছে বিস্ময়।

এমনই আরও নানান অভিযোগ রয়েছে নেত্রকোনা জেলার এই যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির বিরুদ্ধে। তাই যেহেতু যুবলীগের হারানো ভাবমূর্তি ফেরাতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। সেদিক বিবেচনায় নেত্রকোনা জেলার যুবলীগের বর্তমান বিতর্কিত কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন নেতৃত্বের হাতে যুবলীগের দায়িত্ব তুলে দেয়ার জন্য দাবী জানিয়েছেন নেত্রকোনার তৃণমূল যুবলীগের কর্মীরা।