ঢাকা রবিবার, ১৮ই মে ২০২৫, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


মায়ের কোল থেকে সড়কে পড়ে বাসের চাকায় পিষ্ট শিশু


২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:৪৪

মায়ের সঙ্গে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার ভোগনগর ইউনিয়নের বিজয়পুর গ্রামে নানা মো. সিরাজুল ইসলামে বাড়ি বেড়াতে এসেছিল দুই বছরের শিশু মো. নিহান।


সপ্তাহ ধরে নানার বাড়িতে বেশ ভালো কাটছিল মা ও ছেলের দিনগুলো। কিন্তু নাতির মুখ দেখতে না পেয়ে অস্থির দাদা ও দাদি। তাই নাতিকে নিতে ছুটে আসে দাদা মো. বাদশা মিয়া।

দাদা আর মায়ের হাত ধরে বাড়িতে ফিরবে এই নিয়ে আনন্দে মেতে ছিল শিশু মো. নিহান। খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। সোমবার সকাল ৭টায় নানা বাড়ির সবাইকে বিদায় জানিয়ে মায়ের কোলে বসে দাদার সঙ্গে বিআরটিসি বাসে রওয়ানা দেয় নিজবাড়ি মাগুড়া জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামে।

কিন্তু ৫ কিলোমিটার যেতে না যেতেই সমস্ত আনন্দ বিষাদে পরিণত হয় শিশু নিহানের পরিবারের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে বাঁক নেয়ার সময় বিআরটিসি বাসটি বিপরীতগামী একটি ট্রাককে অতিক্রম করার সময় হঠাৎ ব্রেক করলে বাসের সামনে মায়ের কোলে বসা শিশু মো. নিহান ছিকটে পড়ে যায় পাকা সড়কে। সঙ্গে সঙ্গে বাসের পিছন চাকা শিশুটির মাথাকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় শিশুটি।

বাসের যাত্রী মাগুড়া জেলার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, আমার সামনে বসা ছিল শিশুটি। কিন্তু সড়কে বাঁক নেয়ার সময় হঠাৎ করে ব্রেক করলে বাসটিতে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি হয়। এতে শিশুটি ছিটকে দরজা সামনে পড়ে যায়। বাসের সহকারী তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। বাসের গতির এবং ঝাঁকুনির কারণে আটকানো যায়নি শিশুটিকে।

শিশুটির নানা মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ৩ বছর আগে তার মেয়ে মোছা. সিনথিয়া সিমনের সঙ্গে বিয়ে হয় মাগুড়া জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার পূর্ব নারায়ণপুর গ্রামে হাজী দাদা বাদশা মিয়ার ছেলে মো. শামীম আশরাফ শাওনের সঙ্গে। দুই বছর পূর্বে তার কোলজুড়ে আসে একমাত্র সন্তান নিহান।

তিনি জানান, নিহানের দাদার পিড়াপিড়ির কারণে আজকে যেতে দেয় মেয়ে আর নাতিকে। এটা যে তার নাতির শেষ বিদায় হবে তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।

একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় শিশুটির মা-বাবা। মাঝে মাঝে প্রলাপ বকছেন তারা।

এ ঘটনায় বাসের যাত্রীসহ উপস্থিত সবাই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি ছোট শিশুটির লাশ দেখে।

অশ্রুসজল চোখে বীরগঞ্জ থানার এসআই মো. আকবর আলী বলেন, চাকরি জীবনে অনেক ঘটনা দেখতে হয়েছে। তবে এই ঘটনাটিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি তিনি। এ ঘটনায় একটি পরিবারের বেঁচে থাকার স্বপ্নের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

নতুনসময়/আইকে