ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৪, ৬ই বৈশাখ ১৪৩১


হুমকি দেওয়ার একদিন পর মিলল কিশোরীর লাশ


২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৫:২০

ফাইল ফটো

এক কিশোরীকে বাড়িতে এসে হুমকি দেওয়ার পরদিন সকালে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে ওই কিশোরীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলা সদরের ছোটদাপ এলাকায় সাদিয়া সামাদ লিসা (১৪) নাম। শুক্রবার ওই কিশোরীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করে পুলিশ।

আগের দিন হুমকি দেওয়ায় পরিবার থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে লিসার প্রাক্তন সহপাঠী সাদ (১৪) তার লোকজন নিয়ে লিসাকে হত্যা করে পানিতে ফেলে দিয়েছে। এ ঘটনায় লিসার পরিবার লিসার পরিবার থেকে ৩ কিশোরকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা হয়েছে। তিন আসামির মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলো আটোয়ারী উপজেলা সদরের ছোটদাপ এলাকার ফারুক হোসেনের ছেলে আকাশ (১৫) ও মজিবর রহমানের ছেলে মেহেদি হাসান মুন্না (১৫)। তারা দুজন বন্ধু এবং দুজনই নবম শ্রেণিতে পড়ে। মামলার প্রধান আসামি ছোটদাপ এলাকার স্কুলশিক্ষক আক্তারুজ্জামানের ছেলে সাদ ঘটনার পর থেকেই পলাতক।

নিহত লিসার মা খায়রুন নাহার বলেন, সন্ধ্যায় সাদিয়া ঘরের মধ্যে পড়ছিল। এ সময় আমি পাশের বাড়ির পাওনা টাকা দিতে গেছি। কিছুক্ষণ পরে এসে দেখি সাদিয়া ঘরে নেই। পরে তার বাবাসহ এলাকার লোকজন সঙ্গে নিয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে কোথাও না পেয়ে বিকেলের হুমকির কথা ভেবে প্রতিবেশী কিশোর আকাশ, মুন্না ও সাদের বাড়িতে খুঁজতে যাই এবং তাদেরকে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান গোলাপের বাড়িতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তারা মুখ খোলেনি। গোলাপ বার বার সাদকে লিখিত নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। আমি এর প্রতিবাদ করি। ভোরে বাড়ির পাশের একটি পুকুরে লিসার লাশ ভেসে থাকতে দেখে স্থানীয়রা সবাইকে খবর দেয়। এই ফাঁকে সাদকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে তারা। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। তাদের ফাঁসি চাই। তাদের বাবা-মাও যেন সন্তান হারানোর কষ্ট বুঝতে পারে। আর কারো মেয়ের সাথে যেন এমনটা না হয়।

এদিকে প্রধান অভিযুক্ত কিশোর সাদের বাবা স্কুলশিক্ষক আক্তারুজ্জামান বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বৃস্পতিবার আমার ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাদিয়ার সঙ্গে কথা বলার অপরাধে (আকাশ নামের) ওই কিশোর তাকে মারধর করেছে। এই বিচার দিতে মেয়েটির বাড়িতে যায় আমার ছেলে। বৃস্পতিবার সন্ধ্যায় আমার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেলেও আর ফিরে পাইনি। আমার নির্দোষ ছেলেকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

 

মামলার অভিযোগ ও লিসার পরিবার সূত্রে জানা যায়, আটোয়ারী উপজেলা সদরের ছোটদাপ এলাকার আব্দুস সামাদের ছোট মেয়ে সাদিয়া সামাদ লিসা। আটোয়ারী সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সম্প্রতি লিসা আটোয়ারী মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র আকাশের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তা দেখে লিসার প্রাক্তন সহপাঠী সাদ ক্ষুব্ধ হয়। সে-ও লিসাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। এ নিয়ে সাদ ও আকাশের মধ্যে মারামারিও হয়। লিসা আকাশকে ভালোবাসায় বৃহস্পতিবার বিকেলে সাদ লিসাদের বাড়ি গিয়ে লিসা ও তার মাকে হুমকি দিয়ে আসে 'আজ কিছু একটা ঘটনা ঘটবে' বলে। সন্ধ্যায় লিসাকে বাড়িতে রেখে মা খায়রুন নাহার পাশের বাড়িতে ধারের টাকা শোধ করতে যান। বাবা আব্দুস সামাদও বাইরে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর তারা বাড়ি ফিরে দেখেন লিসা নেই। তারপর তাদের সন্দেহ হলে প্রথমে তারা আকাশের বাড়িতে যান। সেখানে লিসার খোঁজ না পেয়ে আকাশকে সাথে নিয়ে সাদের বাড়িতে যান। তারপর দুজনকেই সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান গোলাপের বাড়িতে এনে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সাথে আকাশের বন্ধু মুন্নাকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়। কিন্তু কোনো তথ্য মেলেনি। ভোরে লিসার প্রতিবেশীরা লিসার বাড়ির পাশের এক পুকুরে তার লাশ ভেসে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন। এই খবর শোনার পরপরই পালিয়ে যায় সাদ। সকালে স্থানীয়রা বাকি দুই কিশোরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনায় লিসার বাবা ওই তিন কিশোরকে আসামি করে আটোয়ারী থানায় একটি মামলা করেন। লিসার পরিবার এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে দাবি করে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

আটোয়ারী থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পুকুর থেকে ওই স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধারের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক সুরতহালে লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ওই স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে তিন কিশোরকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এদের মধ্যে আটক দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। মূল আসামিকে গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।