ঢাকা রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


মিথ্যা অপবাদ দেয়ায় আত্মহত্যার চেষ্টা স্কুলছাত্রীর


২৮ আগস্ট ২০১৯ ২৩:১২

ফাইল ফটো

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে চরিত্রহীনা অপবাদ দিয়ে এক স্কুলছাত্রী ও তার তিন বন্ধুকে গ্রাম্য শালিসে লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় প্রকাশ্যে মারপিট করা হয় ওই শিক্ষার্থী ও তার স্বজনদের। সেই লজ্জা-অপমানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় ওই শিক্ষার্থী। বর্তমানে সে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। উপজেলার রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নে গত রোববার এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে মারপিটের এ ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে হরিরামপুর থানায় মামলা করেছেন মেয়েটির বাবা। তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন এলাকার মাতব্বরসহ মূল হোতারা।

ছাত্রীর বাবা জানান, স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যলয়ের অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে তার মেয়ে। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই প্রতিবেশি রানা, হৃদয়, সজিব, কালাম, আসিফ ও রাকিবসহ কয়েকজন বখাটে তাকে উত্যক্ত করত। বিষয়টি নানীকে জানায় তার মেয়ে। এতে বখাটেরা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।

গত রোববার সন্ধ্যায় তিন বন্ধু ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে বেড়াতে আসে। এ সময় তাদেরকে ঘরে নিয়ে সে বিস্কুট খেতে দিলে বাইরে থেকে ওই বখাটেরা তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর তাকে চরিত্রহীনার অপবাদ দিয়ে আশপাশের মাতব্বর ও লোকজনকে ডেকে আনা হয়। রাতেই স্থানীয় প্রাইমারি স্কুল মাঠে এ নিয়ে গ্রাম্য শালিসের আয়োজন করা হয়।

যেখানে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহাব আলী, সাবেক সদস্য আয়নাল, জনাব আলী (জুনি), মাতব্বর কাঞ্চন মাস্টার, লুৎফর, খলীল কাজী ও আবুলসহ অর্ধশতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। রাত ১০টা থেকে ভোর ৪টা পযন্ত চলে এই শালিস বৈঠক। শালিসে ওই কিশোরী ও তার বন্ধুদের কোনো বক্তব্য না শুনেই এক তরফা রায় দেয়া হয়। রায়ে তিন বন্ধুকে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৬০ হাজার টাকা এবং কিশোরীকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে কী হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি।

পরদিন ওই স্কুলছাত্রীর বাড়িতে জরিমানার টাকা চাইতে যান মাতব্বর লুৎফরসহ কয়েকজন। কিন্তু তার পরিবার সেই টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে বাঁশ ও রড দিয়ে পেটানো হয়। এতে স্কুলছাত্রীসহ তার নানী, খালা ও খালাতো বোন গুরুতর আহত হওয়ায় তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেই মারপিটের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সবার হাতে হাতে।

এদিকে মিথ্যা অপবাদ আর মারপিটের ঘটনায় লজ্জা আর ক্ষোভে হারপিক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় ওই স্কুলছাত্রী। পরিবারের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। বর্তমানে সে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

অপবাদ দিয়ে শালিসে জরিমানা ও মারপিটের বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহাব আলীসহ মাতব্বরদের কাছে গেলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, তিনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অথচ গ্রাম্য শালিসের আয়োজন এবং জরিমানার বিষয়টি তাকে জানানো হয়নি। যারা মেয়েটিকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শালিস বৈঠকের আয়োজন করেছে তাদের আগে শাস্তি হওয়া উচিত। কারণ শালিসে জরিমানা করা না হলে মারপিটের ঘটনাও ঘটতো না। আত্মহত্যার চেষ্টাও করত না মেয়েটি। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান।

হরিরামপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশারফ হোসেন জানান, মারপিটের ঘটনায় ৯ জনকে আসামি করে মেয়েটির বাবা মামলা করেছেন। তিন জনকে গ্রেফতার করা হলেও তারাসহ সব আসামি আদালত থেকে জামিনে আছেন।

কতিথ মাতব্বরসহ নেপথ্যের অনেকেই মামলার আসামি হননি এবং তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলায় আসামি করার এখতিয়ার বাদীর। তারা যাদের আসামি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্তে যদি আর কারো সম্পৃক্ততা মেলে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।