ঢাকা শুক্রবার, ১৬ই মে ২০২৫, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


১৮ বছর পর স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতি, মুক্তি পেলেন ইসলাম


১০ আগস্ট ২০১৯ ০৫:৩২

১৮ বছর পর স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতি দেয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মো. ইসলাম মুক্তি পেয়েছেন। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

মো. ইসলাম ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের আজিজ মৃধার ছেলে। তার স্ত্রী মালার বাড়িও একই গ্রামে। প্রেম করে বিয়ে, তারপর স্ত্রীর গর্ভে সন্তান। কিন্তু পরে সেই স্ত্রী ও সন্তানকে অস্বীকার করেন ইসলাম।

এরপর ডিএনএ টেস্টে সন্তানের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। এরপরও ইসলাম মালাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনায় মামলা করেন বাবা। সেই মামলায় ২০০৫ সালের ১০ জানুয়ারি ঝিনাইদহের বিজ্ঞ অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেন।

২০১৫ সালের ১৭ মে তাকে ঝিনাইদহ থেকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ভালো কাজের জন্য অর্জিত রেয়াতসহ ১৯ বছর ১৭ দিন কারাভোগ করেছেন তিনি। এর মধ্যে মূল সাজা খেটেছেন ১৪ বছর ৬ মাস ২৯ দিন। তার অবশিষ্ট সাজা ১০ বছর ১১ মাস ১৪ দিন। তার আগেই তিনি মুক্তি পেলেন।

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আবু তালেব বলেন, আদালতের নির্দেশে ডিসির অনুমতিক্রমে ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার, দুই পক্ষের আত্মীয় স্বজন ও তাদের ছেলে মিলনের উপস্থিতিতে ইসলাম ও মালার বিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের ১ আগস্ট বিয়ের কাবিন উচ্চ আদালতে জমা দেন। এরপর আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। আদালতের কপি পাওয়ার পর শুক্রবার মুক্তি দেয়া হলো।

তিনি আরো বলেন, মহামান্য আদালতের নির্দেশে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মো. ইসলামকে মুক্তি দেয়া হলো। এটি বন্দী সংশোধনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

শুক্রবার কারাগারে মো. ইসলামকে গ্রহণ করতে আসেন বাবা আবদুল আজিজ মৃধা, বোন মমতাজ বেগমসহ পরিবারের চার সদস্য। তবে স্ত্রী মালা ও ছেলে মিলন উপস্থিত ছিলেন না।

মুক্তির পর মো. ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন বন্দী ছিলাম। মুক্তি পেয়ে খুবই খুশি। স্ত্রী, সন্তান পরিবারের সঙ্গে বাকি দিনগুলো কাটাতে চাই।

বাবা আবদুল আজিজ মৃধা বলেন, আদালতের নির্দেশে আমার ছেলেকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। আমরা খুবই খুশি। আগামী দিনে সবাইকে নিয়ে চলতে চাই। পেছনে ফিরে দেখতে চাই না।

ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু নওশাদ বলেন, জেল কোড অনুযায়ী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিক্রমে সিনিয়র জেল সুপারের কক্ষে বিবাহ সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিতিতে মো. ইসলাম ও মালার বিয়ে সম্পন্ন হয়। এর প্রেক্ষিতে তিনি মুক্তি পেলেন। কারা পরিবারের সবাই খুশি। এটি একটি পজেটিভ (ইতিবাচক) দৃষ্টান্ত হলো। সবাই তাদেরকে সহযোগিতা করবেন।

ঝিনাইদহের লক্ষীপুর গ্রামের মেয়ে মালার সঙ্গে একই গ্রামের আজিজ মৃধার ছেলে ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্থানীয় মৌলভীর মাধ্যমে ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তারা বিয়ে করেন। পরবর্তীতে মালা গর্ভবতী হন। ২০০১ সালের ২১ জানুয়ারির মালার গর্ভে জন্ম নেন ছেলে মিলন। যদিও মালার সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন ইসলাম। ছেলের পিতৃত্বের পরিচয়ও দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এরপর মালার বাবা ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। এ মামলায় ঝিনাইদহের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ইসলাম আপিল করলে রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টেও আপিল বিভাগে আবেদন করলে সেখানেও ইসলামের সাজার রায় বহাল রাখেন। পরবর্তীতে আপিল রিভিউ আবেদন করেন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ইসলাম। ইসলামের করা রিভিউ শুনানিতে আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্জে মালা ও মিলনের স্বীকৃতির বিষয়টি সামনে আনেন।

আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল আপিল বিভাগকে বলেন, মালা ইসলামেরই স্ত্রী। আর মিলন যে ইসলামের সন্তান সেটা হাইকোর্টের আদেশের পর ডিএনএ রিপোর্টে প্রমাণিত। এরপর ৩১ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে মালা-ইসলামের মধ্যে পুনরায় বিয়ে হয়। সেখানে বিয়ের রেজিস্ট্রি (কাবিনও) হয়। এরপর আপিল বিভাগ ইসলামকে জামিনে মুক্তির নির্দেশ দেন। আগামী ২৯ আগস্ট এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।