ঢাকা সোমবার, ১৩ই মে ২০২৪, ৩১শে বৈশাখ ১৪৩১


গৃহপালিত বিরোধীদল হতে চান না এরশাদ


৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২২:২০

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, জাতীয় পার্টি আর গৃহপালিত বিরোধীদল হতে চায় না। আমরা নিজেরাই ক্ষমতায় যেতে চাই।

শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনির্য়ান ইস্টিটিটিউট প্রাঙ্গণে দলের তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের যৌথসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সভা থেকে আগামী ৬ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়ে এরশাদ বলেন, মহাসমাবেশ থেকে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের সর্বাত্বক প্রস্তুতি নিয়ে দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় দলকে সুসংগঠিত করতে হবে। পাড়া মহল্লায় গণসংযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি নির্বাচনী কেন্দ্র কমিটি গঠন করে জাপার শাসনামলের উন্নয়ন ঘরে ঘরে পৌছে দেওয়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন এরশাদ।

তিনি বলেন, আমি একজন অত্যাচারিত ব্যক্তি। আমার মত অবিচার আর কোনো রাজনীতিবিদের প্রতি আর হয়নি। আমার জন্য চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বসানো হয়েছিলো বিশেষ আদালত। কিন্তু কি লাভ! আমার প্রতি অত্যাচার করে কি আপনারা ভালো আছেন? দেশ কি ভালো আছে? আমি ক্ষমতা ছাড়ার পর ২৮ দিনও দেশ শান্তিতে ছিলো না। শুরু হয়েছে খুন-গুম-সন্ত্রাস। আমরা দেশে আবারও শান্তি ফিরিয়ে দিতে চাই। আমাদের ক্ষমতায় যেতেই হবে। এ থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই।

যৌথসভায় রাজধানীর উত্তর দক্ষিণ ও ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলা উপজেলার নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে সভা রূপ নেয় জনসভায়।

বর্তমান সংসদ সদস্যেদের পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা বিশাল বিশাল মিছিল নিয়ে সকাল থেকেই জড়ো হয় অনুষ্ঠান স্থলে।

তবে গতকালের সভায় সবচেয়ে বড় শোডাউন করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ঢাকা- ৪ আসনের এমপি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

বেলা ১১ টার দিকে শ্যামপুর কদমতলি থেকে জাপা নেতা সুজন দে, শেখ মাসুক রহমান, কাওসার আহমেদ ও ইব্রাহীম মোল্লার নেতৃত্বে কয়েক হাজার নেতাকর্মীর বিশাল মিছিল নিয়ে ইঞ্জিনির্য়াস ইস্টিটিটিউট এর সামনে আসলে পুরো এলাকা লোকে লোকারন্য হয়ে যায়। এই সময় ঐ সড়কে যান চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

বাবলার পাশাপাশি পটুয়াখালী থেকে জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ও বাগেরগঞ্জ থেকে তার স্ত্রী রত্না আমিন হাওলাদারের নির্বাচনী এলাকা থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সকালেই যৌথসভায় যোগদান করেন।

এছাড়া নারায়নগঞ্জ থেকে লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, মানিকগঞ্জ থেকে জহিরুল আলম রুবেল, দোহার থেকে সালমা ইসলাম, ও ঢাকা উত্তর থেকে শকিফুল ইসলাম সেস্টুর অনুসারীরা বড় মিছিল নিয়ে যৌথসভায় যোগদান করেন।

সভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন জাপার মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার এমপি।
বক্তব্যে হাওলাদার বলেন, আমরা কারো রক্ত চক্ষুর কাছে মাথা নত করবো না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে করবো, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।

তিনি বলেন, বিএনপির আমলেও হত্যা গুম ছিল। পরবতীতে তা অব্যাহত রয়েছে। এই জন্যই দুইটি দলকেই মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি বলেন, জাতীয় পার্টির এবারের সংগ্রাম হবে ক্ষমতায় যাওয়া ও উন্নয়নের সংগ্রাম। এই সংগ্রামে জিততে হলে পার্টির সকল স্থরের নেতাকর্মীকে কাঁেদ কাঁদ মিলে ঐক্যবদ্ধ ভবে কাজ করতে হবে।

জিএম কাদের বলেন, আমরা জোটগত ভাবে নির্বাচন করলে, আমরা কত আসন পাবো তা আগেই চূড়ান্ত করতে হবে। নির্বাচনে জয়ের পর সরকার গঠনেও আমাদের কি ভ’মিকা থাকবে তাও আগে চূড়ান্ত করতে হবে।

প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, এরশাদ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া কেউ জোট করলে সেই জোটের ফলাফল হবে বিগ
এরশাদ জোটের রাজনীতির রূপকার। এরশাদ ছাড়া কোনো দল সরকার গঠন করতে পারবে না।

যৌথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সালমা ইসলাম, এ্যাড. শেখ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভ রায়, মেজর অব. খালেদ আখতার, মশিউর রহমান রাঙ্গা, আজম খান। এছাড়াও দলের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শফিকুল ইসলাম মধু, ইয়াহহিয়া চেীধুরী, অ্যাড. গোলাম মুর্তজা, জহিরুল আলম রুবেল, মনোয়ার-ই-খোদা চৌধুরী মন্টি প্রমুখ।

সভায় জাপার অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে যুব সংহতি, ছাত্রসমাজ, মহিল পার্টি, কৃষক পার্র্টি, শ্রমিক পার্টির নেতারা নিজ নিজ ব্যানারে অসংখ্যা মিছিল নিয়ে যোগদান করেন। এছাড়া রাজধানীর আশ-পাশের জেলার মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে গাড়ীবহর নিয়ে নেতাকর্মীরা যোগদান করায় আশপাশের এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এর আগে ভোরেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে জাপার তৃণমুলের নেতাকর্মীরা যৌথসভায় অংশ নেন।

এমএ