শঙ্কিত বিএনপি দিশেহারা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে দলীয়ভাবে মাত্র ৫টি এবং জোটগত মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে ৭টি আসন পেয়ে স্তম্ভিত বিএনপি। কারান্তরীণ দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অবর্তমানে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখা দলটি এখন সংকটের মুখে। ভোটের ফলাফলে মনোবল হারিয়ে দল- জোটের নেতা-কর্মীরা অনেকটা দিশাহারা। দল নিয়ে অনেকই এখন শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। এই অবস্থায় করণীয় নিয়ে গতকাল সোমবার প্রথমে বিএনপির স্থায়ী কমিটি, এরপর ২০ দল এবং শেষে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বৈঠক করেছে।
এসব বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একাদশ সংসদ নির্বাচন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে অবিলম্বে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচন ও সরকারের পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেছেন, দাবি আদায়ে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি দ্রুতই আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার চিন্তা করছেন তারা।
গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেছেন, রবিবারের নির্বাচন বাতিল করে পুণঃতফসিলের দাবিতে আগামী ৩ জানুয়ারি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরাসহ সকল বিরোধী দলের প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি প্রদান করবেন এবং কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির বিজয়ী প্রার্থীরা শপথও নেবেন না, সংসদেও যাবেন না
গতকাল বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রথমে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল এক প্রশ্নের জবাবে জানান, রবিবারের ভোটে বিএনপির নির্বাচিত পাঁচজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথও নেবেন না, সংসদেও যাবেন না। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা তো একাদশ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। নতুন নির্বাচনের দাবি করেছি। ফলে সংসদে যোগ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।
এদিকে বিএনপির এমন পরাজয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনেকটাই শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। বলতে গেলে তারা এখন দিশেহারা। অনেকেই ঘর থেকেই বের হচ্ছেন না। দীর্ঘ ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে এমনিতেই মনোবল হারানো নেতাকর্মীরা নির্বাচন ঘিরে কিছুটা মনোবল ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু এমন শোচনীয় পরাজয়ে তারা দল নিয়ে শঙ্কা ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।
অনেকেই বলছেন, দল কিভাবে চলবে কারা চালাবেন এ নিয়ে তারা দ্বিাধাদ্বন্দের মধ্যে রয়েছেন। এছাড়াও এলাকা ভিত্তিক রাজনীতি করার কারণে এখন শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, রবিবারের ভোটে বেসরকারি ফলাফলে বিএনপির যেই পাঁচজন নির্বাচিত হয়েছেন তারা হলেন- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (বগুড়া-৬), মোশাররফ হোসেন (বগুড়া-৪), মো. আমিনুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), মো. হারুন উর রশিদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩) এবং জাহিদুর রহমান জাহিদ (ঠাকুরগাঁও-৩)। এছাড়া ড. কামালের গণফোরামের পুরনো জোট জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনুসর মৌলভীবাজার-২ আসনে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে এবং গণফোরামের মোকাব্বির খান দলীয় প্রতীক ‘উদীয়মান সূর্য’ মার্কায় সিলেট-২ আসনে জয়লাভ করেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল নিজসহ দলের জয়ী পাঁচজন শপথও নেবেন না এবং সংসদেও যাবেন না বললেও জোটের সুলতান মনসুর ও মোকাব্বিরের বিষয়ে কিছু বলেননি।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ৬৭(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ভোটে জয়ী হয়ে যদি কেউ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেন তাহলে নতুন সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথমদিন থেকে ৯০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর তার আসনটি শূন্য হবে। অবশ্য সংশ্লিষ্ট বিজয়ী ব্যক্তি স্পিকারকে অবহিত করে শপথ গ্রহণে কিংবা অধিবেশনে যোগদানে বিরত থাকলে সেক্ষেত্রে স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন।
নতুনসময়/আইএ