তারেকের বিষয়ে ভারতের আপত্তির যত কারণ

বিএনপির প্রধান নেতা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১০টি অভিযোগ করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত। সম্প্রতি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দুজন নেতা ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারেকের বিরুদ্ধে ভারতের আপত্তির বিষয়ে জানতে চেয়েছে।
এ বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, তারা বিএনপিকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছেন এবং তারেক জিয়া বিএনপির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর বিএনপিতে তারেক জিয়া অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই তারেক জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপি সম্ভব নয়। সুতরাং তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ বা আপত্তিগুলো জানলে, তাঁরা আপত্তিগুলোর বিষয়ে খতিয়ে দেখতে পারবে এবং তারেক জিয়াকে এই বিষয়ে সতর্ক করতে পারবে। তারেকের বিরুদ্ধে ভারতের আপত্তির বিষয়ে একটা সমাধান করতে পারবে বলেই মনে করেন তারা।
উল্লেখ্য, ঐক্যফ্রন্টের ওই দুই নেতার মধ্যে একজন পঁচাত্তর সালের ১৫ আগস্টের পর দীর্ঘদিন ভারতে অবস্থান করেছিলেন এবং অন্যজন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল।
তারেকের ব্যাপারে ভারতের পক্ষ থেকে যে আপত্তিগুলো করা হয়েছে সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
১. তারেকের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’য়ের যোগাযোগ রয়েছে। আইএসআইয়ের কাছ থেকে তিনি নিয়মিত আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেন। তার কিছু দালিলিক প্রমাণ ভারত ঐক্যফ্রন্টের এই দুই নেতার কাছে হস্তান্তর করেছে।
২. তারেক রহমান উলফাসহ ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিগোষ্ঠীদের আর্থিক এবং নানা ধরনের সহযোগিতা করে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংঘটনগুলোর সঙ্গে তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তারেকের সঙ্গে ভারতের জঙ্গিগোষ্ঠী সম্পর্কের পক্ষে ভারত কিছু তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করেছে এই দুই নেতার কাছে।
৩. ভারতের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। ভারতের এইসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছ থেকে তারেক নিয়মিত সহযোগিতা গ্রহণ করেন। ভারতের চিহ্নিত এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর নেতাদের মধ্যে দাউদ ইব্রাহীম অন্যতম। দাউদ ইব্রাহীমের সঙ্গে তারেকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে ভারত অভিযোগ করেছে।
৪. তারেক জিয়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক ভারতের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী টাটার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেছিল বলে ভারত অভিযোগ করেছে। এর স্বপক্ষেও তাদের কাছে যে প্রমাণ আছে তা এই দুই নেতার কাছে হস্তান্তর করেছে।
৫. ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামাত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে অন্তত ১৬ টি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্যাম্প পরিচালিত হতো। তারেক জিয়ার সহযোগিতা এবং পৃষ্ঠপোষকতায় এই ক্যাম্পগুলো পরিচালিত হতো বলে ভারত অভিযোগ করেছে।
৬. ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সীমানা এবং রুট ব্যবহার করে অনেক অস্ত্রের চালান ভারতের সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছায়। যার মধ্যে (যেটাকে আমরা ১০ ট্রাক অস্ত্র বলে জানি ) একটা চালান চট্টগ্রামে ধরা পরেছিল। এই অস্ত্রগুলোর চালানে তারেক জিয়াই মূল ভূমিকা পালন করতো বলে ভারত অভিযোগ করেছে।
৭. ভারতের অভিযোগ হলো, তারেক জিয়া লন্ডনে বসে ভারত বিরোধী প্রচারণা এবং অপপ্রচারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে ভারত বিরোধী যে প্রচারণাগুলো হয় তা তারেক জিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় হয় বলে ভারত অভিযোগ করেছে।
৮. তারেক রহমানের সঙ্গে যুদ্ধাপরাধী এবং তাঁদের সন্তানদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। যুদ্ধাপরাধী এবং তাঁদের সন্তানরা ভারতের স্বার্থ বিরোধী তৎপরতার সঙ্গে জড়িত।
৯. তারেক জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের উন্নয়নে যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিয়েছিল, তাঁর একটিও পূরণ করেননি। সেজন্য তারেক জিয়াকে বিশ্বাস করা যায় না বলে অভিযোগ ভারতের।
১০. সর্বশেষ অভিযোগ হলো, ভারত মনে করে বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে তারেক জিয়া বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে যে বিদ্যমান সম্পর্ক, চুক্তি, উন্নয়ন অংশীদারিত্ব রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে নেতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ফলশ্রুতিতে ভারত আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ভারতের এই ১০ আপত্তির বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দুই নেতা বলেছেন, তাঁরা এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবেন এবং তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের বিষয়টি অত্যন্ত জোরালো ভাবে উপস্থাপন করবেন।
এমএ