ছিটকে পড়তে পারেন আ.লীগের ৪০ মন্ত্রী-এমপি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় দেখা যেতে পারে নতুন মুখ। সারা দেশের প্রায় ৪০ আসনে বিতর্ক ও বার্ধক্যজনিত কারনে এসব আসনে মনোনয়ন পরিবর্তন করা হচ্ছে। দলের মনোনয়নের সম্ভাব্য তালিকায় অধিকাংশ আসনে জনপ্রিয় ও নতুন প্রার্থীর নাম আছে। কয়েকটি আসনে জনপ্রিয়তার তুলনায় জোট ও মহাজোটের প্রার্থীদের সমীকরণে মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন অনেক সংসদ সদস্যও। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দল, শক্তিশালী তদবির, জোট-মহাজোটের শরিক দলের সঙ্গে আসন বণ্টন ও প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী বিবেচনায় কয়েক সংসদ সদস্য তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার ৪২ সদস্যের নাম দলের মনোনীত প্রার্থীদের সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে। তাদের কেউ কেউ এখনো ‘মনোনয়ন ঝুঁকিতে’। পাশাপাশি দলের প্রভাবশালী অনেকের বাদ পড়ার কথাও আলোচনা হচ্ছে। বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়।
নানা বিতর্কের কারনে সম্ভাব্য মনোনয়ন তালিকায় নেই যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়ের নাম। মনোনয়ন হারাতে পারেন নেত্রকোনা-৩ আসনের ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুও। ইয়াবা বিতর্কে কক্সবাজার-৪ আসনে আবদুর রহমান বদি, টাঙ্গাইল-৩ আসনে আমানুর রহমান রানা, টাঙ্গাইল-২ আসনের খন্দকার আসাউজ্জামান, যশোর-২ আসনের মনিরুল ইসলাম, ময়মনসিংহ-১১ আসনের মোহাম্মদ আমানুল্লাহ, কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সোহরাব উদ্দিন ও মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের সুকুমার রঞ্জন ঘোষের নাম নেই খসড়া তালিকায়। এসব আসনে নতুন মুখের কথা ভাবছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের মনোনয়ন পাওয়া ‘অনিশ্চিত’ বলে আলোচনা হচ্ছে। ঢাকা-১৩’র ওই আসনে নতুন মুখ আসতে পারে বলে দলীয় সূত্রগুলো দাবি করছে। মাদারীপুর-৩ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কম দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের। উচ্চ আদালতের এক আদেশের ফলে পটুয়াখালী-২ আসনের দলের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজের এবার প্রার্থী হওয়া অনেকটা অনিশ্চিত।
চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমও হারাতে পারেন মনোনয়ন। ওই আসনে দলের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির সাবেক নেতা মনজুর আলমের। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক শেষ পর্যন্ত নওগাঁ-৪ আসনে দলের প্রার্থী নাও হতে পারেন। বয়স ও স্বাস্থ্যগত বিবেচনায় মনোনয়ন নাও পেতে পারেন ‘সাবেক’ ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। একই অবস্থা ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফেরও। জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীকে বয়সের কারণে শরীয়তপুর-২ আসন থেকে এবার প্রার্থী না করার সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।
সিলেট-১ আসন থেকে দলের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেও প্রবীণ নেতা ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিতের নির্বাচন করার আগ্রহ নেই। শেষ পর্যন্ত তার আসনে নতুন মুখ আসছে, নাকি অর্থমন্ত্রীই হতে পারেন প্রার্থী, এ নিয়ে আলোচনা চলছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে এবার মনোনয়ন না দেওয়ার কথা ভাবছে দল। মনোনয়ন হারাতে পারেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুও। দলের খসড়া তালিকায় টুকুর আসনে নাম আছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের। সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খানেরও ঢাকা-১ আসনে মনোনয়ন প্রায় অনিশ্চিত।
সাবেক চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর তিনজনের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং ধর্মমন্ত্রীর নির্বাচনে দলের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন।
আরকেএইচ