ঢাকা রবিবার, ৪ঠা মে ২০২৫, ২২শে বৈশাখ ১৪৩২


আ.লীগের মনোনয়ন ঝুঁকিতে তাঁরা


১৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:১৩

ফাইল ফটো

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তিনশ’ আসনে দলীয় প্রার্থী হতে চার হাজারের বেশি নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এরইমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার কার্যক্রমও শেষ করেছে দলটি। দলীয় প্রার্থীও প্রায় চূড়ান্ত। এখন চলছে শরিকদের সঙ্গে দরকষাকষি। দলটির পক্ষ থেকে এরইমধ্যে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে যিনি জয়ী হবেন তিনিই মনোনয়ন পাবেন। এ বিষয়ে কোন ঝুঁকি নেবে না আওয়ামী লীগ। শরিকদের ক্ষেত্রেও একই নীতি দলটির।

দলটির সূত্রে জানা গেছে, সারাদশেব্যপি ছয় মাস পর পর করা আসনভিত্তিক মোট ৬টি জরিপের ফল এখন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। জরিপে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতেই দেয়া হবে মনোনয়ন। ওই জরিপের ফলাফলেই এবার বাদ পড়তে যাচ্ছেন বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী বেশ কয়েকজন নেতাও। মহাজোটেরও ৫০টির মতো আসনে এবার প্রার্থী পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। দলটির মনোনয়ন বোর্ডের একাধিক সদস্য এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শুধু নিজ দল আওয়ামী লীগের মনোনয়নই নয়, মহাজোট নেত্রী হিসেবে মহাজোটের প্রার্থীও চূড়ান্ত করছেন শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা বলেন, নেত্রী এবার বিভিন্ন আসনে দলীয় মনোনয়নের পাশাপাশি জোটের মনোনয়নও চূড়ান্ত করছেন। ঢাকা থেকে টানা দুবার নির্বাচিত আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন না এবার। আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যকার চরম বিভেদের কারণেই দলের ওই কেন্দ্রীয় নেতা এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন না। সম্প্রতি তার আসনভুক্ত এলাকায় দলীয় কোন্দলে দুটি খুনের ঘটনাও ঘটেছে। ওই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন জাতীয় ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজা। এ ছাড়া তিন মেয়াদে কেন্দ্রীয় কমিটিতে একই পদে থাকা দলের দুই সাংগঠনিক সম্পাদক আছেন, যারা টানা দুই মেয়াদের সাংসদ, তারাও মনোনয়নবঞ্চিত হবেন। তাদের দুজনের আসনেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য দুই নেতা এই প্রথম দলীয় মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন। নিজ এলাকা থেকে মনোনয়নবঞ্চিত দুই সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে একজনকে অবশ্য ঢাকার একটি আসন থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা-১৫ আসনে তার নাম আলোচনায় রয়েছে। মহাজোটের অনেক প্রভাবশালী নেতাও এবার বাদ পড়তে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম নগরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন থেকে জোটের মনোনয়ন হারাতে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী এক নেতা।

ওই আসনে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের একজন। সকল নির্বাচনী জরিপে ওই সাংগঠনিক সম্পাদক জাতীয় পার্টির প্রার্থীর চেয়ে অনেক অনেক এগিয়ে। চাঁদপুরের প্রভাবশালী এক নেতা ও মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য, যিনি এর আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন, আমলা থেকে রাজনীতিতে নাম লেখানো সেই নেতাও এবার দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন। মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্য থেকে সিলেটের প্রভাবশালী এক নেতা এবার মনোনয়ন পাচ্ছেন না। উত্তরবঙ্গের দুজন মন্ত্রীর নাম রয়েছে মনোনয়নবঞ্চিতদের তালিকায়। যদিও তারা
খুবই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মনোনয়ন ধরে রাখতে। যমুনার ওপারের একটি জেলার জ্যেষ্ঠ এক মন্ত্রী, যিনি দশম সংসদের পর থেকে এ পর্যন্ত মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, তিনিও মনোনয়ন পাচ্ছেন না এবার। তার আসনে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন মন্ত্রী যিনি তুখোড় বক্তা হিসেবেও পরিচিত, তার আসনের পরিবর্তন হচ্ছে। নিজ জেলায় তার একজন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাজন মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার বিষয়ে তিনি ইতোমধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দলের ভেতরে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল (অব) মুহম্মদ ফারুক খান বলেন, প্রত্যেক জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের কিছু কিছু প্রার্থী পরিবর্তন হয়। এবারও হবে। এটাই দলের স্বাভাবিক নিয়ম।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সব প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে জোটগতভাবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা যাবে। তিনি বলেন, আমাদের দলীয় প্রার্থী-তালিকার কাজ বলা যেতে পারে ‘অলমোস্ট ক্লোজড’। এখন জোটের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব। এর পর যে সমীকরণ দাঁড়াবে, তা ৪-৫ দিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে।

আরকেএইচ