ঢাকা রবিবার, ৪ঠা মে ২০২৫, ২২শে বৈশাখ ১৪৩২


সিদ্ধান্ত পাল্টালেন ড. কামাল


৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:১১

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দুই দফা সংলাপে সাত দফার প্রধান দাবিগুলোতে ক্ষমতসীন দলের সাড়া না পেয়ে এখন ভিন্ন পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

বুধবার (৭ নভেম্বর) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপ থেকে ফিরে বেইলি রোডের নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষনেতা কামাল হোসেন আন্দোলনের কথাই বলেন।

শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ড. কামাল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত পাল্টালেন ড. কামাল। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে, তাদের সঙ্গে নিয়েই দাবি আদায় করা হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান চেয়েছিলাম, বল এখন সরকারের কোটে। দায়-দায়িত্ব তাদেরই বেশি।’

অন্য আরেক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা আন্দোলনে আছি।’

সংলাপ শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, আপনাদের প্রস্তাব নাকচ করেছেন- এর জবাবে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, সাত দফা আদায়ে আমরা আন্দোলনে আছি তো। কাল (বৃহস্পতিবার) পদযাত্রা হবে। পরশু (শুক্রবার) রাজশাহীতে সমাবেশ। যদি তফসিল ঘোষণা করে, তবে আমরা নির্বাচন কমিশন অভিমুখে পদযাত্রাও করব।’

একই প্রশ্নের জবাবে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই বিষয়টাই আমরা বলেছি। আমরা বলেছি, সংসদ ভেঙে দিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। সংসদ ভেঙে নির্বাচনের কথা আমাদের সংবিধানেই আছে। একই সঙ্গে দুইটি সংসদ থাকবে, এটা তো কোনো নিয়মের মধ্যেই পড়ে না।’

সংলাপ কি ফলপ্রসু হয়েছে, আপনারা কি পেলেন?- এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ফলপ্রসু হলো কি হলো না, এটা এখনই বোঝা যাবে না। কারণ, আমরা বলেছি, এটা অব্যহত আছে।’

কামাল হোসেন দাবি করেন, অর্থবহ নির্বাচনের আশা নিয়েই তারা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংলাপে গিয়েছিলেন। বলেন, ‘আমরা তো চেষ্টা করে যাচ্ছি, করছি, করে যাব। দেশে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ অবস্থার মধ্যে সব কিছু হোক। দায়িত্ব তো সরকারের। বল এখন সরকারের কোটে।’

রাজনৈতিক সংকট নিরসনে চলমান সংলাপের আয়োজন করায় প্রথমে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এই সংলাপ আয়োজন করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আজকের সংলাপে আমাদের জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি নিয়ে সীমিত পরিসরে আলোচনা অব্যহত রাখার প্রস্তাব করেছি।’

‘ইতোমধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলা হয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার এবং ভবিষ্যতে আর কোনো হয়রানিমূলক মামলা দায়ের হবে না, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের আর গ্রেপ্তার করা হবে না বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন।’

আপনাদের সাত দফা দাবির বিষয়ে সংলাপে কী হয়েছে?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কামাল হোসেন বলেন, ‘স্বল্প পরিসরে আমরা আরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি।’

খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে?- এমন প্রশ্নের জবাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দিতে বলেন কামাল হোসেন। জবাবে ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সাত দফার মধ্যে প্রথমটাই হচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সংসদ ভেঙে দেয়া। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবিও রয়েছে। এ বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আমরা প্রস্তাব করেছি যে, ক্ষুদ্র পরিসরে আলোচনা চালিয়ে যেতে।’

বৃহস্পতিবারই তফসিল ঘোষণা- তাহলে আপনাদের অবস্থান কী হবে? এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার সঙ্গে আমাদের এ আলোচনার কোনো সম্পর্ক নেই। তফসিল পরেও ঘোষণা করা যাবে। এটাকে রি-শিডিউল করা যেতে পারে।’

তফসিল দেয়া হলে আপনাদের পদযাত্রার কর্মসূচি হবে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কর্মসূচি দেওয়া আছে।’

মাহমুদুর রহমান মান্না সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে নিষেধ করেছি। এরপরও যদি তারা করেন, নিশ্চয়ই আমরা পছন্দ করব না। আমরা আগেই বলেছিলাম, তফসিল ঘোষণা করলে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে পদযাত্রা করব। বলেছি, এটা দিলেও কিন্তু আমরা মানছি না। যদি তারা শিডিউল ঘোষণা করেন, সেটা ব্যাপার না, রি-শিডিউল আবার ঘোষণা করা যেতে পারে।’

এই সংলাপে আশার আলো দেখছেন কি না?- এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জনগণ যদি আশার আলো দেখে, তাহলেই দেখা হবে।’

আপনারা কি খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি চান? এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সংলাপে এমন কোনো প্রস্তাব দেইনি। সে বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। সেটা আমরা জোর দিয়েই বলেছি খালেদা জিয়া আইনগতভাবে জামিন পাওয়ার যোগ্য।’

আপনারা সংকট নিরসনে সংলাপে আশা দেখছেন কি না? এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা নিয়ে লড়াই করব। আমরা সংলাপকে আমাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবে নিয়েছি। আমরা এখনও বিশ্বাস করি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা উচিত। সরকার যদি সেই পথে না আসে, সরকার যদি আলোচনায় না আসে, তবে সেই দায়-দায়িত্ব তো সরকারের ওপরই বর্তাবে।’