বরিশাল-২ আসনে জটিল সমীকরণে আওয়ামী লীগ

দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে প্রতিবারই বরিশাল -২ আসনে (বানারীপাড়া -উজিরপুর) জটিলতায় পড়তে হয় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তীব্র হওয়ায় এবার সমীকরণ আরো জটিল হয়ে উঠেছে।
২০১৪ সালে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস। অপেক্ষাকৃত দুর্বল জাসদের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে হারিয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এর আগে ২০০৮ সালে তিনি তার নিজ নির্বাচনী এলাকা বরিশালে-১ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অন্য এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় ২০১৪ সালে বানারীপাড়া-উজিরপুরে তার মনোনয়ন নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের একাংশ প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে। অবশ্য নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে বড় কোন বিতর্কের মধ্যে পড়তে হয়নি। সদালাপী হওয়ায় সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনেও সক্ষম হন তিনি। তবে দূরত্ব বাড়ে তৃণমূল নেতাকর্মী সমর্থকদের সঙ্গে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর বিরোধিতা করছে।
এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চান ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহে আলম। ২০১৪ সালে তিনি অপেক্ষমান তালিকায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি। নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতন আন্দোলনের অন্যতম এই নেতা ১৯৯৬ সাল থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। এলাকায় জনপ্রিয়তা থাকলেও এখনো পর্যন্ত নৌকার টিকেট তার ভাগ্যে জোটেনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তালুকদার মো. ইউনুস ও শাহে আলম এর মধ্যে প্রকাশ্য কোনো বিরোধ চোখে না পড়লেও এই দুই নেতার অনুসারী স্থানীয় নেতাকর্মীরা পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছেন।
অপরদিকে দ্বিতীয়বারের মতো এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য বিশিষ্ট সাংবাদিক সুজন হালদার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণ এ আওয়ামী লীগ নেতার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন এলাকার তরুণ প্রজন্ম ও দলের তৃণমূল নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।
প্রসঙ্গত, বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে কেউ যখন রাস্তায় বেরোতে সাহস পাননি তখন বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে সুজন হালদারের নেতৃত্বেই বানারীপাড়ায় গড়ে ওঠে তীব্র গণ-আন্দোলন।
২০০৯ সালে কলেজ শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে সুজন হালদার যোগ দেন সাংবাদিকতায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে দেশব্যাপী তীব্র জনমত গঠনে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেন তিনি। সাহসী ভূমিকা রাখেন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। যে কারণে দলীয় হাইকমান্ডের সুদৃষ্টিতে রয়েছেন তরুণ এ আওয়ামী লীগ নেতা।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র থেকে জানা যায়, বিএনপি যদি নির্বাচনে আসে এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন যদি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে এবার নৌকার টিকেট পেতে পারেন সুজন হালদার।
দিন যত গড়াচ্ছে, চায়ের কাপে উত্তাপ যেন ততই বাড়ছে। সকলের অভিন্ন প্রশ্ন, কে হচ্ছেন এবার বরিশাল -২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী?
এমএ