‘বি চৌধুরীও যোগ দেবেন ঐক্যফ্রন্টে’

জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং সংসদ বাতিলের মতো দাবি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আত্মপ্রকাশ করার আগে দফায় দফায় বৈঠক করেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও বিকল্পধারা সভাপতি অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চে একসাথে দাঁড়িয়ে হাতে হাত ধরে ঐক্যের বার্তা ছড়ানো ড. কামাল ও বি. চৌধুরী।
কিন্তু ভেতরে ভেতরে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে ড. কামাল ও বি. চৌধুরীর মধ্যে শুরু থেকেই টানাপোড়েন চলতে থাকে। নেতৃত্বের প্রশ্নে চলছিল স্নায়ুযুদ্ধ। বিশেষ করে, যখন খবর রটে বিএনপির বেশি আস্থা ড. কামালের ওপর, তখনই প্রথম ধাক্কা খান বি. চৌধুরী। ঐক্যে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বি. চৌধুরী নানা চেষ্টাও করেন। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৪ অক্টোবর বি চৌধুরীকে বাদ দিয়ে বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যকে নিয়ে ড. কামাল হোসেন নাটকীয়ভাবে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ ঘোষণা দেন। এরপর রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন ওঠে যে, বি. চৌধুরী কেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকতে পারলেন না, বা কেন তাকে রাখা হলো না?
ঐক্যফ্রন্ট গঠন হওয়ার পরও এই জোটের নেতারা বি চৌধুরীর সাথে কয়েকবার যোগাযোগ করেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার জন্যও বেশ কয়েকবার আহ্ববান জানান। এছাড়া বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগকেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার দেয়ার জন্য কাদের সিদ্দিকীর বাসায় যান এই জোটের নেতারা।
গত ৩১ অক্টোবর কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, ‘আমি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে থাকব কি না, সেটা ৩ নভেম্বর জানাবো।’ তবে গত ৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ আয়োজিত জেলহত্যা দিবসের আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন। সেদিন সভাপতির বক্তব্যে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছিলেন, ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়ার ব্যাপারে একদিন সময় চাচ্ছি। সোমবার আমি আমার অবস্থান পরিষ্কার করবো। ওই দিন রাতেই বিএনপির কয়েকজন নেতা কাদের সিদ্দিকীর বাসায় গিয়ে বৈঠক করেন।
কথা রেখেছেন কাদের সিদ্দিকী। সোমবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেয়ার ঘোষনা দিয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। নেতৃত্বাধীন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ। সোমবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেন।
বঙ্গবীর বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজন বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি। আমরা গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন চাই, বিশ্বাসযোগ্য একটি নির্বাচন চাই, মানুষের ভোটের নির্বাচন চাই। তাই আনন্দের সাথে আমি আমার দলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করছি যে আজ ৫ নভেম্বর, এই মুহূর্ত থেকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করলাম। দেশবাসীর কাছে আমার প্রার্থনা, আমাদের প্রার্থনা যাতে তারা দেশকে মুক্ত করার জন্য ড. কামাল হোসেনের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে সাহায্য করেন, সহায়তা করেন। আল্লাহ আমাদেরকে সহায় করুন।’
বি চৌধুরীও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘গত ৩ নভেম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে জেলহত্যা দিবসে আমাদের একটি আলোচনা সভা ছিল। সেই সভাতেও আমি বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে আহ্বান করেছিলাম। তিনি আসতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু যখন তিনি শুনলেন ড. কামাল হোসেন প্রধান অতিথি হবেন তিনি আসেননি। এজন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করি না। ঠিক আছে। ৩ নভেম্বর আসেননি, ডিসেম্বরে নিশ্চয়ই আসবেন। সেই প্রত্যাশায় আমরা রইলাম। তবে তার ইচ্ছা যদি হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকুন, তার সন্তান মাহী বি চৌধুরী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে আসুক তাহলে তাকে (বি চৌধুরীকে) বাংলাদেশের মানুষের কোনো প্রয়োজন নাই ।’
আরকেএইচ