ঢাকা শনিবার, ৩রা মে ২০২৫, ২১শে বৈশাখ ১৪৩২


জনমত জরিপে এগিয়ে সুজন হালদার


৩১ অক্টোবর ২০১৮ ০৪:৩৫

নৌকার টিকিট হাতে পেতে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সরেজমিনে বানারিপাড়া-উজিরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-২ আসনের বিভিন্ন জনপদ ঘুরে
এমনই দৃশ্য চোখে পড়েছে।

বরিশাল-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস আনুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগ না করলেও সংসদ সদস্য হিসেবে নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি পার্শ্ববর্তী নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা। ২০০৮ সালে তিনি বরিশালের (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ আসন থেকে নির্বাচন করায় বরিশাল-২ আসন থেকে নির্বাচন করেন তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস। ‌তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি বরিশাল-২ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নীর্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও বিশিষ্ট সাংবাদিক সুজন হালদারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে সৎ আপোষহীন ও সদালাপী হওয়ায় দলীয় কর্মী সমর্থক এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। বিশেষ করে তার প্রতি তরুণ প্রজন্মের নিরঙ্কুশ সমর্থন রয়েছে। প্রার্থিতার বিষয়ে জানতে চাইলে সুজন হালদার বলেন, বানারিপাড়া উজিরপুরের উন্নয়ন নিয়ে তাঁর স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী স্বপ্ন এবং পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনা।

তিনি বলেন, নদী ও খাল বেষ্টিত জনপদ হওয়ায় বানারীপাড়া উজিরপুরের মাটি অনেক বেশি উর্বর। এখানকার মানুষের জীবিকা কৃষি কেন্দ্রিক। তবে তা খুবই সনাতনী পদ্ধতিতে। আমার পরিকল্পনা, এখানে গ্রামভত্তিক বিশেষ অর্থনৈতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা। আর সেটি কীভাবে করবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সুজন

হালদার বলেন, ধরুন বানারীপাড়ার গাভা, নরেরকাঠি ও আলতা গ্রামে অনেক পেয়ারা এবং আমড়া বাগান রয়েছে। ফলনও ভালো।এই পেয়ারা কিংবা আমড়া পেকে গেলে দু-একদিনের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায়। এসব এলাকায় বিসিক ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় পেয়ারা ও আমড়ার জেলিসহ বহুমাত্রিক পণ্য উৎপাদনের ক্ষুদ্র
ও মাঝারি শিল্প গড়ে তোলা যেতে পারে। বিশারকান্দি, সাতলা, ওটরাসহ অনেক এলাকায়ই নদী সংলগ্ন ছোট-বড় খাল-বিল রয়েছে। যদিও এসব এলাকার মানুষ মাছ ও ভাসমান কৃষি কাজ করে চলছে। কিন্তু যদি সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে বৃহৎ বিনিয়োগ করা যায়, তাহলে এখানে কৃষিভিত্তিক বৃহৎ শিল্পাঞ্চল গড়ে উঠতে পারে। যা এলাকার শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত বেকারদের ভালো আয়ের পথ খুলে দিবে।

টেকসই উন্নয়ন নিয়ে কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সুজন হালদার বলেন, অবশ্যই রয়েছে। বানারীপাড়া ও উজিরপুর দুই উপজেলায় পাঁচ হাজার উচ্চশিক্ষিত, দশ হাজার শিক্ষিত ও বিশ হাজার স্বল্প শিক্ষিত মানুষ রয়েছে। যাদের নির্দিষ্ট কোনো চাকরি বা কাজ নেই। তাদের জন্য প্রথমত গ্রাম ভিত্তিক কৃষি অর্থনৈতিক বলয় তৈরি করা; যা স্বল্প শিক্ষিত ও অশিক্ষিত লোকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে। আর যারা উচ্চ শিক্ষিত তাদেরকে ঢাকায় কিংবা বিদেশে সরকারি সহায়তায় বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে। যাতে করে তারা যেকোনো ভালো চাকরির জন্য বিবেচিত হতে পারে।

এলাকার শিক্ষার মান নিয়ে সুজন হালদার বলেন, আমাদের প্রতিটি স্কুল কলেজে মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। সংকট অন্য জায়গায়। মেধাবী শিক্ষক কম। আর প্রাথমিক স্তর কিংবা মাধ্যমিক স্তরে যেখানে একজন শিক্ষার্থীর জীবনের লক্ষ্য স্থির করা উচিত, ভবিষ্যতে সে কী করবে, সে বিষয়ে কোন দিক-নির্দেশনা নেই। আমার কাজ হবে শিক্ষার্থীর মেধা ও পছন্দ দুটি বিষয়কেই গুরুত্ব দিয়ে তাকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়তে উৎসাহিত করা। আমি মনে করি বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা ও জ্ঞান ছাড়া দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি স্তরের শিক্ষা হবে বিষয়ভিত্তিক।

সুজন হালদার বলেন, আমাদের সন্ধ্যা নদী আছে। এটি আমাদের একটি বড় সম্পদ। পৃথিবীর অনেক উন্নত শহরই নদীকেন্দ্রিক। সন্ধ্যা নদীর তীরে যেসব হাট বাজার রয়েছে সেগুলোর মধ্য থেকে একটি বৃহৎ প্রকল্পের আওতায় অন্তত পাঁচটি বিশেষায়িত কৃষি বন্দর স্থাপন করার উদ্যোগ নিবো। যার আশেপাশে কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা থাকবে। উৎপাদিত পণ্য সেখানেই রপ্তানির জন্য প্রসেস করা হবে। যা সরাসরি চট্টগ্রাম কিংবা মংলা বন্দরের চলে যাবে। একটি করে এলাকার অর্থনীতি নতুন মাত্রা পাবে বলে আমার বিশ্বাস । এছাড়াও নদী কেন্দ্রিক পর্যটন সম্ভাবনাকেও আমি গুরুত্ব দিচ্ছি।

উন্নয়নে কোন সময় সীমা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ এটা সত্যি একদিনে সব কিছু সম্ভব নয় তবে বানারীপাড়া উজিরপুরে মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও কর্ম দক্ষতার উপর আমার আস্থা আছে। অসম্ভব স্বপ্নবাজ মানুষ সবাই। প্রয়োজন শুধু স্বপ্ন ও সক্ষমতার সমন্বয়।

মনোনয়ন না পেলে আপনি কি করবেন? জানতে চাইলে সুজন হালদার বলেন, আমার জন্ম এই জনপদে। এখানকার ধুলোবালি, কাদা গায়ে মেখেই আমি বড় হয়েছি। এ জনপদের উন্নয়নের সঙ্গে, বানারীপাড়া- উজিরপুরের মাটি ও মানুষের সাথে আমার সম্পর্ক রক্তের।গভীর আত্মীয়তার। এর সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। আমি এই জনপদের সন্তান, এই জনপদের উন্নয়নে কাজ করব। আমি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। আমি আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করব। দল যাকেই মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করব।

এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণসংযোগ করছেন সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি শাহে আলম। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। ২০১৪ সালে শর্ট লিষ্টে তার নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাননি। এছাড়াও বানারীপাড়া পৌর সভার মেয়র সুভাষ চন্দ্র শীল কে গণসংযোগ করতে দেখা না গেলেও তিনি মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এলাকায় সৎ, বিনয়ী ও দলের ত্যাগী নেতা হিসেবে সুভাষ চন্দ্র শীল এর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

এছাড়াও গণসংযোগ করছেন সাবেক পাট প্রতিমন্ত্রী একে ফায়জুল হকের ছেলে এ কে ফাইয়াজুল হক রাজু, বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেন, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান, ছাত্রলীগ নেতা রুবিনা আক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমানও ব্যস্ত সময় পার করছেন গণসংযোগে।