ঢাকা মঙ্গলবার, ১৪ই মে ২০২৪, ১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


টাকা দিয়ে এমপি হই, ভোট লাগবেনা, এমপি এইচএম ইব্রাহীম (পর্ব-১)


১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৩:২৩

এইচএম এম ইব্রাহিম

নোয়াখালী-০১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) আসনের বর্তমান এমপি এইচ এম ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে বিএনপি জামাতের সাথে শখ্যতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি একটি চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবার এইসব অভিযোগ করেছে স্থানীয়রা। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে আওামীলগি থেকে দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনে ইব্রাহীমকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গোয়েন্দা সংস্থাসহ বিভিন্ন এজেন্সিকে নির্দেশ দেয়া। অভিযোগে আরো বলাহয় প্রায় ৩০ কোটি টাকার বিনিময়ে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদককে ম্যানেজ করে এই মনোনয়ন হাতিয়ে নেয় এইচ এম ইব্রাহীম। সেই সাথে যেনো তেনো উপায়ে কারুচপী করে হলেও এইচএম ইব্রাহীমকে ৭ জানুয়ারীর নির্বাচনে জিতিয়ে আনার গ্যারান্টি দিয়ে রেখেছে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এমন আলোচনায় এলাকায় চলছে তোলপাড়। 

এইচএম ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে এত অভিযোগের পরেও কি করে সে নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পায় সেটি নিয়ে নোয়াখালীর চাটখির সোনাইমুড়ি এলাকায় চলছে আলোচনা সমালোচনা। ত্রিশ< কোটি টাকার বিনিময়ে দলীয় মনোনয়নসহ এমপি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইব্রাহীম এই আলোচনা এখন নোয়াখালীর চাটখিল সোনাইমুড়ির এলাকার সকলের মুখে মুখে। কারন ইব্রাহীমের কর্মীরা তাদের নেতা এইচএম ইব্রাহীম এমপি হয়ে গেছেন এইর নিশ্চিন্তে নিয়ে সবার সাথে দূর্ব্যাবহার করছে বলে জানাযায়।

এইচএম ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে তিনি জামাত-বিএনপি ও জাসদপন্থী, দুর্নীতিবাজ পরিবারের সদস্য। তাছাড়া ইব্রাহীম আওয়ামী লীগের ত্যাগী, পরিশ্রমী ও পদধারী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তার লালিত-পালিত জামাত-বিএনপির লোক দ্বারা ১২০টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে বলে প্রমান রয়েছে। দলীয় নেতা কর্মীদের ওপর পুলিশি হয়রানী ও তার ইন্ধনে জামাত-বিএনপির ক্যাডার দ্বারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর হামলা এবং বিএনপির চেয়ার পার্সন খালেদা জিয়ার সাবেক সামরিক সচিব ২০০৮ সালে পিলখানায় হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত তালিকাভূক্ত ওয়ান্টের আসামী কর্ণেল মশিউর তার ব্যবসায়ীক পার্টনার। এইচএম ইব্রাহীম তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন এম,এন্ড, এইচ টেলিকম লিঃ এর নামে প্রাইম ব্যাংক লিঃ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে সম্পূর্ণ টাকা দুবাইতে কর্ণেল মশিউর এর কাছে পাচার করেছে যার প্রমানও রয়েছে।

প্রয়াত বি.এন.পির সাবেক এম.পি নাসির উদ্দিন পিন্টুর ঘনিষ্ট সহচর গোল্ডেন মনিরের সাথে স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যবসার সাথেও জড়িত এই ইব্রাহীম। এইচ এম ইব্রাহীমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গত সাড়ে ৯ বছর তার নির্বাচনী এলাকায় সরকারের বরাদ্ধকৃত টি.আর কাবিখার ৩৫ কোটি টাকার প্রকল্প আত্বসাৎ করেছেন। সংসদ সদস্য ইব্রাহীম ক্যাসিনো ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, জুয়া ব্যবসা, ইউপি নির্বাচনে নমিনেশন বানিজ্য করেছেন ব্যাপকভাবে।

২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করার পর চাটখিল-সোনাইমুড়ীর জনগনের সাথে সম্পৃক্ততা নাই বল্লেই চলে বিভিন্ন সমাবেশে সংসদ সদস্য ইব্রাহীম নিজে বলেন "আমি আর কখনো এমপি ভোট করব না, এবার আমাকে সুযোগ দেন" এমপি হওয়ার পর কথা আর কাজে কোন মিল নেই।

২০১৮ সালে জয়লাভ করার পর এলাকার জনগন তার কাছে কাছে গেলে উনি বলতেন "আমি জনগনের ভোটে এমপি হয়নি, শেখ হাসিনাকে টাকা দিয়ে এমপি হয়েছি" সাড়ে ৪ বৎসর উনি এলাকাই নেই।

২০২২ সালে ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের প্রার্থীকে হারানের জন্য এমপি ইব্রাহীম নিজে সহযোগীতা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প চাটখিল- সোনাইমুড়ী উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ নিজ দলের ঠিকাদারদের না দিয়ে ৫% টাকার বিনিময়ে মেসার্স সাব্বির এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে যুবদলের দুর্ধর্ষ ক্যাডার সোহেল ভূইয়াঁকে কাজ দেওয়া, চাটখিল-সোনাইমুড়ী উপজেলাতে সরকারের প্রতিটি উন্নয়ন কাজ থেকে ৫% কমিশন আদায় সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে নিজ দলের কর্মীদের কাজী নিয়োগ না দিয়ে ৪০/৪৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে জামাত শিবিরের লোকদের কাজী নিয়োগ দিয়েছেন ইব্রাহীম। ২০০৮ ইং সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি কমরেড নুরুল ইসলাম ও তার ছেলে ইসলাম তমোহর (পুচি) কে পুড়িয়ে হত্যা করা এং তার নির্বাচনী এলাকার মাদক ব্যবসায়ী সাবেক বি.এন.পির দুর্ধর্ষ ক্যাডার দিয়ে ব্যক্তিগত সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরী করে এলাকায় তার আধিপত্য বজায় রাখার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জায়গা দখল সহ সকল অপকর্মের হোতা এই এইচএম ইব্রাহীম।

এইচ এম ইব্রাহিম

নিম্নে এইচএম ইব্রাহীমের কিছু কুকীর্তির বর্ণনা দেওয়া হলোঃ-

১. সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক সামরিক সচিব অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল মশিউরকে ব্যবসায়ীক পার্টনার বানিয়ে ইব্রাহীম এম.পি দীর্ঘদিন যাবৎ নিজের ব্যবসায়ীক কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। ২০০৮ সালে পিলখানায় বিজিবি হত্যাকান্ডে কর্ণেল মশিউরের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু হলে এইচ.এম ইব্রাহীম তার গাড়ী দিয়ে তাকে ফেনী জেলার বিলোনিয়া সীমান্ত দিয়ে ওপারে পার করে দেন। সেখান থেকে তিনি দুবাই পালিয়ে যান। এইচ.এম ইব্রাহীম দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দুবাইতে কর্ণেল মশিউরের কাছে নিয়মিতভাবে পাচার করছে এবং দুবাই গেলে তার সাথে নিয়মিত বৈঠক করেন।

গণতন্ত্র পার্টির সভাপতি নুরুল ইসলাম ও তার ছেলেকে হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি ইব্রাহীম এম.পি জড়িত। যে হত্যাকান্ডের মামলা আদালতে বিচারাধীন। উল্লেখ্য যে, নুরুল ইসলামের পরিবার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ইব্রাহীম এম.পির বিচার চেয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে বিবৃতিও দিয়েছেন।

৩. এইচ. এম. ইব্রাহীম চাটখিল ও সোনাইমুড়ী মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্যে টেন্ডারে কাজ প্রাপ্ত ঠিকাদার সাকিবর এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর মোস্তাফিজুর রহমান থেকে এক কোটি টাকা চাঁদা নিয়ে বর্ণিত টেন্ডারের কাজ ছাত্রদলের দুই নেতাকে প্রদান করে। এ নিয়ে স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসনের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

৪. ইব্রাহীম এম.পি অবৈধ ভি.ও.আই.পি ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, গোল্ডেন মনিরের সাথে স্বর্ণ চোরাচালান, বিদেশে টাকা পাচার করে আমেরিকায় বাফেলয় ১০টি বাড়ী ও বিপুল সম্পদের মালিক বনে যান।

৫. ইব্রাহীম এম.পি নিজ এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য চাটখিল-সোনাইমুড়ী উপজেলার আওয়ামীলীগের প্রবীন ও দুঃসময়ের নিবেদিত নেতাকর্মীদেরকে নির্যাতন, হামলা-মামলা, পুলিশি হয়রানি, টি-আর কাবিখার টাকা লুট, ইউপি নির্বাচনে নমিনেশন বাণিজ্য, সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ড হইতে চাঁদা আদায়, হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পদ দখল, এম পি হওয়ার পরে গুলশানে ক্রয়কৃত নিজ বাড়ীতে ক্যাসিনো, জুয়ার আসর, মদের আসর, অবৈধ নারী সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে প্রচুর অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে।

৬. ইব্রাহীম এম.পির আপন ভাই মোঃ হাসান, সাবেক জেলা প্রশাসক (চট্টগ্রাম), যার বিরুদ্ধে ৭ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারীসহ বহু অভিযোগ রহিয়াছে। যিনি দুর্নীতির কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যৌথ বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন।

৭. ইব্রাহীম এম.পির আপন ভাই মোঃ বেলাল, যিনি বায়তুল মোকাররমে এইচ.এম ইব্রাহীমের বেশ কয়েকটি স্বর্ণের দোকান দেখাশুনা করে। তার বিরুদ্ধে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন পিন্টুর সাথে স্বর্ণ চোরাচালানের জড়িত থাকার বহু প্রমাণ রহিয়াছে।

৮. এইচ.এম. ইব্রাহীম এর ক্যাডার ও সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান হলো ৯নং খিলপাড়া ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সালাউদ্দিন সুমন। যার রয়েছে এইচ,এম. ইব্রাহীম এম,পির সহযোগিতায় টর্চার সেল। যেখানে এম.পির নির্দেশে সে আওয়ামীলীগ এর দলীয় পদধারী নেতাদের অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। বিগত ২৯/১২/২০২২ ইং তারিখে খিলপাড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ এর সভাপতি গোলাম মোস্তফাকে তার বাড়ি থেকে সালাউদ্দিন সুমনের ক্যাডার বাহিনী তুলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে। যা বিভিন্ন জাতীয় টিভি চ্যানেলে ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

এদিকে এ বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিকবার এইচ এম ইব্রাহীমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।  

নতুনসময়/আইএ