জোটগতভাবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে ১৪ দল

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোট। এ জন্য আগামী সেপ্টেম্বর থেকে নির্বাচনি প্রচারে নামবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৪ দল। নির্বাচন ‘ব্যাহত করার যেকোনও ষড়যন্ত্র’ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় জোটের পক্ষ থেকে।
বুধবার (১৯ জুলাই) রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪-দলীয় জোটের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় ১৪ দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি কোনও চাপের কাছে মাথা নত করবেন না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ১৪ দলের নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানান। বৈঠকে নবম, দশম ও একাদশের ধারাবাহিকতায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ১৪-দলীয় জোটগতভাবে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
এ সময় বৈঠকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টি (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলামসহ শরিক দলের একাধিক সদস্য বক্তব্য দেন।
সভা শেষে ১৪ দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
আলোচনার আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর চলমান আন্দোলন এবং বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থানের কথা উঠে আসে। এ ছাড়া দ্রব্যমূল্য, দুর্নীতি ও মাদকসহ নানা বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
আগামী নির্বাচনসহ দেশের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে বলেও সভার আলোচনায় উল্লেখ করা হয়।
সূত্র জানায়, সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের কয়েকটি দেশের নানামুখী চাপ থাকার কথা উল্লেখ করেন। তবে বাংলাদেশ কারও চাপে মাথা নত করবেন না বলে তিনি দৃঢ় অবস্থানের কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন বানচালের জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নির্ধারিত নির্বাচন করতে ১৪ দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা ১৪ দল জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে হলে সাংবিধানিক ধারাও অব্যাহত রাখতে হবে।
সভায় ১৪ দলের নেতারাও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছেন এবং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন। এ সময় আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ দল ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনি প্রচার এবং নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আগস্ট মাস শোকের মাস, শোকের কর্মসূচির ওপরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এরপর থেকেই জোরেশোরে ১৪ দল মাঠে নামবে বলে জানা গেছে।
১৪ দলের সভায় গৃহীত একটি প্রস্তাবে বলা হয়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন অসীম সাহসিকতা, প্রজ্ঞা, সততা ও দক্ষতা নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন বাংলাদেশ সৃষ্টির মূল আদর্শ থেকে জাতিকে বিচ্যুত করার ষড়যন্ত্র চলছে। চক্রান্তকারীরা অপশক্তির সহায়তায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি শক্তির অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপকে উৎসাহিত করছে। একটি চিহ্নিত মহল দেশের সাংবিধানিক সরকার ব্যবস্থা ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের লক্ষ্য সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ও চলমান উন্নয়নের গতিধারাকে ব্যাহত করা। পাশাপাশি চক্রান্তকারীরা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ভণ্ডুল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে।
কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সভায় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রস্তাবে আরও উল্লেখ করা হয়, কেন্দ্রীয় ১৪ দল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। জনগণের স্বার্থ পরিপন্থী কোনো প্রকার অসাংবিধানিক ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোট কখনও আপোষ করবে না। কেন্দ্রীয় ১৪ দল রাজপথে থেকে সকল প্রকার অপশক্তিকে মোকাবিলা করবে। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে বাংলাদেশকে বিনির্মাণের লক্ষ্যে জোটগতভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।
এদিকে সূত্র আরও জানায়, সভায় ১৪ দলের নেতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ অনেকেই নিত্য প্রযোজনীয় দ্রব্যমুল্যের উদ্ধগতি কথা তুরে ধরেছেন। এর জন্য বাজার সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন। এই বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছেন। দ্রব্যমুল্য জনজীবনে সংকট তৈরি করছে এই সংকট দ্রুত করার উপরও তারা গুরুত্ব দিয়েছেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং জনগণের স্বস্তিতে রাখতে সরকার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যপারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।