ঢাকা শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫, ২০শে বৈশাখ ১৪৩২


দলীয় কোন্দল বাড়ছে আওয়ামী লীগে


১৪ অক্টোবর ২০১৮ ২৩:০৪

একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের সময় নিকটবর্তী হওয়ারর সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে ক্ষমতাসীন দলে দলীয় কোন্দল বাড়ছে। এমনকি নিজের দলের লোকদের ঘায়েল করতে কেউ কেউ গোপনে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও ক্যাডারদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। তাদের সহায়তা নিয়ে দলীয় নেতাদের ওপর প্রকাশ্যে হামলার ঘটনাও ঘটছে।

এ অবস্থায় সম্ভাব্য অনেকেই ভোটারদের চেয়ে ক্যাডারদের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছেন। ক্ষমতার মেয়াদের শেষ সময় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের এই ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে দলীয় নীতিনিধার্রকরাও শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিরোধী দল সক্রিয় না থাকায় সরকারি দলের নেতাকমীর্রা দীঘির্দন ধরে ব্যক্তিগত বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিতে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে দলটির তৃণমূল থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে কোন্দল বেড়েছে।

তাদের ভাষ্য, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেগুলোতে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ, অন্তকর্লহ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বতর্মানে এটা আওয়ামী লীগের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত। কারণ, আওয়ামী লীগের এখন কোনো দলগত প্রতিপক্ষ না থাকায় দলটির নেতা-কর্মীদের সময় ব্যয় হয় ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে।

মাঠপযার্য় থেকে গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১০০ আসনে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল রয়েছে। এর মধ্যে কোথাও নেতায় নেতায়, কোথাও এমপির সঙ্গে নেতায়, কোথাও মন্ত্রীর সঙ্গে নেতাকমীর্র দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসনগুলো হচ্ছে দিনাজপুর-১, রংপুর-৫, গাইবান্ধা-৫, বগুড়া-৫, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, নওগাঁ-৩ এবং ৪, রাজশাহী-৫ ও ৬, নাটোর-২ ও ৪, সিরাজগঞ্জ-৪ ও ৫, পাবনা-১, ৪ ও ৫, মেহেরপুর-১, চুয়াডাঙ্গা-১, ঝিনাইদহ-৩ ও ৪, যশোর-১, ২, ৩ ও ৪, নড়াইল-১, খুলনা-২ ও ৫, সাতক্ষীরা-২ ও ৩, বরগুনা-১ ও ২, পটুয়াখালী-৪, ভোলা-২, বরিশাল-৪, ঝালকাঠি-১, টাঙ্গাইল-৩, ৪ ও ৫, শেরপুর-২, ময়মনসিংহ-৩ ও ১০, নেত্রকোনা-১ ও ২, কিশোরগঞ্জ-৪, মানিকগঞ্জ-১ ও ২, মুন্সীগঞ্জ-১ ও ২, ঢাকা-২, ৫, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮, ১৯, গাজীপুর-১, ৩, ৫ নারায়ণগঞ্জ-১, ফরিদপুর-১ ও ২, মাদারীপুর-২ ও ৩, শরীয়তপুর-১, ২ ও ৩, সুনামগঞ্জ-১, ২ ও ৫, সিলেট-১ ও ৪, মৌলভীবাজার-১ ও ৪, হবিগঞ্জ-৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ , কুমিল্লা-১, ৬ ও ৭, চাঁদপুর-২, ৩ ও ৫, লক্ষীপুর-৪, চট্টগ্রাম-৬ ও ১৫, কক্সবাজার-২ ও ৩, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। উল্লেখিত এলাকাগুলোতে প্রায়ই দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে হানাহানির ঘটনা ঘটছে বলেও আওয়ামী লীগের ওই নেতারা স্বীকার করেন।

এদিকে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরে আকস্মিক সংঘাত-সহিংসতা কেন বাড়ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, তার ধারণা অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে মাঠপযার্য় দলটির নেতাকমীর্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে গেছে।

তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের দাবি, কোন্দল দ্বন্দ্ব-সংঘাত হচ্ছে সামাজিক নানা কারণে। আর এ জন্য তিনি দায়ী করেন আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া নতুন নেতাকর্মীদের।

আওয়ামী লীগের প্রথমসারির এক নেতা বলেন, মারামারি বা অপরাধ করে রাজনৈতিক দলে কারও পদ গেছে, এর নজির কম। পদ যায় রাজনৈতিক কারণে। ওই নেতা বলেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, কাদের সিদ্দিকী ও মোস্তফা মহসীন মন্টুর মতো বড় অনেক নেতাকে দল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

সেটা হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। আর দলীয় নেতাকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত এবং কারাবন্দি টাঙ্গাইলের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান রানাকে জেলা আওয়ামী লীগ সাময়িক বহিষ্কার করেছে।

তবে আওয়ামী লীগের অপর একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, দল কঠোর নয় বলে ক্ষমতাসীন নেতারা অপরাধ করলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিষ্ক্রিয় থাকে। কোনো ঘটনা জাতীয়ভাবে আলোচিত হলেই কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইনি পদক্ষেপ নেয়। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগ নেতা সাজ্জাদ আলম শেখ আজাদ হত্যার দীঘর্সময় পরও পুলিশ মামলা নেয়নি। কেননা, এই মামলায় ধমর্মন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের ছেলে মোহিত উর রহমান শান্তকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এ ধরনের আরও অনেক নজির রয়েছে বলে দাবি করেন ওই নেতা।

সবের্শষ গত ৮ অক্টোবর কুমিল্লায় চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় আলকরা ইউনিয়নের ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেনকে হাতুড়িপেটা করে হত্যা করা হয়েছে। একটি মামলায় সাক্ষী দিতে যাওয়ার সময় বাস থেকে নামিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

৯ জুলাই ছুরিকাঘাতে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় আড়ানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মশিউর রহমান বাবু খুন হন। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে ৫ জুন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহিনা সুলতানা ফেন্সিকে (৫৭) খুন করা হয়। ১৮ জুন নেত্রকোনা সদর উপজেলার মৌগাতি ইউনিয়নের ওয়াডর্ স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি হারেছ মিয়া এবং ১৩ মে যশোর জেলা তরুণ লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মনিরুল ইসলাম খুন হন।(সুত্র: যায়যায় দিন)

এসএমএন