ঢাকা শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫, ২০শে বৈশাখ ১৪৩২


ঝালকাঠি-১ আসনে কোন দলে কে পাচ্ছেন মনোনয়ন!


১৪ অক্টোবর ২০১৮ ২২:৩৪

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝালকাঠি ১ আসনে নির্বাচনী হাওয়া গড়ম হয়ে উঠেছে। এবার সরকারী দল আওয়ামীলীগের ২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদি। অপর ১ জন কিছু না বলে সম্পূর্ন নিরব ভূমিকা পালন করছে। তাই কে পাচ্ছেন শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন তা নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে উৎকন্ঠার শেষ নেই।

বিএনপির তিন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে সাবেক এমপি শাহজাহান ওমর এগিয়ে রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে প্রচার প্রচরনা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

এছাড়াও মনোনয়ন দৌড়ে মাঠে আছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত ও ২০০৮ সালে এ আসনে মনোনয়ন পাওয়া রফিকুল ইসলাম জামাল। তবে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নে শাহজাহান ওমরের বিকল্প হিসেবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকতকেই ভাবছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা।

ছাত্রনেতা গোলাম আজম সৈকত বলেন, গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আমাদের নেতা ব্যারিষ্টার শাজাহান ওমর (বীর উত্তম) আইনি জটিলতার কারনে নির্বাচন করতে পারেনি। এবারও যদি এরকম কোন আইনি জটিলতার কারনে উনি নির্বাচন করতে না পারে সে ক্ষেত্রে এ আসনে বিকল্প প্রার্থী হিসেবে আমি একাই আছি।

সৈকত বলেন, দলের হাইকমান্ড থেকে সিগনাল পেয়েই মাঠের প্রচারণায় নেমেছি। আমি তৃনমূল থেকে এখানে এসেছি। দলের বিভিন্ন দায়িত্ব আমি আমানত হিসেবে পালন করেছি। জেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত দলকে শক্তিশালী করার জন্য শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়েছে। দলের জন্য এ পর্যন্ত বহুবার কারাভোগ করিছি। এ পর্যন্ত আমি ১২ টির অধিক মামলার শিকার হয়েছি। সর্বশেষ ম্যাডামের হাজিরার সময় হাইকোর্ট গেটের সামনে থেকে গ্রেপ্তার হয়েছি। দীর্ঘ তিন মাস কারাভোগের পর গত ২০ এপ্রিল জামিনে মুক্তি পাই।

তিনি বলেন, আমরা বিএনপি করি। দল আমাদের বেয়াদবি শেখায়নি। শাহজাহান ওমর সাহেব মনোনয়ন পেলে আমি তার নির্বাচনে সর্বাত্বক সহযোগিতা করব। তবে তিনি মনোনয়ন না পেলে কোন বসন্তর কোকিলের স্থান এ আসনে হবে না। এ আসনের তরুন ভোটাররা আমাকে ভালোবাসে এবং আমাকে চায়। এ আসনের নেতাকর্মী সহ সর্বস্তরের জনগনের সাথে আমার সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঠালিয়া থানা বিএনপির এক নেতা বলেন, রফিকুল ইসলাম জামাল ব্যাবসায়ী মানুষ। দলের কোন পদে তিনি নেই। আন্দোলন সংগ্রামেও রাজপথে ছিলেন না। তাকে নিয়ে বিএনপি ভাবছে না। শাজহান ওমর স্যার নির্বাচন করতে না পারলে আমরা ছাত্রনেতা গোলাম আজম সৈকত ভাইকেই বিএনপির প্রার্থী হিসেবে চাই।

তবে ক্ষমতাশীন দলের বর্তমান সংসদ সদস্য ঝালকাঠি ১ আসনে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি, বজলুল হক হারুন এমপি এলাকায় গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তার দাবি তার উপর প্রধানমন্ত্রীর আস্থা রয়েছে। এবারও এ আসন থেকে তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।

অপরদিকে সাধারন মানুষের অধিকংশ এবং দলীয় অনেকেই ঝালকাঠি ১ আসনে তাদের পছন্দের তালিকায় জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড.খান সাইফুল্লাহ পনির কে পেতে চান। এ নেতা মনোয়ন পেলে আ,লীগে রাজনিতি যেমনি চাঙ্গা হবে তেমনি দলীয় নেতাদেরও হতাশা থাকবে না বলে মনে করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।

এক সময় আসনটি বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত ছিল। কারন সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম রাজাপুরের সন্তান। তার বিপুল জনসর্মন ও জনপ্রিয়তার কারনে এ আসন বিএনপির দূর্গ হিসেবে গড়ে উঠে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সংসদ নির্বাচনে শাহজাহান ওমর আইনী জটিলতার কারনে নির্বাচন করতে পারেননি। তাই এখানে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয় রফিকুল ইসলাম জামালকে।

তবে বিগত দিনে জাতীয় পার্টির সাবেক যোগযোগ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এ আসন থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে শাহজাহান ওমরের এই দূর্গে আঘাত হানতে সক্ষম হন। কারন তিনি ঐ সময় আসনটির যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন। কিন্তু আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পার্শবর্তী পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার সন্তান হওয়ায় জনসম্পৃক্ততা না থাকায় এ আসনে তার জনপ্রীয়তা বেশি দিন ধরে রাখতে পারেনি। যদিও এখনো বেশির ভাগ মানুষ মনে করে এ আসনে বিএনপির সমর্থন আগের মতই রয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুণ পরপর দুবার এমপি হয়ে আওয়ামীলীগের হারানো আসন পূনরুদ্ধার করেন। এবার আসনটিতে বিএইচ হারুনের সাথে প্রথমেই মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে যার নাম শোনা যাচ্ছে তিনি হচ্ছেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মনিরুজ্জান মনির। যিনি দীর্ঘ দিন থেকে মনোনয়ন পেতে জনসংযোগ ও নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন।

১৯৭৩ থেকে এ আসনে আওয়ামীলীগ ৩ বার, বিএনপি ৩ বার ও জাতীয় পার্টি ৩ বার জয়ী হয়। এরমধ্যে ১৯৭৩ সনে ঝালকাঠি ও রাজাপুরকে নিয়ে এ আসনটি গঠন হওয়ায় আওয়ামীলীগের প্রার্থী আমির হোসেন আমু এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সনে রাজাপুর-কাঠালিয়া নিয়ে ঝালকাঠি-১ আসনের নির্বাচন হয়। তখন এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী শাহজাহান ওমর এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ সনে এ আসনে প্রথম জাতীয় পার্টি আঘাত হানে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী জাহাঙ্গির কবির তখন এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সনেও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে পূণরায় জাহাঙ্গির কবির এমপি হয়েছেন। ১৯৯১ সনে আসনটিতে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে শাহজাহান ওমর আবার এমপি নির্বাচিত হয়ে আসেন। ১৯৯৬ সনে আসনটিতে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন নিয়ে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি নির্বাচিত হয়। ২০০১ সনে শাহজাহান ওমর আবার এমপি নির্বাচিত হয়ে ফিরে এসে প্রমান করেন এ আসনে তার একক জনপ্রীয়তা। ২০০৮ সনে বর্তমান বিএইচ হারুন আওয়ামীলীগের এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সনে বিএইচ হারুন এখান থেকে পূনরায় এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি, রেইন্ট্রি হোটেলের মালিক বজলুল হক হারুন এমপি এ আসনে এবার নিজেকে একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে দাবি করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার এ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী দ্বিতীয় কেহ নেই। যিনি ছিলেন ষ্ট্যামফোর্ড ইউনির্ভাসিটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর হান্নান ফিরোজ তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এছাড়া মনিরুজ্জামান মনির কি এ পদের যোগ্য কিনা সেটা আপনারাই বলুন। রাজনীতি ১ দিনে হয়না। আমরা রাজনীতি করে যোগ্যতার ভিত্তিতে এ পর্যন্ত এসছি। ওআইসি থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে আমার সুসম্পর্ক। তাছাড়া এ আসনের ২ উপজেলা চেয়ারম্যান, ১২ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ২ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদকরা আমার। এরাই জনসাধারনের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই আমার সাথে জনগণ আছে। আমি ১০ বছর নিরলস ও নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করেছি।

এ আসনে শাহজাহান ওমরের সাথে বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে অভিমত ব্যাক্ত করে রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, ১/১১’র পট পরিবর্তনের সাথে সাথে আমার এলাকার নেতাকর্মীরা নেতৃত্ব শূণ্য হয়ে পরে। তখন শাহজাহান ওমর নিজেই ঝামেলায় পরায় আমি নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। পরবর্তিতে শাহজাহান ওমর দূর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন। তাই তার বিষয়ে দলীয় হাই কমান্ড ও এলাকাবসি ওয়কেফহাল। আমি তার বিষয়ে এর চেয়ে বেশি কিছু মন্তব্য করতে চাইনা। আমি ১/১১‘র সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সনের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে আওয়ামীলীগ প্রার্থী এমপি বিএইচ হারুনের সাথে হেরে যাই। আমার মনোনয়ন পাবার বিষয়ে আশাবাদি এই কারনে আমি বিগত দিনে নিজের স্বার্থের জন্য দূর্নীতি করে অর্থ সম্পদ করিনি। দলের স্বার্থেই নেতাকর্মীদের জন্য নিজের সাধ্য অনুযায়ী যতটুকু সম্ভব করেছি।