ঢাকা শুক্রবার, ২রা মে ২০২৫, ২০শে বৈশাখ ১৪৩২


বড় বাধা বিকল্পধারা


১৩ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৪২

ছবি ফাইল ফটো

বিএনপির সঙ্গে জোট গড়তে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। নানা শর্ত পাল্টা শর্তের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে ঐক্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে এই দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। তবে বৃহৎ এই জোট গড়তে এখন মূল বাধা হয়ে দাড়িয়েছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার করনীয় নির্ধারনে বিএনপির সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। দিনভর নাটকীয়তা শেষে বৈঠকটি স্থগিত হয়ে যায়। ঐক্যপ্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতাকারী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কারণে শেষ পর্যন্ত বৈঠকটি স্থগিত হয়েছে বলে নেতাদের দাবি। আজ শুক্রবার ওই বৈঠক হওয়ার কথা।

সংশ্লিষ্ট দলগুলোর সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ অক্টোবর আ স ম রবের বাসায় অনুষ্ঠিত হওয়া বৈঠকের সূত্র ধরে টানাপড়েন তৈরি হয়। ওই বৈঠকে আ স ম রব এবং বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নানের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়েছিল। ওই বৈঠকে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যাওয়ার আগে সম্ভাব্য জোটের ঘোষণাপত্রের আগে আসন বণ্টন ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে দাবিদাওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তি করার প্রস্তাব দেন মান্নান। কিন্তু এতে আপত্তি তোলে রব বলেন, ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দিলে হবে না। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি পর্যায়ে গেলে এ বিষয়গুলো নিষ্পত্তি হতে পারে। বিএনপি ও যুক্তফ্রন্টের আরেক দল নাগরিক ঐক্য এবং ঐক্যপ্রক্রিয়া চায় একসঙ্গে আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার পরে এ বিষয়ে আলোচনা করতে। ওই ইস্যুতে অন্য দলগুলোর সঙ্গে বিকল্পধারার টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।

দলগুলোর নেতারা বলছেন, শিগগিরই ওই টানাপড়েন কাটবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ বিকল্পধারার পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বিএনপির কাছে ১৫০ আসন দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়েও তারা সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দিয়েছে, যেগুলো এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় ওঠেনি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দেশের এই দুঃসময়ে বৈঠকটি হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কী কারণে হলো না জানি না। দেশে এ মুহূর্তে বৃহত্তর ঐক্যের প্রয়োজন। অথচ এ সময়ে বৈঠক বাতিল বা স্থগিত হওয়ায় স্বৈরাচারকে আরো উৎসাহিত করা হলো।’

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রের দাবি, বিকল্পধারার ওই প্রস্তাব নিয়ে বৈঠকে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। পরে বৈঠক থেকেই অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে ফোন করে মান্নান বলেন, তাঁর কথা আমলে না নিয়েই যুক্ত ঘোষণা তৈরি হচ্ছে। যুক্ত ঘোষণায় তাহলে লিখতে হবে যে সেখানে আসন ও ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা হয়নি। তখন রবসহ উপস্থিত অন্য নেতারা বলেন, এটি লেখার প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া বৈঠকে যোগ দেওয়া নেতাদের ‘অথরিটি’ আছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা ওঠে। বলা হয়, বিকল্পধারার নেতারা দলের মহাসচিবকে অথরিটি দেননি।

সূত্র মতে, বৈঠক শেষ হওয়ার আগে গণফোরাম নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু প্রস্তাব করেন যে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পরবর্তী বৈঠক হবে বেইলি রোডের বাসায়। তার এই প্রস্কাবে সায় দেন অন্য নেতারাও। সে অনুযায়ী সব ঠিক ছিল। কিন্তু গত বুধবার মেজর (অব.) মান্নান তাঁর দলের প্রধান বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে জানান, এ ধরনের বৈঠকে তিনি যাবেন না। বৈঠকের বিষয়ে বি চৌধুরীকে বেশ নেতিবাচক অনেক কথাও বলেন তিনি। ফলে বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে বৈঠকে যোগদানের জন্য বি চৌধুরী তাঁর দলের পক্ষ থেকে যুগ্ম মহাসচিব মাহী বি চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ফারুককে দায়িত্ব দেন।

সূত্র মতে, ওই ঘটনা জানাজানি হওয়ায় অন্য দলগুলোর মধ্যে নেতিবাচক আলোচনা ও অস্বস্তি তৈরি হয়। মাহীকে অন্যান্য দলের সিনিয়র নেতারা মেনে নেবেন কি না সে প্রশ্নও সামনে আসে। কারণ কথা ছিল ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠক হবে। সংগত কারণেই সেখানে বি চৌধুরী, ড. কামালসহ শীর্ষ নেতারা থাকবেন। কিন্তু মাহীকে দলের পক্ষে দায়িত্ব দেওয়ায় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতারা সকালেই বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেন যে ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠক হবে না।

বৈঠকে মান্নানের অসম্মতির কথা জানতে পেরে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বারিধারায় যান বি চৌধুরীর বাসায়। তিনি বি চৌধুরীকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে মাহী তরুণ নেতা, ফলে তাঁর উপস্থিতিতে বৈঠক কতখানি ফলপ্রসূ হবে, তা বলা মুশকিল। তিনি আকার-ইঙ্গিতে সিনিয়র নেতাদের যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। তবে বি চৌধুরী আশ্বস্ত করেন যে মাহী মাথা ঠাণ্ডা রেখেই বৈঠকে অংশ নেবেন।

সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বৈঠক হবে কি হবে না, তা নিয়ে নানা আলোচনা চলতে থাকে। সন্ধ্যায় দলগুলোর মধ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ডায়ালিসিস চলাকালে গোয়েন্দা পুলিশ হাসপাতালটি ঘিরে ফেলে বলে খবর ছড়ায়।
এরপর মাহী বি চৌধুরী জানান, জেএসডি নেতা তানিয়া রব তাঁকে জানিয়েছে যে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ওখানে পুলিশ গিয়েছিল, তাই বৈঠকটি স্থগিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তাঁর অফিসে নাকি পুলিশ গেছে। আমি বললাম, পুলিশ গেছে সন্ধ্যা ৬টায়, কিন্তু তাতে রাত ৯টার বৈঠক স্থগিত হবে কেন? বরং বৈঠক করে আমরা ওই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে পারতাম।’

ঐক্যপ্রক্রিয়ার সদস্যসচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরী বৃহত্তর ঐক্যের পক্ষে একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতার কারণে তিনি অফিস থেকে বেরুতে না পারায় বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে।

আরকেএইচ