সংস্কারপন্থিদের দলে ভেড়াচ্ছে বিএনপি

ওয়ান-ইলেভেনের 'সংস্কারপন্থি'সহ বিভিন্ন সময়ের দল থেকে বহিস্কার হওয়া নেতাকর্মীদের বিএনপিতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আগামী ১৫ অথবা ১৬ অক্টোবর গুলশান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের দলে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় তাদের দলে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম শুরু করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করার আগেই দলকে ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। এরই অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলছুট এসব নেতাকে বিএনপিতে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতাদের মধ্যে অনেককেই দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। অন্যদেরও ফিরিয়ে নেওয়া হবে। সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার জন্যই দল এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিএনপিদলীয় সূত্র জানায়, 'সংস্কারপন্থি' অভিযোগে দলের বাইরে অবস্থানকারী নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেডএ খান এবং মোফাজ্জল করিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহ মো. আবুল হোসাইন, সাবেক হুইপ ও পিরোজপুর জেলার সাবেক সভাপতি সৈয়দ শহীদুল হক জামাল, সাবেক হুইপ রেজাউল বারী ডিনা, সাবেক সাংসদ ও চাঁদপুর জেলা সাবেক সভাপতি এসএ সুলতান টিটু ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হায়দার খান, সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, সাবেক সংসদ ও দলের বরগুনা জেলার সভাপতি নূরুল ইসলাম মণি, সাবেক সাংসদ শামীম কায়সার লিঙ্কন, বগুড়ার সাবেক দুই সাংসদ ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ও জিএম সিরাজ, সাবেক সাংসদ মোশাররফ হোসেন মঙ্গু, বরগুনা জেলা সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ ইলেন ভুট্টো প্রমুখ। তবে তাদের মধ্যে সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেনকে দলে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে না। অন্য সবাইকেই দলের কার্যক্রমে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পৃক্ত করা হবে।
দলকে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তুলতে বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় দল থেকে বহিস্কৃত নেতাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া বেশ কিছুদিন ধরেই চলমান ছিল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দল থেকে বহিস্কৃত এসব নেতার একটি একটি তালিকা তৈরি করে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
এ তালিকায় রয়েছেন ছাত্রদলের 'সোনালী অতীত' হিসেবে পরিচিত সানাউল হক নীরু। আরও রয়েছেন পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও তিনবারের পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টু, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ এম এ হান্নান, ঢাকা মহানগর জাসাস দক্ষিণের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদারসহ শতাধিক নেতা।
একটি সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে থেকেই 'সংস্কারপন্থি', বহিস্কৃত ও অভিমানে নিষ্ফ্ক্রিয় হয়ে পড়া নেতাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গুলশান কার্যালয়ে দলের সাবেক দুই এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল ও জহির উদ্দিন স্বপনের সঙ্গে কথা বলেন খালেদা জিয়া। অতীতের সব ভেদাভেদ ভুলে তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করতে বলেন তিনি। পর্যায়ক্রমে সংস্কারপন্থি অন্য নেতাদেরও ডাকা হবে- এমন ইঙ্গিতও দেওয়া হয় ওই সময়। পরে সাবেক সাংসদ ও দলের সুনামগঞ্জ জেলা সভাপতি নজির হোসেনকে কার্যালয়ে ডেকে এনে তার সঙ্গেও কথা বলেন খালেদা জিয়া। এরপর দলের বহিস্কৃত সাবেক দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তির বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। পরে এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে আর কোনো কার্যক্রম না থাকলেও খালেদা জিয়া পর্যায়ক্রমে সব নেতার সঙ্গেই যোগাযোগ রাখেন। এরই মধ্যে কারাবন্দি হন তিনি।
আরকেএইচ