ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১লা মে ২০২৫, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩২


আজ শক্তি-সামর্থ্যের জানান দিতে চায় বিএনপি


৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২২:১৯

দুই দফা পেছানোর পর অবশেষে বিএনপি রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করতে যাচ্ছে। শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ‘২২ শর্তে’ দলটিকে জনসভা আয়োজনের অনুমতি দেয়। এরপর শুরু হয় সমাবেশের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম। রাতভর সোহরাওয়ার্দীতে চলে মঞ্চ নির্মাণের কাজ।

শনিবার দুপুরে অনুমতি পাওয়ার পরই দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভাস্থল পরিদর্শন করেন। সেই থেকেই প্রস্তুতির কার্যক্রম শুরু হয়।

তিন দিনের কাজ করতে হয়েছে ৭-৮ ঘণ্টায়। অবশ্য ইতোমধ্যেই মঞ্চের কাজ শেষ। ৫০ ফুট বাই ২৫ ফুট মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানান,বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ।

তিনি জানান, সমাবেশের শুরুতে সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পযর্ন্ত গান-বাজনা চলবে। গানের মধ্যে দেশাত্মবোধক এবং বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে গান থাকবে। বেলা ২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে জনসভা শুরু হবে।

বিএনপি সূত্র জানায়, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেবেন।

দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই জনসভায় বিএনপি বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ঘটিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করতে চায়।

বিএনপির একটি সূত্র বলছে, বিএনপি সোহরাওয়ার্দীর জনসভা থেকে সরকার, দেশবাসী ও দলের নেতাকর্মীদের কিছু বার্তা দেবে। ‘নিরপেক্ষ সরকারের’ অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতি কয়েক দফা দাবি ও দেশবাসীর প্রতি ১২টি লক্ষ্য (অঙ্গীকার) ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি আগামীদিনের পথচলা ও দাবি আদায়ের সম্ভাব্য আন্দোলন নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের দেওয়া হবে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও। জনসভা থেকে ‘বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য’র ব্যাপারে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বিএনপি নিজেদের অবস্থানও তুলে ধরবে।

সমাবেশ থেকে বিএনপি সরকারের কাছে যে দাবি তুলে ধরতে পারে, সেগুলো হচ্ছে- ১. জাতীয় সংসদ বাতিল করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা; ২. খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার। সকল বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফল প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব ‘রাজনৈতিক’ মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেওয়া, পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার না করা, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী-সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা ‘হয়রানিমূলক’ মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি; ৩. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা; ৪. ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা; ৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণে কোনো ধরনের বিধিনিষেধ ছাড়াই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা; ৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ এবং ৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা।

ঢাকা মহানগর দক্ষিনের এক নেতা জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপির পাশাপাশি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো আলাদাভাবে এ জনসভাকে কেন্দ্র করে প্রস্তুতি নিয়েছে। পাশাপাশি ঢাকা জেলা ও আশেপাশের নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল থেকেও বিএনপির নেতাকর্মীরা জনসভায় অংশ নেবেন।

আজকের জনসভা হবে বিএনপির এ মাসের দ্বিতীয় আয়োজন। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে দলটি নয়াপল্টনে জনসভা করেছিল।

আইএমটি