ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ১লা মে ২০২৫, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩২


ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবে ১৪ দল


৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৮:২৩

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে কোন ধরণের ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও নাশকতার পরিকল্পনা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ নেত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নেতারা।

শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চের কাজী বশির আহম্মেদ মিলনায়তনে ১৪ দলের এক কর্মী সমাবেশে এই ঘোষণা দেন তারা।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, আজকে যখন ২০ দলীয় জোট জাতির সামনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে তখন মনে হয় ভূতের মুখে রাম নাম শুনছি। নির্বাচনের আগে যুক্তফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে। জনগণ তাদের সাথে নেই।

বিএনপি জোটের আন্দোলন প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, তাদের আন্দোলন করার ক্ষমতা নেই। ওরা আন্দোলনের নামে রেল লাইন উপড়ে ফেলবে। তারা যাতে এগুলো না করতে পারে এজন্য সবাইকে মাঠে থাকতে হবে। তারা রাস্তাঘাটে নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে, এজন্য তাদের রাস্তা থেকে তুলে দিতে হবে। তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম প্রতিহত করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে জোট মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ওরা চেয়েছিল আমাদের ১৪ দলের এই সমাবেশ ভন্ডুল করতে। আমরা যাতে এই সমাবেশ না করতে পারি সেজন্য তারা সমাবেশ ডেকেছিল। কিন্তু আজকের এই সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এখন ১৪ দলের নেতাকর্মীদর ঘরে বসে থাকার উপায় নেই। সবাইকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্বকাপে মেসি নেইমার গোল মিস করেছে। কিন্তু আগামী জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা কোন গোল মিস করবেন না। ১৪ সালের জ্বালাও পোড়াও এবার আর মেনে নেয়া হবে না। বিএনপি জামাতকে কোন ধরণের ছাড় দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে নাসিম বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই হবে। আর নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়ে শেখ হাসিনা আবার সরকার গঠন করবেন। এটা শুধু আমরা বলছি না, এটা এখন বিশ্বনেতারাও বলছেন।

তিনি বলেন, আমাদের এখন দরকার ঐক্যবদ্ধ থাকা। আমরা প্রমাণ করেছি, আবার প্রমাণ করে দেব শেখ হাসিনার বিকল্প এই দেশে নেই।

সমাবেশে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, অনেকেই বলছেন আমরা পাল্টাপালিট সমাবেশ করছি। আমরা পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করছি না। যারা অনুমতি ছাড়া রাস্তায় নামতে পারে না, তাদের সাথে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করা যায় না।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন বানচালের জন্য, প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা ঐক্য করেছে। তাদের সেই ষড়যন্ত্র সফল হবে না। আগমী নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে। আগামীতেও আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল মিলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো।

তিনি আরো বলেন, যদি আবার আগুন সন্ত্রাসের সৃষ্টি হয়, যদি আবার মানুষ হত্যা করা হয়, নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করা হয় তাহলে এবার আর জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না।

আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর আরেক সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, তারা ঐক্য করেছে, কিসের ঐক্য। তারা বাঘ মারার ডর দেখাচ্ছে। আজম খানের গানে আছে, বাঘ মারতে যামু, আমি আর মামু’। বাঘ মারতে যাওয়ার ডর আমাদের দেখিয়ে লাভ হবে না। আগামী ইলেকশন সময় মত হবে। বানচাল করতে পারবে না, যেমন পারে নাই ২০১৪ সালে।

জাতীয় পার্টি জেপি’র চেয়ারম্যান ও পানি সম্পদ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, সামনে নির্বাচন আসছে, যথা সময়েই নির্বাচন হবে। নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। নির্বাচনের বিকল্প কিছু হতে পারে না। নির্বাচনের বিকল্প যা হয়, তাতে মানুষের কল্যাণ হয় না। যা ১/১১ সময়ে প্রমাণিত হয়েছে। ষড়যন্ত্রের ডাল ভেদ করে সঠিক সময়েই নির্বাচন হবে।

জাসদ একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যারিষ্টাররা এক হয়ে রাজনীতিতে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত শুরু করেছেন। ড. কামাল হোসেন, বি চৌধুরী, মান্না সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করছেন। ১৪ দলের নেতাকর্মীরা যে কোন ষড়যন্ত্র চক্রান্ত প্রতিহত করবে।

জাসদের অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আকতার বলেন, দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতার উপর যখনই আঘাত এসেছে, তখনই ১৪ দল লড়াই করে তা রক্ষা করেছে। আগামীতেও জাতীয় ঐক্যের নামে যারা ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করছে তাদের প্রতিহত করবে ১৪ দল। তিনি বলেন, বি চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন হচ্ছেন ষড়যন্ত্রকারী চক্র। নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করা হলে তাদের প্রতিহত করা হবে।

জাতীয় ঐক্যের নেতাদের সমালোচনা করে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, জাতীয় ঐক্যের নেতারা বসন্তের কোকিলের মতো। যখনই বসন্ত ভাব দেখেন, তখনই তারা কুহু কুহু ডাক দেন। ড. কামাল হোসেন, বি চৌধুরীরা হচ্ছেন ১/১১ মাইনাস টু ফর্মুলার নায়ক। সে সময়ে ব্যর্থ হয়ে তারা আবার জোট গঠন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জাতীয় ঐক্যের সাথে ঐক্য আছে, কিন্তু জাতি নেই। রাজনীতিতে প্রত্যাখ্যাত কিছু নেতারা জোট গঠন করে দেশের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ওরা নির্বাচন বন্ধের ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু ১৪ দলের নেতাকর্মীরা তাদের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবেই।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, রাজনীতিতে হতাশাগ্রস্ত, রাজনীতিতে নিক্ষিপ্ত, জনবিচ্ছন্নরা একত্রিত হয়ে জোট গঠন করে দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া এবং পলাতক তারেক রহমানকে রক্ষা করতে চাইছেন। দেশে কোন সহায়ক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে। সেই সরকারের প্রধান থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কারো দাবি মেনে নেওয়া হবে না।

সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম, ন্যাপের ইসমাইল হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন, বাসদের আহ্বায়ক রেজাউর রশীদ খান, গণআজাদী লীগের এসকে সিকদার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, পেশাজীবীদের মধ্যে নিম চন্দ্র ভৌমিক প্রমুখ।

এমএ