মাকে নিয়ে পুত্রের রাজনৈতিক কৌশল

এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে প্রায় আট মাস ধরে কারাগারে আছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। এরইমধ্যে ঘনিয়ে আসছে একাদশ জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে খালেদা জিয়া যেকোনো শর্তে মুক্তি পেতে রাজি আছেন। নির্বাচনে না যাওয়ার শর্তেও আপত্তি নেই খালেদার।
তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশলী বিএনপি। খালেদা জিয়ার পুত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে। তারেক রহমান মনে করছেন, নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি লাভের বিষয়টি মুখ্য নয় বরং তিনি জেলে থাকলেই রাজনৈতিকভাবে লাভ হবে বিএনপির।
এতিমখানা দুর্নীতি মামলা হাইকোর্টে অনিষ্পন্ন অবস্থায় আছে। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে এই মামলা নিষ্পত্তি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট যা আগে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু এই মুহূর্তে হাইকোর্ট বন্ধ রয়েছে, ১ অক্টোবর সোমবারের আগে হাইকোর্ট খুলবে না।
হাইকোর্ট খোলার পর এই মামলা বিচারপতি এনায়েতুর রহিমের দ্বৈত বেঞ্চে উঠবে। এই বিষয়ে বিএনপির কৌশল হচ্ছে, জিয়া এতিমখানা মামলাটির বিচারকাজ বিলম্বিত করতে করতে ৩১ অক্টোবর পার করে দেওয়া। এর পাশাপাশি বেগম জিয়ার দণ্ড মওকুফের জন্য পিটিশন করারও পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এই মামলায় দণ্ড মওকুফ হয়ে গেলে খালেদা জিয়ার সামনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ভাল সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এতিমখানা দুর্নীতি মামলার পাশাপাশি খালেদার জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাও আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে এই মামলার শুনানিতে দীর্ঘদিন ধরে হাজিরা দিচ্ছেন না খালেদা জিয়া। এমনকি কারাগারে আদালত স্থাপন করার পরও খালেদা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে যাচ্ছেন না। এক্ষেত্রেও বিএনপির আইনজীবীরা চেষ্টা করছেন, এই মামলাটিতে যেন কোনো ভাবে রায় না হয়। কারণ সংশোধিত আরপিও অনুযায়ী, যেকোনো আদালত থেকে দণ্ডিত হলেই কোনো ব্যক্তি আর নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু আদালত কর্তৃক খালেদার অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ আসায় তাঁর অনুপস্থিতির কৌশলটিও কার্যকারিতা হারাতে বসেছে। তাই মামলাটিকে বিলম্বিত করার কৌশলে আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে আবার হাইকোর্টে যাবে বিএনপি।
বিএনপির আইনজীবীরা মনে করছেন, বিভিন্ন মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে কোনো চাপ নেই। বরং তাকে নির্বাচনের জন্য যোগ্য ঘোষণা করা হলো এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি।
এ মুহুর্তে তারেক রহমান মনে করছেন, মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে কারারুদ্ধ খালেদা জিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী। খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারলে ‘খালেদা জিয়াকে মুক্তির জন্য ভোট দিন’ এমন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ক্যাম্পেইন করতে পারবেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাই খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য অনুমতি পেলে তাকে পাঁচটি আসনে মনোনয়ন দিয়ে জয়যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। বিএনপি বিশ্বাস করে, তাদের নেত্রী নির্বাচনে দাঁড়ালে নির্বাচনে একটি জোয়ার আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। বিএনপি হয়তো বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছে, কিন্তু খালেদা জিয়া নির্বাচন করলে সবকিছুই জাদুকরী ভাবে বদলে যাবে বলে মনে করে দলটি।
এমন ধারণা থেকে বিএনপি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চলমান মামলাগুলোকে যেকোনো ভাবে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত বিলম্বিত করার রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছে। কারণ ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন আর তফসিল ঘোষণার পর দায়িত্ব নেবে নির্বাচনকালীন সরকার। তাই ৩১ অক্টোবর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত খালেদা জিয়া যদি আর কোনো মামলায় দণ্ডিত না হন এবং হাইকোর্টে যে মামলাটি চলমান তার নিষ্পত্তিও যদি না হয় তাহলে খালেদা জিয়া নির্বাচনে যেতে পারবেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে প্রার্থী করে জনগণের আবেগকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লোটাই এখন বিএনপির মূল কৌশল।
এমএ