ডাকসুতে কেন এসেছিল বহিরাগতরা?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি (সহ-সভাপতি) নুরুল হক নুরসহ ছাত্রদের ওপর হামলার ইন্ধনদাতা হিসেবে বারবার খোদ ডাকসু ও ছাত্রলীগের পদধারী নেতাদের নাম উঠে আসছে। তবে তারা বরাবরই দাবি করে আসছেন, ভিপি নুর ডাকসুতে বহিরাগতদের নিয়ে এনেছিলেন। তাদের কারণেই সেখানে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
গত রোববার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর পৌনে ১টার দিকে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ও তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। তবে হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই হামলায় নুরসহ অন্তত ৩৪ জন আহত হন। হামলায় আহত ভিপি নুরসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মোট ৮ জন ভর্তি রয়েছেন। তবে জানা গেছে, আহতদের অধিকাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) সূত্র ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হামলায় আহত হয়ে বর্তমানে ঢামেকে মোট আটজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের মধ্যে নুরুল হক নুর ডাকসুর ভিপি। আহত সোহেল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গুরুতর আহত তুহিন ফারাবী রাজধানীর চার্টার্ড ইউনিভার্সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। একই সঙ্গে, তিনি বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক। আহত আমিনুল নুরুল হক নুরের আপন ছোট ভাই। তিনি বরিশালের একটি কলেজের শিক্ষার্থী।
চিকিৎসাধীন মেহেদী হাসান (২৪) ঢাকা কলেজের মাস্টার্স, নাজমুল হোসেন (২১) একই কলেজের গণিত বিভাগের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ এবং আরিফুল ইসলাম (২৩) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।
ঢাবি শিক্ষার্থীদের একাংশের অভিযোগ, এসব বহিরাগতদের উসকানিতেই ওইদিন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
নুরদের ওপর হামলার বিষয়ে ডাকসুর জিএস (সাধারণ সম্পাদক) ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী অভিযোগ করেন, ওইদিন সকাল থেকে বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসুতে জড়ো হন নুর। এসময় তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র, রড ও লাঠি ছিল। পরে ডাকসু ভবনের ওপর থেকে নুরের নেতৃত্বে তারা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন।
তবে বহিরাগতদের হামলা ও জড়ো হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ভিপি নুর। পাল্টা তিনি বলেন, ডাকসুর ভিপি-জিএসের রুমে সারাদেশের ছাত্র-জনতা আসে। ডাকসুর জিএস (গোলাম রাব্বানী) ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সেখানে সারাদিন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ নিয়ে আসতেন। তখন কেউই বহিরাগত নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। আর এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও কিছু নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ওপর লাগাতার হামলার পর আমার সঙ্গে আমার সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছিল। আমিসহ তাদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সন্ত্রাসের পরিচয় দিয়েছে।’
হামলার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমরা এই ঘটনা থামানোর জন্য চেষ্টা করেছি। আমি আর আমাদের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ডাকসু ভিপির রুমে গিয়েছি যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। কিন্তু সেখানে বহিরাগতরা ছিল। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য সে নিজেই (নুরুল হক নুর) দায়ী।’
ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নতুনসময়/আইকে