ঢাকা মঙ্গলবার, ১৩ই মে ২০২৫, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩২


মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলন আজ, চোখে ঘুম নেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের


৩০ নভেম্বর ২০১৯ ১২:৪১

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে পরিবর্তনের হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থীদের চোখে এখন ঘুম নেই। মহানগর উত্তর-দক্ষিণের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতমধ্যেই শুরু হয়েছে নেতৃত্বের যাচাই-বাছাই। ৩০ নভেম্বরের এই সম্মেলনকে সফল করতে কেন্দ্রীয় নেতারাও সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছেন। ঢাকার অলিগলি-রাজপথ নেতৃবৃন্দের ছবি সম্বলিত রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন ও পোষ্টারে ছেয়ে গেছে।

রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, মিরপুর,পল্লবীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাত জেগে নেতাকর্মীরা সম্মেলন সফল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে হোটেল রেস্তোরাঁয়, দলীয় কার্যালয়সহ সব জায়গাতেই এখন কমিটি নিয়ে নানা আলোচনা। কার হাতে দেওয়া হচ্ছে ঢাকার দুই অংশের দায়িত্ব সেটাই এখন দেখার বিষয়।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে,আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতমধ্যেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দের সাংগঠনিক দক্ষতা ও যোগ্যতা যাচাই বাছাই করে কমিটি পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তার ইঙ্গিতেই মহানগরের ত্যাগী, অভিজ্ঞ ও ক্লিন ইমেজের নেতারা আশায় বুক বেধে ব্যাপক গণসংযোগে নেমে পড়েছেন।

বিগত ২০১৬ সালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে সিটি করপোরেশনের সীমানা অনুযায়ী দুই ভাগে বিভক্ত করে মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান কমিটি দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল-কোন মহলকেই সন্তুষ্ট করতে পারেনি। ব্যর্থতায় পরিপূর্ণ বর্তমান কমিটির ওপর কেন্দ্রীয় ও তূণমূলের নেতা-কর্মীরা আস্থা রাখতে পারছেন না।

তাছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসাবে বিতর্কিত নেতাদের নেতৃত্বের বাহিরে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন, তাতে তৃণমূল আরো বেশি আশাবাদী হয়েছেন যে, পরিচ্ছন্ন কর্মীবান্ধব নেতাদের হাতেই আগামীর নেতৃত্ব আসতে যাচ্ছে।

ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হিসাবে প্রার্থী হিসেবে নিজেদের নাম প্রচার করে যাচ্ছেন অনেকেই। সভাপতি হিসেবে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নাম রয়েছে। এছাড়া বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এমপি’ও ঢাকা উত্তরের সভাপতি প্রার্থী।

এ ছাড়া বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ বজলুর রহমান অন্যতম সভাপতি প্রার্থী। তিনি নেতৃবৃন্দের কাছে পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত। কেন্দ্রেও তার গ্রহণযোগ্য অনেক বেশি। দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর কর্মীবান্ধব এই নেতার অবস্থান অনেক শক্ত।

আরেক সভাপতি প্রার্থী বর্তমান কমিটির সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন, তিনিও সভাপতি প্রার্থী হিসাবে নিজেকে প্রচার করে যাচ্ছেন।

সাধারণ সম্পাদক পদে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির নাম ব্যাপকভাবে আলোচনায় রয়েছে। ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থায় পৌঁছানো পর্যন্ত রাজনীতিতে তার কোন দুর্নাম নেই বললেই চলে।৭৫'র পরবর্তী সংকটময় মূহুর্তে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এস এম মান্নান কচি। তিনি দেশ রত্নের একজন প্রহরী হিসেবে জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারন করে কাজ করে করে যাচ্ছেন। এক সময়য়ের রাজপথ কাঁপানো এই ছাত্রনেতা তৈরী করেছেন হাজারো হাজার নেতাকর্মী। আসন্ন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এি-বার্ষিক সম্মেলনে তার দলের প্রতি অবদান কে চিন্তা করে এস এম মান্নান কচি কে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে দেখতে চায় তৃণমূল আওয়ামীলীগ। দলিয় প্রধান শেখ হাসিনার নিদের্শে তিনি ১৯৮৩-৮৪ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর মিরপুর থানা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।১৯৮৬-৮৯ পর্যন্ত অবিভক্ত ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালণ করেন। ১৯৮৯-৯১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্বে থাকার পর বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পান মান্নান কচি। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কার্যকরী সদস্য হয়ে ২০০২ সালে ত্রান ও পূর্ণবাসন সম্পাদক পদ লাভ করেন। বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তৃণমূল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তার রয়েছে গভীর সম্পর্ক।

এছাড়া, মহানগর উত্তরের বর্তমান অর্থ সম্পাদক ও জাতীয় কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াকিল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসানও এ পদে প্রার্থী রয়েছেন।

অপরদিকে, ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম। তিনি আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত নেতা। তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীও হয়েছেন। দক্ষিণের রাজনীতিতে তার প্রভাব অনেক আগে থেকেই। সভাপতি হিসেবে তার নাম খুব জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া, দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে আবু আহম্মদ মান্নাফী, আবুল বাশার ও আওলাদ হোসেনের নামও প্রচার হচ্ছে।

এছাড়াও রয়েছেন মেয়রপুত্র বর্তমান দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। পিতার অনুসারী পুত্র আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত আছেন। এছাড়া, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসাবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণের অনেক পরীক্ষা তিনি দিয়েছেন। সভাপতিপদে তিনি একজন শক্ত প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে। প্রচার-প্রচারণা যাই হোক না কেন, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।
মহানগর নেতৃত্বে কে বা কারা আসছেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ এর নাম আসছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের গত কমিটির সাংগঠনিক নেতৃত্ব নির্বাচনের অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কর্ণেল (অব.) ফারুক খান বলেন, আমি মনে করি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিবর্তন আসবে।

কারণ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারেননি। তিনি জানান, দুই অংশের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপত্যাশী অনেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। তাদের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক নেতাও আছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর এক সদস্য জানান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা এখন আগের মতো নেই।
এর কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রাথমিকভাবে তাদের ধারণা, আগের ধারাবাহিকতায় নেতৃত্বে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় নেতাদের উপস্থিতি নেই। তাই শূন্যতা পুরণ করতে বিকল্প নেতৃত্বের সন্ধান করছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সে ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় ঘুরেফিরে আসছে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নাম। তিনি সরকারে নেই, সংসদ সদস্যও নন। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ সভাপতির সম্ভাব্য তালিকায় আছে তার নাম।

অন্য অংশে বিবেচনায় আছেন সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন। তবে সব কিছু নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর।