ঢাকা শনিবার, ১৮ই মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


যুবলীগে কি সৎ নেতৃত্ব আসছে?


২১ নভেম্বর ২০১৯ ১০:০০

ছবি সংগৃহীত

‘সৎ ও প্রতিশ্রুতিশীল’ নেতৃত্ব খুঁজছে যুবলীগ। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো কর্মকাণ্ডে বড় ধাক্কা খেয়েছে দলটি। দলটি খোঁজছে সেই নেতৃত্ব যে নেতৃত্ব সংগঠনকে যুব সমাজের অনুসরণীয় সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।

সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড যুবলীগের জন্য এমন নেতৃত্ব খুঁজছে, যারা ভাবমূর্তি সংকটে পড়া সংগঠনের সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম হবে। এজন্য পারিবারিক ও রাজনৈতিক ভালো অবস্থান ও ক্লিন ইমেজ রয়েছে, এমন ব্যক্তিত্ব বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। যারা ক্ষমতার কাছে থেকেও ক্যাসিনোসহ দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে দূরে রেখেছেন।  দলের সভাপতি শেখ হসিনা নিজেই বিভিন্ন মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এবার সংগঠনে স্থান পাবেন পরিচ্ছন্ন ইমেজ, দক্ষ সংগঠক, ত্যাগী নেতা। 

যুবলীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, ইমেজ সংকটে পড়া যুবলীগের নতুন দায়িত্বে যারা আসছেন, তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে নিজেদের প্রমাণের বিষয়টি। ‘দায়িত্বশীল আর কর্মীবান্ধব নেতৃত্বে’র যে অভাব গত কয়েক বছরে তৈরি হয়েছে, সেই শূন্যতা পূরণে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে তারা, সেটিও মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

তবে ৫৫ বছরের বয়সের সীমারেখা থাকায় অবধারিতভাবে যুবলীগের নেতৃত্ব যাচ্ছে অপেক্ষাকৃত তরুণদের হাতে।  একই সঙ্গে ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে কি না-সেটিও বড় ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়াবে এবার। 

দীর্ঘ ৭ বছর পর আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সম্মেলন হতে যাচ্ছে।  এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সম্মেলনে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন তিনি।  সম্মেলনের প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।  দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে মিলনায়তনে। এই পর্বেই ঘোষণা হবে যুবলীগের নতুন দুই কাণ্ডারির নাম।

আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সূত্র বলছে, এবার যুবলীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।  এজন্য কারো সেভাবে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই।  তবে অনেকে বিভিন্ন মাধ্যমে নিজে পদ প্রত্যাশী হিসেবে প্রচার করছেন।  তারা বলছেন, দলের নেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।  তিনি দায়িত্ব দিলে সেই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত রয়েছেন তারা।  সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ ও ধানমন্ডির দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত যাওয়া-আসা করছেন। যোগাযোগ বাড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও।

তবে এবার যুবলীগের বয়সের সীমা ৫৫ থাকায় অনেক প্রভাবশালী ও হেভিওয়েট নেতারা নেতৃত্বের দৌড়ে ছিটকে পড়েছেন। এর বিপরীতে অপেক্ষাকৃত তরুণরা চলে এসেছেন সামনে।  বিশেষ করে ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে এমন নেতারা ফ্রন্ট লাইনে এসে এখন নেতৃত্ব প্রত্যাশায় রয়েছেন।  বয়সের ৫৫ বছরের বিষয়টি এবার সম্মেলনে গঠনতন্ত্রে যোগ করতে প্রস্তাবনা থাকছে।

যুবলীগের শীর্ষ দুই পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলে শামস পরশ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ সেলিমের ছেলে এফবিসিসিআইয়ের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শেখ ফাহিম ও আরেক ছেলে শেখ নাঈম, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম, ক্রিকেটার ও সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা, যুবলীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম শাহীন, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ বদিউল আলম, ফজলুল হক আতিক, ফারুক হাসান তুহিন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর বেপারি, ছাত্রলীগের সাবেক সহ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এন আই আহমেদ সৈকত। নেতৃত্বের প্রত্যাশার কথা জানাতে গিয়ে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি নতুন সময়কে বলেন, যুবলীগে দরকার সঠিক ও যোগ্য নেতৃত্ব। যে নেতৃত্ব কর্মীবান্ধব হবে এবং সততা আর ত্যাগী মনোভব নিয়ে যুবলীগের সাংগঠনিক শক্তি আরো বৃদ্ধি করতে পারবে।

ইকবাল মাহমুদ বাবলু নতুন সময়কে বলেন, যুবলীগের আগামীর নেতৃত্ব হওয়া উচিত সততা ও প্রতিশ্রুতিশীল ব্যক্তিত্বের।  যাদের অবশ্যই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অবদান আছে। যেই নেতৃত্ব দেশে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠন, আত্মনির্ভরশীল যুব সমাজ গঠন ও সর্বোপরি ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

সম্মেলন সার্বিক প্রস্তুতি শেষের পথে জানিয়ে ‘সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি’র আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম নতুন সময়কে বলেন, এবারের কাউন্সিলে ৭৭টি সাংগঠনিক ইউনিট থেকে ৩ হাজার কাউন্সিলর এবং প্রায় ২৫ হাজার ডেলিগেট  আসবে।  একই সঙ্গে ৮টি বিদেশি ইউনিটের কাউন্সিলর ও ডেলিগেটররা উপস্থিত থাকবে। 

১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় যুবলীগ। প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ছয়টি জাতীয় কংগ্রেস হয়েছে। সবশেষ কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে।

১৯৭৪ সালের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তবে ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় কংগ্রেসে আমির হোসেন আমু চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন মোস্তফা মহসীন মন্টু। ১৯৯৩ সালে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন। ১৯৯৬ সালের চতুর্থ জাতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ২০০৩ সালের পঞ্চম জাতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জাহাঙ্গীর কবির নানক, সর্বশেষ ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত হয় সংগঠনটির ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস।