ইলিশ কিনতেই পকেট ফাঁকা, ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী দাম বেঁধে দেয়া সম্ভব কি?

ইলিশ এখন আর সাধারণ মানুষের মাছ নেই। দামের নাগাল পাওয়া বেশ কঠিন। তবে একসময় সহজলভ্য ছিল; আর এখন একটি মাছ কিনলেই শেষ হয় শ্রমিকের দৈনিক আয়ের সিংহভাগ।
এক কেজি ওজনের একেকটা ইলিশ মাছ কিনতে লাগবে ২ হাজার থেকে ২৪শ’ টাকা। ৭শ’ থেকে ৯শ’ গ্রামের ইলিশের কেজিও এখন ১৪শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা পর্যন্ত। অথচ ইলিশের ৬০ শতাংশের উৎস সমুদ্র, বাকি ৪০ শতাংশ আসে নদী ও মোহনা থেকে।
ইলিশ মাছের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির ১১টি কারণ তুলে এনেছে ট্যারিফ কমিশন। বলা হয়েছে, চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্যহীনতা, মজুদ ও সিন্ডিকেট, পরিবহণ ব্যয় ও মাছ ধরার খরচ বৃদ্ধি, পরিবেশগতকারণ, অবৈধ জালের ব্যবহার, দাদন, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ব এবং রফতানির কারণে বাড়ছে দাম।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে ইলিশের দাম বেড়েছে ৫৭ শতাংশ।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেছেন, চাষের মাছ উৎপাদন করার পরও ৪০০ টাকায় একটা ভালো মাছ কেনা যাচ্ছে, অথচ ইলিশ উৎপাদনে কোনও খরচ নেই। তাহলে ইলিশের বর্তমান দাম কোনোভাবেই যৌক্তিক না এবং ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন। বাঙালির যে শখের ইলিশ সেই ইলিশের স্বাদ বাঙালি ভুলে গেছে সিন্ডিকেট ও দাদন চক্রের কারণে। তাদেরকে ভাঙাই হলো আমাদের প্রথম দায়িত্ব।
ইলিশ মাছের বাজার সহণীয় করতে সরকারের কাছে ১৩ দফা সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন। সেখানে জেলেদের সমবায় সমিতি গঠন, বিক্রিতে অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরি, সরকারি বিপণণ কেন্দ্র তৈরি, আড়তদার ও পাইকারদের করের আওতায় নিয়ে আসা, সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
আকার অনুযায়ী ইলিশের মূল্য নির্ধারণেরও সুপারিশ করেছে কমিশন। কিন্তু মাছের দাম নির্ধারণের কোনও সুযোগ কি আছে?
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বললেন, সরকারের যতগুলো মন্ত্রণালয় বা প্রতিষ্ঠান আছে তাতে ইলিশ মাছের মূল্য নির্ধারণ করার জন্য কোনও আইনে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু নেই। যেহেতু আইনি কাঠামোর মধ্যে নেই, তাহলে ইলিশ মাছের দাম কীভাবে নির্ধারণ হবে এটি একটি বিষয়।
জাতীয় মাছ ইলিশ দেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই মাছ আহরণ ও বিক্রিতে আনতে হবে স্বচ্ছতা আনার কথা বলছেন ভোক্তারা।