ঢাকা বুধবার, ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ই আশ্বিন ১৪৩২


দুটি কিডনিই বিকল মাদরাসাছাত্র সজিবের, বাঁচাতে দিনমজুর বাবা-মায়ের আকুতি


২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৪:১১

সংগৃহীত

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগে ভুগছেন মোহাম্মদ সজিব শেখ (২৬)। প্রায় তিন বছর ধরে ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন নিয়মিত। বর্তমানে তার দুটি কিডনিই বিকল হয়ে যাওয়ায় সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করতে হয়।

 

সজিব গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের দিনমজুর সাহেদ মিয়ার ছেলে। সন্তানকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি ও সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তার অসহায় বাবা-মা।

 

মাদরাসা শিক্ষার্থী সজিব শেখ শোলাগাড়ি ঈদগাহ দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করেন। পরবর্তীতে ফাজিল শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও অসুস্থতার কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।

 

বগুড়ার টিএমএস হাসপাতাল ও কলেজের কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চলছে তার চিকিৎসা। প্রতিবার ডায়ালাইসিস করতে তার পরিবারের ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ হয়।

 

অসুস্থ সজিব শেখ বলেন, আমার চিকিৎসার খরচ চালাতে গিয়ে পরিবারের সব শেষ হয়ে গেছে। আগে কোনোমতে বাবা-মা খরচ বহন করলেও এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। আশপাশের দোকান ও বাজারে ঘুরে যে টাকা পাই, তা দিয়েই কোনোমতে চিকিৎসা চলছে। একটি ভ্যান নিয়ে বাবা-ছেলে সারাদিন ঘুরে সামান্য উপার্জন করি, সেটাই চিকিৎসা ও সংসার খরচে ব্যয় হচ্ছে। আমি কিছুদিন হলেও বাঁচতে চাই। বাবা-মা যেন অন্তত কিছুদিন আমাকে জীবিত দেখতে পারেন। এজন্য সকলের কাছে সহযোগিতা প্রার্থনা করছি।

 

সজিবের বাবা দিনমজুর সাহেদ মিয়া জানান, ছেলের চিকিৎসার খরচ যোগাতে সবকিছু বিক্রি করেছি। শেষ পর্যন্ত ভিটেমাটিও বিক্রি করতে হচ্ছে। নিজের একটি কিডনি ছেলেকে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেই চিকিৎসার খরচও বহন করা সম্ভব নয়। এখন প্রতিদিন ছেলেকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। সমাজের সহৃদয় ব্যক্তিদের কাছে আমার ছেলেকে বাঁচানোর আবেদন জানাচ্ছি।

 

অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে মা শিরিনা বেগম বলেন, আমাদের সংসারে দুই ছেলে-মেয়ে। তাদের মধ্যে বড় ছেলে সজিব। লেখাপড়ার পথে থাকতেই হঠাৎ কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। তিন বছরের বেশি সময় ধরে অসুস্থ। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে সজিব অসুস্থ হওয়ার আগে। বর্তমানে খেয়ে না খেয়ে চলছে আমাদের দিন। তারপরও ছেলেকে বাঁচাতে সর্বস্ব দিয়েছি। এখন সবার কাছে হাত পেতেছি, আমার ছেলেকে একটু বাঁচার সুযোগ দিন।

 

এ বিষয়ে কোচাশহর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফেরদৌস আলম ফিজু জানান, এর আগে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা সহায়তা পেয়েছিল সজিব। ওই অর্থে ঢাকার পিজি হাসপাতালেতে কিছুদিন চিকিৎসা হলেও এখন পরিবারের পক্ষে আর খরচ বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। দিনমজুর বাবা-মায়ের পক্ষে কিডনি প্রতিস্থাপন বা নিয়মিত ডায়ালাইসিস চালানোও অসম্ভব।

 

প্রতিবেশি ও গোবিন্দগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক কাজী মো. বাদশা মিয়া বলেন, ছোট থেকেই মেধাবী ও ভদ্র ছিল সজিব। আলিম পাসের পর চাকরির চেষ্টা করছিল, কিন্তু হঠাৎ দুরারোগ্য কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। এ বয়সে সংসারের হাল ধরার কথা থাকলেও এখন মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছে। সমাজের সবারই উচিত তাকে সহযোগিতা করা।

 

স্থানীয় আল-ইকরা ক্যাডেট মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আব্দুল জলিল পাঠান বলেন, স্বপ্নে ভরা বয়সটা যেন এক অন্ধকার গহ্বরে আটকে গেছে সজিব শেখের। দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গেছে তার। প্রতিদিন মৃত্যুভয়ের সঙ্গে লড়াই করে কাটছে দিন। এলাকাবাসী সাধ্যমতো সহযোগিতা করছে, কিন্তু তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। সমাজের বিত্তবান ও হৃদয়বান মানুষ যদি এগিয়ে আসে, তবে সজিব শেখ আবারও সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারে।