ঢাকা বুধবার, ১৫ই মে ২০২৪, ২রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


শিশু তুহিনকে হত্যার দায়ে বাবা-চাচার মৃত্যুদণ্ড


১৬ মার্চ ২০২০ ১৭:৩১

শিশু তুহিন

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কেজাউরা গ্রামে নির্মম ও পাশবিকভাবে পাঁচ বছরের শিশু তুহিন হত্যা মামলায় বাবা আব্দুল বাছির (৪০) ও চাচা নাছির উদ্দিনকে (৩৫) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালত। নিহত তুহিনের কিশোর চাচাতো ভাই শাহরিয়ার (১৭) পেয়েছে আট বছরের আটকাদেশ। তার ১৮ বছর হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হবে। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলাটির পাঁচজন আসামির অন্য দুজন তুহিনের দুই চাচা মাওলানা আবদুল মোছাব্বির (৪৫) ও জমশেদ আলী (৬০) খালাস পেয়েছেন।

সোমবার (১৬ মার্চ) সকালে সুনামগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ ওয়াহিদুজ্জামান শিকদারের আদালত চাঞ্চল্যকর মামলাটির এ রায় ঘোষণা করেন।

গত বছরের ১৪ অক্টোবর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সেদিন সকালে বাড়ির পাশের একটি গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় তুহিনের মরদেহ পাওয়া যায়। এ সময় তুহিনের গলা, দুই কান ও যৌনাঙ্গ কাটা ছিল ও পেটে বিদ্ধ ছিল দু’টি ছুরি। তুহিনের মা মনিরা বেগম বাদী হয়ে ঘটনার পরের দিন অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে দিরাই থানায় মামলা করেন। এ মামলায় তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চাচা নাসির উদ্দিন, আব্দুল মছব্বির ও জমসেদ আলী এবং চাচাতো ভাই শাহরিয়ারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তুহিন হত্যা মামলায় গত ৩০ ডিসেম্বর ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) জমা দেয় পুলিশ। গত ৭ জানুয়ারি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠনের পর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২৬ সাক্ষীর সাক্ষ্য শেষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। পরে মামলার রায়ের দিন ১৬ মার্চ ধার্য করেন আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শামছুন নাহার বেগম বলেন, আমরা এই রায়ে সন্তুষ্ট। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এতে করে সাধারণ মানুষের বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা আরও বাড়বে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু।

ঘটনার পরই নিহত তুহিনের বাবা-চাচাসহ পরিবারের সাত সদস‌্যকে আটক করে দ্রুত হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন করেছিল পুলিশ। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে ও পরে রিমান্ডে আটককৃত তুহিনের বাবা আব্দুল বাছির, চার চাচা মাওলানা আব্দুল মোছাব্বির, জমসেদ মিয়া, নাছির, জাকিরুল, চাচি খাইরুন বেগম এবং চাচাতো বোন তানিয়া স্বীকারোক্তি দিয়ে জানান, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের সন্তান তুহিনকে জবাই করে হত্যা করেন পাষণ্ড বাবা আব্দুল বাছির, তার তিন ভাই ও ভাতিজা।

জানা যায়, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে তুহিনের পরিবারের বিরোধ ছিল। ১৫ বছর আগে মধুপুর গ্রামের মুজিব নামে এক ব‌্যক্তিকে হত‌্যার পর কাজাউড়া গ্রামে ফেলে রাখা হয়। সে সময় এ হত‌্যাকাণ্ড নিয়ে আনোয়ার হোসেন ও তুহিনের পরিবারের সদস‌্যদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

এ ঘটনার পরে কাজাউড়া গ্রামে নিলুফা নামে একজন খুন হয়। নিলুফার আব্দুল বাছিরের আত্মীয় ছিলেন। এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেনসহ তার পরিবারের সদস‌্যদের নামে হত‌্যা মামলা হয়। সেসব দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ও প্রতিবেশী তথা এলাকাবাসীর সহমর্মিতা পেতে নির্মমভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল বলে পুলিশি তদন্তে বের হয়ে আসে।

নতুন সময়/বিআর/এআর