ঢাকা রবিবার, ১৯শে মে ২০২৪, ৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


মিয়ানমারের শান প্রদেশে সেনাবাহিনী তাণ্ডব


২৭ আগস্ট ২০১৯ ২৩:৫০

ফাইল ফটো

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর এবার শান প্রদেশেও তাণ্ডব শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো শান প্রদেশজুড়ে, পালিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।

এর আগে রাখাইনেও এভাবেই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের মতো তাণ্ডব চালিয়ে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করেছিল। সোমবার (২৬ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে এমন তথ্যই জানা যায়।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের শান প্রদেশে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায়ই প্রদেশটির ওইসব বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে কিছু সময়ের মধ্যেই ওইসব সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রেণেও চলে আসে।

কিন্তু এই বারের সংঘর্ষের তীব্র মাত্রায় বেড়ে গেছে যার দরুন নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন প্রদেশটিতে বসবাস করা সাধারণ মানুষ। আর যারাও সেখানে আছে, সেনাবাহিনীর তাণ্ডবের মুখে তাদেরও আতঙ্কে দিন কাটাতে হচ্ছে বলে খবরে বলা হয়।

সম্প্রতি প্রদেশটির বিভিন্ন সামরিক অবস্থান লক্ষ্য করে চালানো বিদ্রোহীদের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ১৫ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকেই সেনাবাহিনী-বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যকার সংঘর্ষ ভিন্ন মাত্রা পায়।

স্থানীয় নাগরিক সমাজের কয়েকটি সংগঠন জানিয়েছে, সংঘর্ষের এ ঘটনায় শান প্রদেশ থেকে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ পালিয়ে গেছে।

এদিকে, আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করা বা-ই (৬৩) নামে এক সাবেক শিক্ষক বার্তাসংস্থা এএফপিকে জানান, তারা এখনো ঘরে ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ‘প্রায় সময়ই আমি বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। আমি এসব থেকে দূরে কোথাও চলে যেতে চাই’ যোগ করেন তিনি।

লিয়াও আয়ে পিন্ট নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি ঘরে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলেও কোনো কাজ হবে না। যাওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ আমার বাড়ি যে গ্রামে, সেখানকার পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ নয়।’

জাও মিন তুন নামে দেশটির সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, আমরা শান প্রদেশে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। বন্ধ হয়নি সংঘর্ষও।

চীন সীমান্তে অবস্থিত শান প্রদেশে কয়েক দশক ধরেই সশস্ত্র সংঘাতের ঘটনা ঘটে আসছে। ২০১৬ সালে অং সান সুচি ক্ষমতায় আসার পর শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। যদিও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ এখনও দেখা যায়নি।

২২ আগস্ট প্রকাশিত মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) , তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এ সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে দেশটির সেনাবাহিনী। ১৫ আগস্টের হামলার পেছনেও ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোই আছে বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে।

গত রবিবার (২৫ আগস্ট) মিয়ানমার সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা শান প্রদেশ থেকে প্রায় ৭৬২ কেজির মতো মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। যেগুলোর বাজারমূল্য প্রায় ১২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার। এর আগে প্রদেশটি থেকে গত ২২ আগস্ট-ও প্রায় ৭ মিলিয়ন ডলারের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছিল।

এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের নাগরিকদের কে এসব ঘটনার জেরে মিয়ানমারের শান প্রদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে।