ঢাকা সোমবার, ২৯শে এপ্রিল ২০২৪, ১৭ই বৈশাখ ১৪৩১


মিথ্যা অভিযোগে ইমপালসের এমডি জাহীর’কে সরানোর অপচেষ্টা !


২২ মে ২০২৩ ১৬:২৫

ছবি সংগৃহীত

পরিচালনা পর্ষদের একাংশের অনৈতিক সিদ্ধান্ত ও দুর্নীতি দখলের ষড়যন্ত্রের কারণে গত তিনমাস যাবত ইমপালস হাসপাতালের কর্মকর্তা-চারীদের বেতনভাতা বন্ধ রেখে ছিলেন। ঈদের আগে বেতন-ভাতার দাবিতে ডাক্তার, নার্স, আয়া, বুয়া, প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলন ও করেছেন । সেই সময় কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দ্রুত তাদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে, কাউকে ছাঁটাই করা হবে না। কিন্তু কোন প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে পরিচালকদের একাংশের ষড়যন্ত্রের কারণে ডুবতে বসেছে রাজধানীর স্বনামধন্য বেসরকারি খাতের এই হাসপাতালটি।বর্তমান রোগীরাও উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

কর্মকর্তা-কর্মচারী, ডাক্তার ও নার্সসহ হাসপাতালের অন্যান্য স্টাফরা বেতনভাতা নিয়মিত করার দাবিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, অর্থমন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি জানিয়েছে। একই সঙ্গে সমস্যা সঙ্কটের প্রতিকার চায় তারা। চিঠিতে হাসপাতালের বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়টি তারা তুলে ধরা হয়। 

এতে অভিযোগ করা হয়েছে-বিএনপি-জামায়াতের কালো থাবায় ডুবতে বসেছে রাজধানীর অন্যতম ইমপালস হাসপাতাল। একদিকে, হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা ও  ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ডা. আলী জাহীর আল-আমীনকে সরিয়ে দখলের ষড়যন্ত্র, অন্যদিকে লিগ্যাল খরচের নামে ক্যাশ থেকে নগদ অর্থ লুটপাটে নাজুক অবস্থায় পড়েছে হাসপাতালটি। গত তিনমাস যাবত ডাক্তার ও নার্সসহ শত শত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। নানা অজুহাতে ছাঁটাই করছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। অন্যদিকে আবার নতুন লোকবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।আর এসব হচ্ছে মহিলা দলের নেত্রী মিসেস খালেদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে। যিনি আবার এই হাসপাতালটির একজন পরিচালকও। এছাড়া অভিযোগ উঠেছে বিএমডিসি’র বিরুদ্ধেও। সংস্থাটির অনৈতিক সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ চিকিৎসক সমাজ। 

বর্তমানে হসপিটালে এমডি ডা.জাহীর আল আমীন নিজ ব্যক্তি উদ্যাগে কর্মকর্তা কর্মচারীদের এক মাসের বেতন ভাতা পরিসোধ করেছেন ।হসপিটালে পূর্বের সুনাম ফিরে আনতে নিরলস কাজ করছেন এমডি ডাঃ জাহির আল আমীন।

ঘটনার সূত্রপাত ২০২০ সালের মার্চ মাসের মিসেস মোমেনা হক মুন নামের একজন রোগীর বাম কানের প্যারোটিড গ্ল্যান্ডের একটি টিউমার অপারেশনকে কেন্দ্র করে। এই অপারেশনটি করতে গিয়ে ডানকানেও রোগটির বিস্তার রয়েছে বলে সন্দেহ করে ডা. আলী জাহীরসহ অপারেশনে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। এ কারণে রোগীর তাৎক্ষণিক সম্মতিতে বামকানের পাশাপাশি ডানকানেও অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর রোগী ভাল ও সুস্থ্য আছেন। দীর্ঘ তিনবছরেও তার মুখ বেঁকে যায়নি। 

সাধারণত এ ধরনের রোগের চিকিৎসায় রোগীর মুখ বেঁকে যাওযার ঝুঁকি থাকে। কিন্তু মিসেস মুনের ক্ষেত্রে সেটি পরিলক্ষিত হয়নি। এক্ষেত্রে তিনি ভাগ্যবতীও। বর্তমান তিনি এ টিউমারটি থেকে সম্পূর্ন সুস্থ্য আছেন। তবে সমস্যা তৈরি হয় অন্য জায়গায়। ডা. আলী জাহীর আল-আমীনকে হাসপাতাল থেকে অপসারণের জন্য যারা দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিলেন সেই খালেদা ইয়াসমিন গং ঘটনাটিকে পুঁজি করে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হউন। 

তারা রোগী মুন ও তার স্বামীকে বুঝাতে সক্ষম হউন  ডা. জাহীর ভুল অপারেশন করেছে এবং তিনি বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন। এভাবেই নানা নাটকীয় ঘটনার মাধ্যমে পুরো বিষয়টি জটিল হয়ে ওঠে। অবশেষে রোগীর অভিযোগ ও হাসপাতালটির পরিচালকদের একাংশের গভীর ষড়যন্ত্রের মুখে ডা. জাহীর আল-আমীনের চিকিৎসা নিবন্ধন এক বছরের জন্য স্থগিত করে দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। এ ঘটনাকে ইস্যু করে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হওয়ার পরও  ডা. জাহীরকে অপসারণে সব ধরনের কূটকৌশল ও পেশী শক্তির প্রয়োগ করে। হঠাৎ করে একটি অবৈধ বোর্ড সভার মাধ্যমে বিএনপির জ্বালাও  পোড়াও মামলার আসামি খালেদা ইয়াসমিন কে ব্যবস্থাপনা পরিচালক করা হয়, যার কোন আইনি বৈধতা নেই বলে জানা গেছে। 

একই সঙ্গে ডা. জাহীরকে অপমান করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়। মহামারি করোনা কালে ডা. জাহীরের নেতৃত্বে কোভিড রোগীদেরও সেবা দিয়ে হাসপাতালটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেই সময় করোনা রোগীদের স্বল্পব্যয়ে চিকিৎসা দিয়েছিল ইপপালস হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখন শুধু মালিক পক্ষেও দ্বন্ধে ডুবতে বসেছে হাসপাতালটি। একদিকে এমডিকে সরিয়ে দখলের পাঁয়তারা, অন্যদিকে অর্থ আত্মসাতের মতো ঘটনায় হাসপাতালটির স্বাভাবিক কাজকর্ম হুমকির মুখে পড়েছে। এ কারণে হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তার,  নার্স, আযা-বুয়াসহ শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউ এখন আর এখানে ভালো নেই। 


বিশেষ করে বেতনভাতা বকেয়া থাকার কারণে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে দিনদিন অসস্তোষ বেড়েছে। সম্প্রতি বেতনভাতা পরিশোধে  কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও পক্ষ থেকে আল্টিমেটামও দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আলী জাহীর আলামীন সাংবাদিকদের বলেন, গত জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখে হঠাৎ একটি অবৈধ বোর্ড সভার মাধ্যমে খালেদা ইয়াসমিন কে ব্যবস্থাপনা পরিচালক করা হয় যার কোন আইনি বৈধতা নেই। খালেদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে আমাকে অপমান করে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয় । এর পর থেকেই বেতনভাতা বন্ধ রয়েছে। তাদের আন্দোলনের মুখে ষড়যন্ত্রকারীরা সাময়িক পিছু হটলেও তাদের কারসাজি থেমে নেই।  তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।বিএমডিসি সেই আগুনে আরও ঘি ঢেলে দিয়ে পরিস্থিতি জটিল করেছে। 
প্রতিষ্ঠাকাল থেকে তিনি অবৈতনিক এমডি হিসেবে হাসপাতালে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

মুনের অপারেশনটি সঠিক ছিল দাবি করে তিনি বলেন, রোগীর স্বার্থেই সেই সময় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। রোগীর পীড়াপীড়িতে এবং মৌখিক সম্মতির ভিত্তিতে এবং অপারেশন কনসেন্ট ফর্মে অতিরিক্ত অপারেশন করার পারমিশন কারণে আমরা বামদিকের পাশাপাশি ডানদিকেও অপারেশন করি এবং সেই দিকেই সমস্যা ধরা পরে বায়োসপি রিপোর্টে। আর এ কারণেই তিনি এখনো সুস্থ্য আছেন। তিনি আরও জানান, বিএমডিসি যেটা করেছে আমরা তার বিরুদ্ধে আদালতে যাব। আমার মনে হয় এখানে হয়তো প্রকৃত সত্যটা বের হয়ে আসবে। আমার প্রতি সুবিচার করা হয়নি। এদেশের নাগরিক হিসেবে সুবিচার পাওয়া এবং চাওয়ার অধিকার আমার রয়েছে। 

অভিযোগ রয়েছে বিএমডিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার ডা. লিয়াকত হোসেনের একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে প্রতিষ্ঠিত ডাক্তাররা সুনামের সঙ্গে দায়িত্বপালন করতে পারছে না। দুর্নীতি কমিশন দুদক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে বলেও জানা গেছে।ডা. জাহীরের নিজহাতে গড়া এ প্রতিষ্ঠানটি তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে হাসপাতালেরই একটি পক্ষ। 

এক্ষেত্রে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে মুন ও তার স্বামীকে। এ প্রসঙ্গে মুনের স্বামী জিয়াউর রহমান ভুঁইয়া জানান, আসলে রোগীর মুখ বেঁকে যায়নি বা সেরকম কোন ক্ষতিও হয়নি। তবে তার মেন্টাল ট্রমা হয়ছে। আমরা যারা কাছের মানুষ তারাই শুধু বিষয়টি বুঝতে পারি। তবে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের জাতীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের ভুল হওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক কিংবা অসম্ভব কিছু নয়। তবে দেখতে হবে ভুল করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কোনো অবহেলা ছিল কিনা।একজনে অকারনে দোষ দেওয়া ও উচিত নয়।

হাসপাতালের অর্থ লোপাট করছে চক্রটি ॥ ডা. আলী জাহীর আল-আমীন কে এক প্রকার সরিয়েই দেয়া হয়েছে। বিএমডিসির সিদ্ধান্তের কারণে তিনি এখন আর চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না। এমনকি প্রশাসনিক কাজও দক্ষতার সঙ্গে করতে পারছে না। এ অবস্থায় হাসপাতালের অর্থ লোপাট করছে বিরোধী চক্রটি। গত তিনমাস ধরেও হাসপাতালটির বেতনভাতা বন্ধ রেখে ছিলো ।

শুধুমাত্র লিগ্যাল খরচ দেখিয়ে গত তিনমাসে ৫২ লাখ টাকা ক্যাশ হিসাব থেকে নিয়ম বর্হিভূতভাবে নেয়া হয়। কর্মচারীদেরও বেতন বন্ধ থাকলেও মিসেস খালেদা ইয়াসমিনের ওষুধ বিলবাবদ বাকি আছে ৪৬ হাজার টাকা। গত ৯ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত ফার্মেসির স্টক কমেছে ১ কোটি ৩ লাখ টাকা থেকে ৮৩ লাখ টাকায়। অর্থাৎ এখানে ২০ লাখ টাকার স্টক কমে গেছে। একই সময়ে ফার্মেসি থেকে বিক্রি হয়েছে ৯০ লাখ টাকার মতো আর বিপরীতে ওষুধ কেনা হয়েছে ৪৭ লাখ টাকার। 

অর্থাৎ এখানে ৪৩ লাখ টাকার ওষুধ কমে গেছে। এতে করে বর্তমানে রোগীরা হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে ওষুধ পাচ্ছে না। অর্থাৎ ফার্মেসির লোকসান হয়েছে ৬৩ লাখ টাকা। এছাড়া বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস বিল বকেয়া রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত তিনমাসেরও বেশি সময় ধরে বেতনভাতা হচ্ছে না। চাকরি ছাঁটাইয়েরও হুমকি রয়েছে। এ অবস্থায় চাকরি করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

কী রকম অন্যায়ের কী রকম শাস্তি? এর কী সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আপনাদের আছে ? থাকলে দেখান
কেহ আপনাদের দৃষ্টিতে কোন অন্যায় করলে তাঁকে কী আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ আছে?থাকলে তা কী উকিল মারফৎ না নিজে নিজে এই আত্মপক্ষ সামর্থন টাকে আপনারা কী ভাবে খন্ডন করেন? এই খণ্ডনটাকি রেকর্ডেড থাকে? সব গুলো প্রশ্নের জবাবে বিএমডিসির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার ডা. লিয়াকত হোসেনের বলেন,আমি প্রচুর ব্যস্ত আছি আপনাদের এসকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া জন্য আমি প্রস্তুত নই! আপনাদের এসকল প্রশ্নের জন্য আমাকে পিপেয়ার্ড হতে হবে তা নাহলে কোন কথা বলতে কোন কথা বলে ফেলি তার তো কোনো ঠিক নাই বলে জানান তিনি।