ঢাকা বুধবার, ১২ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১লা ফাল্গুন ১৪৩১


কূটনীতিক মহসিনের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন


৫ জানুয়ারী ২০২৫ ১৬:৫৩

সংগৃহিত

নানা অভিযোগে অভিযুক্ত রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মোহাম্মদ মহসিন মিয়াকে দ্রুত অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে রোমানিয়া ভিসা প্রত্যাশীরা। মহসিন মিয়াকে অতিদ্রুত অপসারণের পাশাপাশি শাস্তির আওতায় আনাতে ৭দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। দাবি না মানলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ঘেরাও করার হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে রোমানিয়ার ভিসাপ্রত্যাশি ছাত্র জনতার ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি মহসিন মিয়াকে অতিদ্রুত অপসারণ করে শাস্তির আওতায় আনার দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ফ্যাসিস্টের দোসর, দূর্নীতিবাজ, প্রবাসী বান্ধব হয়রানী মুক্ত দূতাবাস চাই, নারীলিপসু এবং অদক্ষ কূতনীতিক মহসিন মিয়া চাইসহ বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্লাকার্ড হাতে মানববন্ধনে অংশ নেন রোমানিয়া ভিসা প্রত্যাশীরা।

ভিসাপ্রত্যাশীরা বলেন, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে রোমানিয়ায় প্রবেশকারী বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষস্থানে ছিল। কিন্তু রোমানিয়ায় শ্রম উইং-এর প্রতিষ্ঠাতা দাবিকারী মহসিন মিয়ার যোগদানের পর সব পরিবর্তিত হতে থাকে। বাংলাদেশ এখন প্রথম ৩ দেশের মধ্যেও নেই। কারণ, মহসিন মিয়া সহকর্মীদের পাশাপাশি রোমানিয়ার ইমিগ্রেশন, শ্রম মন্ত্রণালয় ও রোমানিয়ার কোম্পানিগুলোর সাথে অত্যন্ত বাজে ব্যবহার করেন। ডিমান্ড লেটার সত্যায়নের ক্ষেত্রেও মহসিন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা তৈরি করেছেন। এতে, কোন রোমানিয়ান কোম্পানি ভয়ে আর তার কাছে যান না। বরং তারা এখন নেপাল, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন ও ভারতমুখী।

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে রোমানিয়া প্রবাসী ফয়জুল বলেন, আমি ছুটিতে বাংলাদেশে এসেছি। মহসিন মিয়া এম্বাসিতে কোন কাজ করেন না, শুধু গল্প দেন আমি এই করছি, সেই করছি। কিন্তু তিনি প্রবাসীদের সাথে প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করেন। কোন অসহায় শ্রমিক লিগ্যাল হেল্প চাইলে তার কাছে টাকা চান।

মনসুর নামে রোমানিয়াগামী এক তরুণ বলেন, মহসিন সাহেবের কার্যক্রমের যে ফিরিস্তি দেখছি তাতে রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে যেন যেতে না হয়, সেই চেষ্টা করবো। উনি রোমানিয়ার বিভিন্ন কোম্পানিকে থ্রেট দেওয়ায় অনেক বাংলাদেশির চাকরি চলে গেছে। এত এত অভিযোগ থাকার পরেও মহসিন মিয়ার বিরুদ্ধে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কেন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নিয়ে পতিত সরকারের ঘনিষ্ঠজনকে সাদরে লালন-পালন করছে, সে বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা।

বক্তারা জানান , মহসিন মিয়ার আস্ফালনে টেকা দায় হয়ে গিয়েছে। বার বার রিপোর্টের পরেও যদি কোন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে ৭ দিন পর দুনির্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে, সেখানে প্রবাসী কল্যাণ সচিবও দায় এড়াতে পারবেন না।

মানববন্ধন শেষে মহসিন মিয়ার অপসারণ দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। স্মারক লিপিতে রোমানিয়ায় ভিসা প্রত্যাশীরা জানান, সম্প্রতি দৈনিক কালবেলায় রোমানিয়ার রাজধানী বুখারেস্টে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম উইং প্রথম সচিব মোহাম্মদ মহসিন মিয়ার নামে একাধিক অভিযোগ সম্বলিত একটি অনুসন্ধানি রিপোর্ট প্রকাশ পেলেও তার উপযুক্ত শাস্তি প্রদানে কর্তৃপক্ষের কালক্ষেপণ করছে। আমরা যারা রোমানিয়া- বুলগেরিয়া- মলদোভা- নর্থ মেসিডোনিয়াগামী/ ভিসা-প্রত্যাশি ছাত্র- জনতা, তারা মহসিন মিয়া সম্পর্কে নিম্নোক্ত অভিযোগসমূহ সত্য বলে জানতে পেরেছি।

স্মারক লিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, মহসিন মিয়া রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, মলদোভা ও নর্থ মেসিডোনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফোন করে তার ক্যান্ডিডেটদের ভিসা প্রদানের জন্য তদবির করেন, যা কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং উল্লেখিত দেশসমূহ এতে বিরক্ত। বিষয়টি দিল্লিতে অবস্থিত উক্ত দেশসমূহের দুতাবাসগুলো অবলীলায় এ বিষয়ে আমাদের প্রার্থীদের প্রশ্ন করছে ও ভিসা রিজেক্ট করছে। ফলে লাখ লাখ টাকা-পয়সা খরচ করেও ভিসা পাচ্ছে না আমাদের জনগণ।

মহসিন মিয়া রোমানিয়ান সহকর্মীদের সাথে যৌন নিপীড়নমূলক আচরণ কূটনীতিক হবার কারণে তারা মহসিন মিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি অ্যাকশন না নিতে পারলেও, প্রভাব পড়ছে পুরো দেশের উপর। মহসিন মিয়া রোমানিয়ার ইমিগ্রেশন, শ্রম মন্ত্রণালয় ও রোমানিয়ার কোম্পানিগুলোর সাথে অত্যন্ত বাজে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করেছেন প্রবাসী ভাইয়েরা। ফলে বাংলাদেশিদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট ইস্যু করা কমে গিয়েছে এবং অনেক বাংলাদেশিদের চাকরি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি রোমানিয়ান নাগরিককে মহসিন ‘নিকৃষ্ট খ্রিস্টান শূকর’ বলে গালি দিয়েছেন। উক্ত রোমানিয়ান নাগরিক মহসিনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে রোমানিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন, আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন, মামলা করার প্রস্তুতি ও বুখারেস্ট প্রেস ক্লাবে প্রেস কনফারেন্স ডাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার মহসিনের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ না নিলে দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে নেমে যেতে পারে। এছাড়া মহসিনের প্রেস্ক্রিপশনে বিএমইটি কার্ড ইস্যুকরণ করতে বিএমইটি অনেক “লাল ফিতার দৌরাত্ম্য” দেখাচ্ছে। ফলে রোমানিয়া- বুলগেরিয়া গামী অনেক ব্যক্তির ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে রেখেছেন।

২০২৩ সালে শ্রম উইং খোলার পর মহসিন নিজেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (হাসিনা) কার্যালয়ের সাবেক “সহকারী প্রেস সচিব”, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া’র “ভাতিজা” পরিচয় দিতেন। পতিত স্বৈরাচারের আমলে তিনি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ডঃ ইউনুস স্যার ও মাননীয় প্রবাসী উপদেষ্টা ডঃ আসিফ নজরুল স্যার সম্পর্কে জনসম্মুক্ষে বিষেদাগার করতেন। পতিত ফ্যাসিস্টের এই দোসরকে দ্রুত সরিয়ে নেয়া এখন সময়ের দাবি।

এরকম দুর্নীতিবাজ, নারীলিপ্সু, লাশ ব্যবসায়ী, ফ্যাসিস্টের দোসর ও অদক্ষ কূটনীতিক রোমানিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মোহাম্মদ মহসিন মিয়া'র বিরুদ্ধে আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় শাস্তি ও অপসারণ নিশ্চিত না করলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে যাবে রোমানিয়া ভিসা- প্রত্যাশী আপামর ছাত্র- জনতা।

এর আগে, মহসিন মিয়ার অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রোমানিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটিও একটি বিবৃতি দেয়। গত ৩ জানুয়ারি দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি দৈনিক কালবেলায় দূতাবাসের প্রথম সচিবের (শ্রম) বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তীতে উক্ত কূটনৈতিক কর্মকর্তা একটি প্রতিবাদলিপি লিখেছেন যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও অপ্রাসঙ্গিক। প্রতিবাদলিপিতে তিনি তার বক্তব্যে রোমানিয়ায় বসবাসকারী স্বনামধন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের নাম উলেখ করে কোন ধরণের প্রমাণ ছাড়াই 'মানবপাচারকারী ও মাফিয়া চক্র' বলে অভিহিত করেছেন ও বিভিন্ন কটুক্তিমূলক মন্তব্য করেছেন। পরবর্তীতে তার একটি সংশোধিত লেখায় তিনি পুরো বাংলাদেশ কমিনিউটির বিরুদ্ধে বিষাদাগার করেছেন। তাই আমরা প্রথম সচিব (শ্রম)-এর মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রতিবেদনকে তীব্র ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা মনে করি, দৈনিক কালবেলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ সত্য। মহসিন মিয়া কোন কারণ বা প্রমাণ দর্শাতে না পারলে অথবা তার বক্তব্য প্রত্যাহার না করলে বাংলাদেশ কমিউনিটির সকল সদস্য তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ও রোমানিয়ায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।